বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ কেন?

0

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ  সম্প্রতি বৃহত গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের মধ্যকার ঝামেলায় গোটা দেশ উত্তপ্ত। ২০০১ সালে ভারতের সংসদ ভবনে সন্ত্রাসী হামলায় অভিযুক্ত আফজাল গুরুর ফাঁসির দ্বিতীয় বার্ষিকীতে জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে সমবেত হয়েছিল একদল শিক্ষার্থী। প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে বিতর্কিত কাশ্মিরের স্বাধীনতার সমর্থনে স্লোগান দেয়া শুরু হলে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে। সরকারপন্থী ছাত্র সংগঠন ও পুলিশের হামলায় সমাবেশ পণ্ড হওয়া থেকে শুরু করে রাতারাতি গোটা পরিস্থিতি পাল্টে যায়। একে একে ভারতের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ছড়িয়ে যায়। দেশটির সর্বোচ্চ শিক্ষাঙ্গনগুলোর এই অবস্থার প্রেক্ষিতে কথা বলেছেন মার্কিন বুদ্ধিজীবি ও ভাষা গবেষক নোয়াম চমস্কি।

ভারতীয় ভাইস চ্যান্সেলর এম. জগদীশ কুমার ভাষাবিজ্ঞানী নোয়াম চমস্কিকে ইমেইল মারফত বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পুলিশের উপস্থিতি বিষয়ে প্রশ্ন করেন। মেইলের উত্তরে বলা হয়, ‘জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্কট নিয়ে আমরা অনেকেই উদ্বিগ্ন। দেশদ্রোহিতার উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই জেএনইউ-তে ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন পুলিশেরই দরকার হয় না, তখন সেখানে কেন আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ প্রবেশের অনুমতি দেন?’

অবশ্য ভাইস চ্যান্সেলর আগেই এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, ‘আমি কখনোই পুলিশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে এবং আমাদের ছাত্রদের তুলে নিয়ে যাবার অনুমতি দেইনি। আইনের বিধান অনুযায়ী আমরা যতটুকু সহায়তা করার ততটুকুই করি আমরা। পরিস্থিতি সামলানোর বাইরে চলে গেলেই আমরা পুলিশের সহায়তা নেই।’ এখানে উল্লেখ্য যে, শুধু ভারত নয় উপমহাদেশের প্রতিটি দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘবছর ধরেই পুলিশ মোতায়েন করা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব আইনে বিশ্ববিদ্যালয় অভ্যন্তরে পুলিশের উপস্থিতি আইন পরিপন্থী হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এবিষয়ে কোনো বক্তব্য দেয়া হয় না।

শুধুমাত্র নোয়াম চমস্কিই নয় অপর এক নোবেলজয়ী অরহ্যান পামুকসহ অন্যান্য ৮৬জন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদ সদস্য ভারতের বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তাদের মতামত হলো, ভারত উপনিবেশিক আমলের অন্ধকারে ফিরে যাচ্ছে দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে। উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারি জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মিলিত ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কানাইয়াকে রাষ্ট্রদোহ এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হলে এই বুদ্ধিজীবিরা বিবৃতি প্রদান করেন।

সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টি(বিজেপি) জয়লাভ করে ক্ষমতায় আসর পর থেকেই নানান বিষয়ে উত্তপ্ত দেশ। একেবারে ঘর ওয়াপসির মতো ঘটনা থেকে শুরু করে হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে দলিত ছাত্র হত্যা ও জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-প্রশাসন সঙ্কট চরম পর্যায়ে পৌছেছে। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ইস্যুটি নিয়ে সংঘাত শুরু হয়েছিল সেটা কোনো নতুন ইস্যু নয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর‌্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বহু আন্দোলন ও প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে।

আফজল গুরুর ফাঁসির পর বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ওই ফাঁসির তীব্র নিন্দা করেছিল। আজ বিজেপি জম্মু ও কাশ্মীরে যাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকার গঠন করেছে, সেই পিডিপি পার্টি পর্যন্ত এই ফাঁসিকে বলেছিল ‘ন্যায়বিচারের বিকৃতি’। তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর এই বহুল চর্চিত বিষয়টি নিয়ে হামলা কেন?

কাশ্মির ইস্যু আজ জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ডি পেড়িয়ে কলকাতা ও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে গেছে। বুদ্ধিজীবিরা বারবার রাষ্ট্র প্রশাসনকে মনে করিয়ে দিতে চাইছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন বা প্রতিবাদ করছেন তারা কেউই অস্ত্র বহন করছে না। তারা প্রত্যেকেই আদর্শের জন্য আন্দোলন করছে। রাষ্ট্র যে আদর্শের উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয় শিক্ষার্থীদের আদর্শ সেই আদর্শ থেকে ভিন্ন নয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.