কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা, বাঁশখালী : বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় উপকূলের জনগণ আশায় বুক ভরাচ্ছে বিগত দিনের মত আর জোয়ার ভাটার পানিতে ভাসতে হবে না উপকূলের জনগণকে। বর্তমানে বাঁশখালীর সাধনপুরের বৈলগাঁও রাতাখোর্দ্দ এবং দক্ষিণ বরুমচড়া এলাকায় কাজ শুরু হলেও অন্যান্য এলাকার কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে বলে পাউবো বাঁশখালী সূত্রে জানা যায়। ১৯৯১ এর ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ ভেঙে ছারকার হয়ে গেলে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে উপকূলের জনগণকে জোয়ার ভাটার পানিতে ভাসতে হয়। তাছাড়া বিগত দিনে বাঁশখালীর উপকূলীয় এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণকে ঘিরে অনেক রাজনীতি ও অনেকবার নানা ধরনের বরাদ্দ আসলেও কার্যত তাতে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ হয়নি কোন অংশে।
ফলে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণকে প্রধান পদেক্ষপ হিসেবে গ্রহণ করে বাঁশখালীর সাংসদ গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী। তিনি উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধান মন্ত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্টদের সাথে যোগাযোগ করে বাঁশখালীর উপকূলীয় বেড়িবাঁধের জন্য ২০৯ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণে।
এই বরাদ্দ দেওয়ার পর পরবর্তীতে একনেকে তা পাস হয়ে বর্তমানে উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বেশ কয়েকটি টেন্ডার আহবান করা হলে ইতিমধ্যে তার কয়েকটি কাজ শুরু হয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সূত্রে জানা যায়, উপকূলীয় বেড়িবাঁধ নির্মাণের কাজ ৩৫টি প্যাকেজে এই কাজ করা হবে। তবে প্রথম পর্যায়ে ২টি কাজ শুরু হয়েছে। তার একটি হল সাধনপুরের বৈলগাঁও রাতাখোর্দ্দ এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ। যাতে ব্যয় হবে প্রায় ৭০-৭১ লক্ষ টাকা। অপরদিকে দক্ষিণ বরুমচড়া ৪৬৯ মিটার ব্লকের কাজ করা হবে, যার ব্যয় প্রায় ৬ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা বলে পাউবো বাঁশখালী সূত্রে জানা যায়।
এর আগে বাঁশখালীর গন্ডামারা প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বেড়িবাঁধের নির্মাণ কাজ শুরু হলে তা এখনো পর্যন্ত চলমান রয়েছে। কাথারিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন চৌধুরী বলেন, কাথারিয়ার মানিক পাঠান, বাগমারা, বরইতলী ও হালিয়াপাড়া অংশে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে কাথারিয়াবাসী দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে এবং বর্ষা মৌসুমে জোয়ার ভাটার পানিতে ভাসবে না। বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান লোকমান আহমদ বলেন, বাহারছড়া উপকূলে বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ স্থায়ী ভাবে নির্মাণ হলে এই এলাকার জনগণ দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। খানখানাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবু ছিদ্দিক আবু বলেন, আমার এলাকাটি সবচেয়ে বঙ্গোপসাগরের করাল ঘ্রাসের শিকার।
এই এলাকার খানখানাবাদ বাজার প্রেমাশিয়া বাজার সহ বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা বঙ্গোপসাগরে হারিয়ে গেছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এই এলাকার জনগণ নির্ঘুম রাত কাটে জোয়ার ভাটার তোড়ে। ছনুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল হক চৌধুরী বলেন, আমার এলাকার ছনুয়া তোতকখালী, খুদুকখালী সহ বেশ কিছু পয়েছে বিধ্বস্ত বাঁধ দিয়ে জোয়ার ভাটার পানি ঢুকে এলাকার জনগণ নির্ঘুম রাত কাটাতে বাধ্য হয়। সাধনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমার এলাকার পশ্চিমাংশে বঙ্গোপসাগর এবং উত্তরে শঙ্খ নদীর ভাঙনে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে।
তাই এই এলাকায় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মিত হলে জনগণ দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। এ ব্যাপারে পাউবো বাঁশখালীর উপসহকারী প্রকৌশলী ধীমান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে যেসব কাজ চলছে তাতে পাউবো এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যথাযথ তদারকি রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে কাজের মান ভাল হচ্ছে এবং কোন ধরনের গাফিলতি হচ্ছে না।
এভাবেই বাঁশখালীর প্রত্যেক অঞ্চলে এই কাজ অব্যাহত থাকবে। এ ব্যাপারে বাঁশখালীর সাংসদ আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাঁশখালীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী ছিল উপকূলীয় স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের। বর্তমান সরকার বাঁশখালীবাসীর স্বার্থে উপকূলে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ২০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদান করেছেন। যার মাধ্যমে বর্তমানে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তা যথাযথ ভাবে বাস্তবায়ন হলে বাঁশখালীর উপকূলীয় জনগণ দীর্ঘদিনের অভিশাপ থেকে মুক্ত হবে। উপকূলবাসীর দুঃখ লাঘবের জন্য বর্তমান সরকার আরো অনেক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। বিশেষ করে আধুনিক বাঁশখালী গড়তে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এদিকে বাঁশখালীর উপকূলীয় ছনুয়া, গন্ডামারা, সরল, বাহারছড়া, খানখানাবাদ ও সাধনপুর এলাকায় প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে ওই এলাকার জনগণকে সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং জোয়ার ভাটার পানিতে তাদের জীবন দেদুল্যমান থাকে।