ঢাকা অফিস : পদ্মা সেতুর মূল পাইলিংয়ের কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের ৮টি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য একের পর এক ব্যয় বাড়ছে সেতু নির্মাণে।
এর প্রথম চ্যালেঞ্জ, এ নদীতে সেতু নির্মাণ খুবই কঠিন কর্মযজ্ঞ। প্রতি বছর এ নদী কিছুটা সরে যাচ্ছে। এছাড়া নদীর দুই তীর খুবই ভাঙনপ্রবণ। ফলে এ প্রকল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ নদী শাসন। ২য় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বিশাল এবং প্রমত্তা নদীগুলোর একটি। এই নদীর যে জায়গায় সেতুটি নির্মিত হবে, সেখানে নদী প্রায় ছয় কিলোমিটার প্রশস্ত। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এটি হবে দক্ষিণ এশিয়ার কোনো নদীর ওপর নির্মিত দীর্ঘতম সেতু। ৩য় চ্যালেঞ্জটি হল পদ্মা সেতু শুধু সড়ক সেতু নয়, একই সঙ্গে এই সেতুর ওপর দিয়ে যাবে ট্রেন। এছাড়া যাবে গ্যাস পাইপ লাইন এবং বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনও। এটাও চ্যালেঞ্জের বিষয়।
৪ নম্বর চ্যালেঞ্জ হলো- বর্ষাকালে পদ্মা নদীতে স্রোতের বেগ এত বেশি থাকে সেতুর নকশা করার সময় প্রকৌশলীদের কাছে এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। ৫নম্বর সবচেয়ে বেশি পলি বহন করে এই নদী। সেতু নকশা করার ক্ষেত্রে এই নদী বাহিত পলির বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হচ্ছে প্রকৌশলীদের। ৬নম্বর পদ্মা সেতুর ভিত্তির জন্য পাইলিংয়ের কাজ করতে হবে নদীর অনেক গভীরে। বিশ্বের কোনো নদীর এতটা গভীরে গিয়ে সেতুর জন্য পাইলিংয়ের নজির খুব কম আছে। প্রকৌশলীদের জন্য এটাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। ৭নম্বর পদ্মা সেতু নির্মিত হচ্ছে এমন এক অঞ্চলে যেখানে ভূমিকম্পের ঝুঁকিও আছে
৮নম্বর এটা সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প। খরচ হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। এত বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের নজির বাংলাদেশে আর নেই। এটা বাস্তবায়নও একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
তাছাড়া সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজেই এ সেতু নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি পদ্মা নদীকে আমাজনের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, আমাজনের গতিপ্রকৃতি বোঝা যেমন কঠিন, পদ্মা সেতুর গতিপ্রকৃতিও বোঝা তেমনই কঠিন। এটা সঠিকভাবে না হলে সেতুটি ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তাই পদ্মা সেতু প্রকল্পে নদী শাসনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলেছেন, পদ্মা নদীর প্রধান ঝুঁকির বিষয় দুটি। একটি হলো নদীর তলদেশ, অপরটি নদীর পাড়। প্রতি বছর স্রোতে পদ্মার তলদেশে দশমিক ৪৭ মিটার করে মাটি সরে যাচ্ছে। এজন্য পদ্মা সেতুর পাইলিং ১৩০ মিটার পর্যন্ত গভীর হবে, পানির নিচে যা প্রায় ৪০ তলা সমান। বিশ্বে ২য় গভীর পাইলিং করা হচ্ছে এ সেতুতে। পদ্মা নদী প্রতি বছর এক-দুই মিটার করে সরে যাচ্ছে। এজন্য নদীকে সঠিক জায়গায় ধরে রাখা জরুরি।
এসব চ্যালেঞ্জের কারণে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। সবশেষ আরো ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। ফলে সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়িয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এর আগে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। সেতুর আওতায় নানা অঙ্গ যোগ হওয়া ও নির্মাণাধীন সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধির কারণেই মূলত দ্বিতীয় সংশোধনীতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা হয়েছে বলে জানানো হয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে।