আগামী ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা করা হয়েছে। অন্যদিকে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে সারাদেশে ২০ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল, অবরোধ, ভাংচুর, পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ, গাড়ীতে আগুন, সহিংসাতার ঘটনা ঘটছে। অবরোধের বলি চট্টগ্রামের বার্ণ ইউনিটে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছেন নারী পুরুষ এবং শিশু। অবরোধ কারীদের পেট্টোল বোমার আগুনে দগ্ধ হয়েছেন। ঘটনার পর অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে মারা যান। ১৪ দলে চলছে নির্বাচনী প্রস্তুতি অন্যদিকে ২০ দলের নির্বাচন বয়কট, গভীর সংকটে ফেলে দিয়েছে দেশের ১৬ কোটি সাধারন জনগণকে। ২০ দলের অবরোধে রেললাইন উপড়ে ফেলা, গাড়ীতে আগুন, ককটেল নিক্ষেপ ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে। রেলে ভয়াবহ এ পরিস্থিতির মধ্যে হামলা হয়েছে লঞ্চেও ফিসপ্লেট খুলে ফেলায় ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি লাইনচ্যুত হয়েছে। রেলমন্ত্রীর মুজিবুল হক জানিয়েছেন ৩ দিনের অবরোধে রেলের সম্পদ ক্ষতি হয়েছে ৬শত কোটি টাকা। আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি টাকা। গত ৫ জানুয়ারী থেকে চলমান ৭০ দিনের অবরোধ-হরতালের আড়ালে বিএনপি-জামাতের সহিংসতায় ১ লক্ষ ৮৯ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যা চলতি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মোট জাতীয় বাজেটের ৫ ভাগের ৪ ভাগের মত। রোগী বহন কারী এ্যাম্বুলেন্সে হামলা, ভাংচুর এবং পথে অসুস্থ রোগীর মৃত্যু অসুস্থ রাজনীতির চর্চা ইংগিত বহন করে। রাজনীতিক সহিংসতার কারণে বিপন্ন হচ্ছে মানবতা। হরতাল-অবরোধে কিছু দুর্বৃত্ত আর ভাড়াটে বোমাবাজ রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে অরাজকতায় মেতে ওঠে। হাজারো নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যেও ভাড়াটে বোমাবাজ-দুর্বৃত্তরা ঝড়োগতিতে রাস্তায় নেমে এলোপাতাড়ি গাড়ি ভাংচুর চালায়, আগুনে পুড়িয়ে দেয়। রাজপথ, অলিগলি, ব্যস্ততম মার্কেট বা অন্য কোনো জনাকীর্ণ স্থানে ভাড়াটেরা জ্বালাও পোড়াও, বোমা হামলা চালিয়ে নিরীহ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ তো বটেই, এদের দাপটে পুলিশ-গোয়েন্দারাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। হরতাল, অবরোধ কর্মসূচী চলাকালীন সময়ে পরিচিত নেতা-কর্মীরা মহল্লা ছেড়ে এমনকি অনেকে রাজধানীর এলাকায় দলীয় তৎপরতায় সরব থাকার বিষয়টি প্রমাণ করতেই তারা ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের মাঠে নামানোর কৌশল নিয়ে থাকেন। হরতাল-অবরোধ বৃদ্ধি পাওয়ায় বোমাবাজদের কদরও বেশ বেড়ে গেছে, বেড়েছে ভাড়ার রেট। এরা অগ্রিম পাওনা বুঝে নেয় হরতালের আগের দিন। আর হরতাল শুরুর আগেই তারা বেশ কিছু গাড়ি জ্বালিয়ে পুড়িয়ে, ভাংচুর করে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের নিয়ন্ত্রিত এ ভাড়াটে দুর্বৃত্তদের দাপট সাম্প্রতিক সময়ে অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। গত তিন মাসে আট দফা হরতাল-অবরোধে ওই চক্রের সদস্যরা অর্ধশতাধিক গাড়ি আগুনে জ্বালিয়ে দিয়েছে। আগামী দিন গুলোতে সহিংসতার মাত্রা কি হতে পারে তা নিয়ে বলা খুব কঠিন। জামায়াত শিবিরের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে ২০ দলীয় জোট। কিন্তু প্রশাসন আছে হার্ডলাইনে। প্রতিদিন হাসপাতালে মৃতের সংখ্যা বাড়ছেই। সেই সাথে দেখা যাচ্ছে হাসপাতালে বীভৎসতার করুন চিত্র। রেললাইন উপড়ে ফেলে মানুষ হত্যা কোন রাজনীতিক দলের কর্মসূচী হতে পারে না। এই রেল কিংবা রেললাইন কোন দলের না। এটি দেশের সম্পদ আমাদের সম্পদ। এটি রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। সহিংসতার কারণে যারা হাসপাতালে যাওয়ার পথে মারা যাচ্ছেন কিংবা হরতাল অবরোধে যারা বলি হচ্ছেন তাদের পরিবার কখনো ক্ষমা করবেনা। ভোট তাদের হাতে রয়েছে তাই আমাদের নেতাদের মনে রাখতে হবে কোনটা ভালো, কোনটা খারাপ। রাজনীতিক কর্মসূচীর আড়ালে কেউ ধবংস চালালে তার দায়ভার ১৪ দল কিংবা ২০ দলকে নিতে হবে। ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি একদল আসবে এখানে অন্য কেউ সহিংসতা চালালে ভোট নিয়ে দুই দলকে চিন্তা করতে হবে। দিন যত যাচ্ছে পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে। জনমনে আতঙ্ক কাটেনি। দেশের মানুষ শান্তি চায় শুধু শান্তি। অশান্তির আগুনে কেউ জ্বলতে রাজি না। রাজনৈতিক সহিংসতার কারণে মানবতা বিপন্ন হলে এ জাতি অপরাধীদের কখনো ক্ষমা করবে না।
এ বিভাগের আরও খবর