ঐতিহাসিক শুক্লাম্বর দীঘিতে গণমানুষের প্রাণের মেলা

0

সৈয়দ শিবলী ছাদেক কফিল, চন্দনাইশ : আচার অনুষ্ঠান ও বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ১৫ জানুয়ারি শুক্রবার সম্পন্ন হলো চন্দনাইশের শ্রী শ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য দীঘি মেলা। প্রতিবছর পৌষ সংক্রান্তিতে দীঘি সংলগ্ন বিশাল এলাকা জুড়ে বসে প্রাচীন এ গ্রামীণ লোকজ মেলা। সনাতন বা হিন্দু স¤প্রদায়ের হলেও মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, শিখ, বাহাইসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের উপস্থিতি ঘটে। দূরের লোকজন আসা মাত্রই কাজকর্ম সেরে এ মেলাস্থল দ্রুত ত্যাগ করলেও বিশাল এলাকায় লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। বরাবরের মত এবারও লাখো মানুষের ভীড়ে সাঙ্গ হলো শ্রী শ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য দীঘির বহুবছরের প্রাচীন এ মেলা। দীঘির পাড় সংলগ্ন ১২ (বার) একর জমি ও তিন কিলোমিটার সড়কজুড়ে বিস্তৃত হয় এ মেলা। মূল মেলা একদিন ব্যাপী হলেও চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের বাইনজুরি, শেবন্দী, সুচিয়া ইত্যাদি গ্রামে আগের দিন হতে পূণ্যার্থী জড়ো হয়।সিটিনিউজবিডি২

শীতের তীব্রতা উপেক্ষা করে এ মেলার প্রতি সকল শ্রেণিপেশার মানুষের উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল লক্ষ্যণীয়। বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এ মেলার কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। সারাদিন ব্যাপী পূজা, পূণ্যস্নান, মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলন, ধূপ প্রজ্বলন, দুগ্ধ নিরঞ্জন, কবুতর উৎসর্গ, পাঁঠা বলিসহ ধর্মীয় কার্যক্রম এবং নাগরদোলাসহ শিশুদের আনন্দ উপভোগের বিভিন্ন রাইডস ও লোকজ মেলায় হরেক রকম জিনিসপত্রের বিকিকিনি চলে। মেলায় মিলেছে প্লাস্টিক, ফাইবার, এলুমিনিয়াম, পিতল, কাঠ ও মাটির তৈরি জিনিসপত্র, হস্ত ও কুঠিরশিল্প সামগ্রী, বইপত্র, স্টেশনারি সামগ্রী, কাঠের ফার্নিসার, ক্রোকারিজ, উলের তৈরি ঝাড়– প্রভৃতি। এসব সামগ্রীর বিক্রিও হয়েছে প্রচুর।

শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্য ভারতের নদীয়া থেকে চন্দনাইশের বরমার বাইনজুরীতে আগমন করেছিলেন। তিনি ১২ একর জায়গায় শিবমন্দির প্রতিষ্ঠা করে সাধনা শুরু করেন। বছরের পর বছর ধর্মীয় সাধনার মাধ্যমে এক সময় তিনি সিদ্ধি লাভ করেন। প্রতি বছরের মত এবারও ভারত, নেপাল, ভূটানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন এ পীঠস্থানে এসেছে। কথিত আছে, মেলায় যারা যে মনোবাসনা নিয়ে আসেন তা পূর্ণ হয়। এক সময় বিবাহ অনুষ্ঠানের যাবতীয় জিনিসের তালিকা মহাসাধক শ্রী শ্রী শুক্লাম্বর ভট্টাচার্য্যরে হাতে দিলে বিবাহের দিন দীঘিতে তালিকার সকল মালামাল ভেসে উঠত বলে প্রবাদ রয়েছে।

মেলা ছাড়াও পূণ্যের আশায় সারা বছর মানত নিয়ে দীঘিতে দুধ, ছাগল ও কবুতর, ফল ইত্যাদি উৎসর্গ করেন অনেকে। তাঁদের মতে দীঘির পানিতে উৎসর্গকৃত দুধ পানির সাথে না মিশে তলিয়ে যায়। এ ধরনের অনেক উপাখ্যান আছে দীঘিকে ঘিরে। অনেকের বিশ্বাস, ওই দীঘিতে সোনার অলংকার উৎসর্গ করলে ইচ্ছা পূরণ হয়। আর তাই আশা পূরণের লক্ষ্যে ভক্ত মানুষগুলো একই মোহনায় মিলিত হন। আর এভাবেই শুক্লাম্বর দীঘি হয়ে উঠে পৌষ সংক্রান্তির মেলায়। শুক্লাম্বর দীঘির পাড়ে কয়েক শতবর্ষী একটি বটবৃক্ষ রয়েছে। মনস্কামনা পূরণের লক্ষে দর্শনার্থী নারী-পুরুষ মানত করে ওই বটের ঢালে সুতার গিট বেঁধে দেয়। সিটিনিউজবিডি৩

মেলা চলাকালীন সার্বিক সহযোগিতা করেছেন স্থানীয় সাংসদ আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী, চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ চৌধুরী, উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সনজীদা শরমিন, থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও সিজিবি সদস্য হাবিবুর রহমান চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ্ব জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, মেলা কমিটির সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম, পৌর আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক কায়ছার উদ্দিন চৌধুরী, দীঘি কমিটির সভাপতি বিজন ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা পরিমল দেব, মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মেম্বার অমর কান্তি ভট্টাচার্য্য, আশীষ দেব, হারাধন দেব, ডা. কাজল বৈদ্য, ইউপি মেম্বার অমর কান্তি ভট্টাচার্য্য, এস কফিল, সুবল তালুকদার, পরিমল মহাজন, প্রদীপ দেব, মধুসুদন দত্ত প্রমুখ। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ-চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা শাখাসহ বিভিন্ন সংস্থা থেকে এ পবিত্র ও ঐতিহাসিক স্থানকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জাতীয় তীর্থস্থান ঘোষণার দাবী উঠে।
……………..জুয়েল/সিটিনিউজবিডি

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.