ঢাকা অফিস : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সকলের বেতন-ভাতা ১২৩ ভাগ বৃদ্ধি করেছি। এরপরও দেখি কেউ কেউ অসন্তোষ। কেন অসন্তোষ এটা আমার কাছে বোধগম্য না।’ তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের মর্যাদা সবার উপরে। এত বেতন-ভাতা বাড়নোর পরও যদি আপনাদের কোনো অসুবিধা হয়, সেটা তো আমরা দেখব, আমরা দেখছি।
নতুন বেতন কাঠামোতে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শ্রেণিকক্ষে ফেরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষকদের জন্য আরও কিছু করার থাকলে, সরকার সেটা অবশ্যই বিবেচনা করবে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোন বন্ধ করবেন না। ক্লাস না নিয়ে ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ করলে তারা তা মেনে নেবে না। আপনারা শিক্ষক, আপনারা সম্মান নিয়ে থাকুন। সমস্যা হলে আমরা দেখব। শিক্ষা বন্ধ করবেন না; বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সচল করতে হবে।
বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও তার বড় ছেলে তারেক ও তারেক রহমানের যোগসূত্র ছিল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের আলোচনা সভায প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপিনেত্রী প্রায়ই বিডিআর বিদ্রোহ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করলাম। দুই মাসের মধ্যে শুধু পিলখানায় নয়; সমগ্র বাংলাদেশে সেই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। আমরা মাত্র দুই দিনে কন্ট্রোল করি।
নতুন সেই সরকার কেন একটা বাহিনীতে বিদ্রোহ ঘটাবে- এমন প্রশ্ন রেখে খালেদা জিয়াকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি কেন ক্যান্টনমেন্ট থেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে গেলেন? সকাল সাড়ে ৭-৮টর মধ্যে কেন বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন, সেই জবাব জনগণকে দিতে হবে। আমার ধারণা হয়, ওই ঘটনার সঙ্গে তার যোগসূত্র ছিল।
বিডিআর বিদ্রোহের আগের রাতে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফোন করেন দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, তার ছেলে লন্ডন সময় রাত ১টায় ৪৫ বার ফোন করে বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে। কেন তার মাকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে? জনগণের কাছে এর জবাব তাদের দিতে হবে।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির ওই বিদ্রোহে নিহত ৫৭ জন সেনা অফিসারের মধ্যে ৩৩ জনই আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান- একথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাদেরকে কেন সেখানে পোস্টিং দেয়া হয়েছিল- সেটাও একটা প্রশ্ন। হাইকোর্টে এই হত্যা মামলার বিচার চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ষড়যন্ত্রের মূলোৎপাটন একদিন করব।
বেতন কাঠামোর জন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলমান আন্দোলন যৌক্তিক নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন আন্দোলন করা তাদের মানায় না। ক্লাস বন্ধ করে শিক্ষকদের এ আন্দোলনে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত বড় বেতন বাড়ানোর পরও কেন এত অসন্তোষ! সেটাই আমাদের শিক্ষার বিষয়। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আর যদি এত মর্যাদাই লাগে, চাকরি ছেড়ে দিয়ে পিএসসিতে (পাবলিক সার্ভিস কমিশন) পরীক্ষা দিয়ে সচিব হয়ে যান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে মেট্রোরেলের রুটের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল নির্মাণের পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। ইচ্ছা করেই একটি স্টেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখেছি যাতে উত্তরা, মিরপুরে থাকা বিভিন্ন শিক্ষক শিক্ষার্থী ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ মেট্রোরেল আধুনিক প্রযুক্তিতে করা হয়। এটা চলে আকাশ পথে। যেখানে যেখানে এর সাউন্ড প্রুফ দরকার তা করা হবে। কিন্তু দেখছি, এর বিরুদ্ধে হঠাৎ কিছু ছাত্র-শিক্ষক আন্দোলনে নেমে গেছে। গ্রাম এলাকায় একটা কথা আছে, যার জন্য করি চুরি, সেই বলে চোর। হঠাৎ এ আন্দোলন কিসের জন্য? আসলে এ দেশে এক শ্রেণির মানুষ আছে, যাই করতে যাবেন তারা সবকিছুতে ‘কিন্তু’ খুঁজে আন্দোলনে নামে।
বাংলাদেশে যখনই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করা হয়েছে, তখনই একটি মহল বিভিন্ন কায়দায় ওই বিচার বানচালের সব ধরনের চেষ্টায় ব্যস্ত- এ বলে প্রশ্ন রাখেন শেখ হাসিনা। বলেন, বিশ্বের কোনো দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়নি, এমন দেশ খোঁজে পাওয়া যাবে না। তবে আমাদের দেশের কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা আছেন যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিপক্ষে কথা বলেন।
বিগত জাতীয় নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে। তিনি বলেন, আজ খালেদা জিয়া ভোট নিয়ে কথা বলেন। তার স্বামী তো হ্যাঁ-না ভোট করেছিল, সেখানে ১১০ শতাংশ ভোট পড়েছিল, আর না ভোট তো ছিলই না। ওনার ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে তো ভোটারই ছিল না। পরে জনগণের প্রতিরোধের মুখে তিনি ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান যে সুরে কথা বলে তিনিও সে সুরে কথা বলেন। ৩০ লাখ শহীদকে কটাক্ষ করে তিনি বললেন, এত মানুষ তো মারা যায়নি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দিল মে হে পেয়ারে পাকিস্তান’, তিনি পাকিস্তানকে ভুলতে পারেন না। তাই পাকিস্তানি দোসররা যে সুরে কথা বলেন, তিনিও সেই সুরে কথা বলেন।’
আওয়ামী লীগের আয়োজনে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আলোচনা সভায় বক্তব্য রখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশের জন্য শেখ হাসিনার আরো কয়েক টার্ম প্রধানমন্ত্রী থাকা প্রয়োজন। এ প্রয়োজন শেখ হাসিনার জন্য নয়, বাংলাদেশের আপামর জনগণের জন্য। পররাষ্ট্রনীতি, অর্থনীতি এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়নি। এই অগ্রযাত্রা রাখতে হলে শেখ হাসিনাকে প্রয়োজন রয়েছে। সেজন্য আওয়ামী লীগ ও আপামর জনগণের কাছে আহ্বান জননেত্রীর অগ্রযাত্রায় শামিল হোন।
বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতের জন্য আওয়ামী লীগের আলোচনা সভা একদিন পেছানোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পাকিস্তানিরা বলত, বঙ্গবন্ধু হিন্দুর বাচ্চা। আওয়ামী লীগ যারা করে সব হিন্দু। ক্রমাগত আওয়ামী লীগের উপর এই কালিমা লেপনের জন্য দীর্ঘদিন চেষ্টা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে কেউ দমাতে পারেনি। শেখ হাসিনাকেও দমাতে পারবে না। সারাবিশ্ব দেখছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, সর্বোচ্চ কাতারে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, এম এ আজিজ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন প্রমুখ।
মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানে বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দিবসটি উপলক্ষে আগের দিন রোববার ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ নানা কর্মসূচি পালিত হয়। তবে বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত থাকায় সমাবেশ হয় গতকাল সোমবার। দুপুর আড়াইটায় বড় চার ধর্মীয়গ্রন্থ পাঠের মধ্য দিয়ে সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে দুপুর ১২টার পর থেকেই নেতাকর্মীরা দলে দলে জনসভাস্থলে আসতে শুরু করেন। বিকেল ৩টা ২০ মিনিটের দিকে সভার সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঞ্চে উপস্থিত হন। সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বক্তৃতা শুরু করেন।