চট্টগ্রামের এক অলি হযরত শাহজাহান শাহ (রা:)

0

ধর্মকথা, সিটিনিউজবিডি : মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহর দরবারে অসীম শুকরিয়া, প্রিয় নবী রাসুলে করিম সা: এর দরবারে লাখো কোটি সালাম ও দরুদ, সমগ্র বিশ্বের উত্তর হতে দক্ষিণ ও পুর্ব হতে পশ্চিমে বিরাজমান সকল অলিয়ে কেরামদের চরনে লাখো সালাম এবং অলিকুল শিরোমনি মুশকিল কোশা হাযত রাওয়া শেখ সৈয়দ হযরত শাহজাহান শাহ (রা:) এর প্রতি নিবেদন করছি লাখো সালাম ও অকৃত্রিম শ্রদ্ধা।

মহান আল্লাহতাআলা তাঁর সৃষ্ট আশরাফুল মাখলুকাত মানবজাতির কল্যাণ, সঠিক পথ প্রদর্শন ও পরিচালনার জন্য প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা:) এর উপর পবিত্র কোরআনের শাশ্বত বানী নাযিল করেছিলেন। পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন ’আমার সৃষ্টির মধ্যে এমন এক সম্প্রদায় আসবে যারা পথভ্রষ্টদের সুপথ দেখাবে’। মহান প্রভুর রেজামন্দি হাসিল পুর্বক তাঁর সাথে যাঁরা মহান মিলনে ধন্য হচ্ছেন তাঁরাই হলেন ইনসানে কামেল বা মহান অলিআল্লাহ। যুগ যুগ ধরে পবিত্র কোরআনের বানী মানুষের মধ্যে প্রচারের উদ্দেশ্যে অগনিত আউলিয়া কেরামদের আগমন ঘটছে এই ধরাধামে। তারা মানবজাতির কল্যানে তাঁদের নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে যাচ্ছেন। তাদেরই একজন হলেন শেখে ফায়াল, জামালে মোস্তফা, শানে জামালী ও জালামী, শানে মাহবুবী ও মাশুকী, ছাহেবে বেলায়তে ওজমা অলিকুল শিরমনি মুশকিল কোশা হাযত রাওয়া শেখ সৈয়দ হযরত শাহজাহান শাহ (রা:)।

পবিত্র হাদীস শরীফে বর্নিত আছে, ’’ইনদা জিকরে আওলিয়ায়ি জানাজ্জুল বির রাহমাতি’। অর্থাৎ আওলিয়া কেরামদের স্মরন করলে আল্লাহর রহমত নাযিল হয়। সুতরাং আউলিয়া কেরামদের কেরামত মহত্বের আলোচনা পর্যালোচনা, স্মরন পৃথিবীর যেখানেই হোক না কেন, সেখানে আল্লাহর রহমত অবর্তীর্ন হয়। তাই যেখানে আল্লাহর অলিরা মাজারস্থ হন সেখানে তো রহমত সর্বদা নাযিল হতে থাকে। আমি একজন নগন্য অলিভক্ত সেই রহমতের প্রত্যাশায় এ ছোট লেখার মাধ্যমে হযরত শাহজাহান শাহ (রা:) কে স্মরন করছি।
একজন মহাসাধকের আবির্ভাব জগৎ ও জীবনকে আলোকিত করে তোলে। তেমনি ভাবে হযরত শাহজাহান শাহ (রা:) এর আগমনে আলোকিত করেছে বার আউলিয়ার পুন্যভুমিখ্যাত এই চট্টগ্রামকে। খৃষ্টিয় পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষার্ধে সুদুর ইয়েমেন (আরব) থেকে সর্বস¦ ত্যাগ করে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের উদ্দেশ্যে তিনি প্রথমে লাহোর, পরে দিল্লী, গৌড় হয়ে জলপথে বাংলাদেশ তথা ইসলামাবাদ নামে অভিহিত চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন বলে প্রচার আছে। প্রথমে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ও পরবর্তীতে হাটহাজারী উপজেলার ধলই গ্রামে আবির্ভুত অলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজাহান শাহ (রা:) এর পুন্য ছোঁয়ায় সমগ্র ধলই এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চল এক বিশেষ মর্যাদাপুর্ন এলাকায় পরিগনিত হয়েছে। তিনি এ এলাকায় পর শতাব্দীকাল ধরে বিরাজমান ও বিকাশমান। তার রওজা মোবারক ও দরবার জাতি বিরাজমান ও বিকাশমান। তাঁর রওজা মোবারক ও দরবার জাতি ধর্ম বর্ন গোত্র সম্প্রদায় নির্বিশেষে সকল জাতির মিলনকেন্দ্র। আকাশের তারা যেমন গুনে শেষ করা যাবে না, তেমনি তার কারামত ও গুনাবলীর কথাও লিখে শেষ করা যাবে না। জীবর্দ্দশায় যেমন ছিলেন তেমনি অন্তরালে চলে গেলেও তিনি মানবকল্যানে সর্বদা নিবেদিত। এখনো তার রুহানী ফয়েজ বরকতের মাধ্যমে জাতি ধর্ম বর্ন গোত্র সম্প্রদায় নির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগী মানুষ মহান আল্লাহ তাআলার করুনা লাভে ধন্য হচ্ছেন। পাঁচশত বছরেরও পুর্বে ফয়েজ বরকতের যে ধারা সুচিত হয়েছিল তা অনন্তকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

যুগে যুগে অনেক অলি বুজুর্গ, শায়খ-সুফী বাইরে থেকে চট্টগ্রামে শুভাগমন করেছিলেন। চট্টগ্রামও জন্ম দিয়েছে অনেক অলি বুজুর্গকে। চট্টগ্রামে নবীন প্রবীন অসংখ্য সুফী দরবেশদের মিলনমেলায় পরিনত হয়েছে। ধলই দরবার শরীফ অত্যন্ত প্রাচীন এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয়। ধলই দরবারের মহান অলি হযরত শাহজাহান শাহ (রা:) আমাদের জন্য ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অমুল্য উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন তাঁর মহান আদর্শ ও শিক্ষা। এ শিক্ষা মানবতাবাদ ও বিচারসাম্যের শিক্ষা, প্রভু মিলনে ধন্য হওয়ার শিক্ষা, সত্য ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল থাকার শিক্ষা, সকল সৃষ্টিকে ভালবাসার শিক্ষা, স্বদেশ ও স্বদেশের মানুষকে ভালবাসার শিক্ষা এবং মানুষের অন্তর্নিহিত গুনাবলীর কাঙ্খিত বিকাশের শিক্ষা। ধলই দরবার শরীফকে কেন্দ্র করে বিকশিত বিভিন্ন প্রতিষ্টানাদির কার্যক্রমসমুহ সর্বজনবিদিত ও অত্যন্ত প্রশংসনিয়। যেখানে মানব ও সমাজকল্যান মুলক যে সব কার্যক্রমসমুহ পরিচালিত হচ্ছে তা আত্বমানবতার সেবা, দারিদ্র দুরীকরন, আত্বকর্মসংস্থান ও আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে উৎকর্ষতার প্রতীক হিসেবে মাইলফলক হয়ে থাকবে।

আজ সারা বিশ্বের মানুষ শান্তির অন্বেষায় দিশেহারা। চতুর্দিকে আজ যুদ্ধ, সন্ত্রাস, মাস্তানি, খুন-খারাবি, মুনাফেকি, জুয়া, ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি, রাহাজানি, ধোকাবাজ, দখলবাজি, নিরাপত্তাহীনতা, সামাজিক অসম্প্রীতি, অস্থিরতা ও অরাজকতার ঢল। মানবতা আজ তমসাচ্ছন্ন। সমগ্র বিশ্বব্যাপী জ্ঞান বিজ্ঞান ও আধুনিক প্রযুক্তির বিশ্বয়কর ও চোখ ধাঁধানো প্রভুত উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও মানুষের বহু আখাঙ্খিত শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্ছে না। যুগের এই মহা ক্রান্তিলগ্নে মানুষের আত্বশুদ্ধির মাধ্যমে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য ও নিরপত্তার জন্য অলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজাহান শাহ (রা:) এর মত মহান অলির সান্নিধ্য আজ বড় প্রয়োজন। তিনি আমাদের চোখের আড়ালে চলে গেলেও আমরা তাঁর চোখের অন্তরালে চলে যাইনি। এমতাবস্থায় আমরা যদি তার রেখে যাওয়া শাশ্বত জীবনাদর্শকে নিজেদের জীবনে প্রতিফলিত করতে পারি তবেই তার সুনজর আমাদের নসিব হবে এবং পরিনামে রাসুল (সা:) ও মহান আল্লাহতাআলার রেজামন্দি হাসিল করতে সক্ষম হব। এর মাধ্যমে দেখাতে পরব তাঁকে যথাযোগ্য সম্মান ও শ্রদ্ধা। মহান রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের সকলকে অলিকুল শিরোমনি হযরত শাহজাহান (রা:) এর মহান আদর্শে উদ্ধুদ্ব হওয়ার তাওফিক দান করেন সেই প্রার্থনা করি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.