মাটিরাঙার ঘটনায় গুজব-উস্কানিদাতাদের খোঁজা হচ্ছে

0

খাগড়াছড়ি: জেলার মাটিরাঙায় গত রোববার সড়ক অবরোধ করে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের বিভিন্ন আইডিতে মিথ্যা, গুজব ও উস্কানিমূলক যেসব তথ্য প্রচারিত হয়েছিল যেসব আইডির ব্যবহারকারীদের খুঁজে এখন মাঠে নেমেছে প্রশাসন।

উস্কানি দিয়ে সম্প্রীতি ও সহাবস্থান বিনষ্ট করতে স্বার্থান্বেষী একটি মহল এসব ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

গত রোববার (২১ শে ফেব্রুয়ারি) দুপুরের পর থেকে একাধিক ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে একটি অস্পষ্ট পুরাতন ছবি, সেনাবাহিনী ও পুনর্বাসিত বাঙালিদের জড়িয়ে নাম সর্বস্ব কিছু নিউজ পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের লিংক শেয়ার করা হয়। সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক এসব ছবি ও নিউজের লিংকগুলো এক আইডি থেকে অন্য আইডিতে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবে এক ওয়াল থেকে অন্য ওয়াল, ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপে ভাসতে থাকে এসব ছবি ও সংবাদগুলো।

এছাড়া, অন্য এক ফেসবুক আইডি থেকে ঘটনার স্থান, সময় গোপন রেখে উস্কানিমূলক একটি স্ট্যাটাস দেয়। যেটিতে আদিবাসী ও শিশু শব্দ ব্যবহার করে জনমত সৃষ্টি করার চেষ্টা করা হয়। ওই আইডির স্ট্যাটাসটি উস্কানি ছড়ানো অন্যান্য এর ব্যবহারকারীরা লাইক ও শেয়ার দিয়ে ছড়ানোর চেষ্টা করে। এতে করে জনমতে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। তাদের উস্কানিতে কান দিয়ে অনেক সাধারণ জনগণ এসব পোস্ট শেয়ার ও নিজেদের ওয়ালে নানা অসত্য ঘটনা লিখতে থাকে। কিন্তু প্রশাসনের তড়িৎ হস্তক্ষেপে শান্ত হয় মাটিরাঙাসহ অন্যান্য জায়গার বিক্ষোভ। উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতাও লক্ষণীয়।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের সম্প্রীতির বন্ধন বিনষ্ট করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অপপ্রচার ও উস্কানি ছড়িয়েছিল। কিন্তু সচেতন জনগণ তাদের এসব গুজবে কান দেয়নি। ভবিষ্যতেও এমন গুজবে বিশ্বাস না করতে জেলাবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। পাশাপাশি উস্কানিদাতাদের খুঁজে বের করতে মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে বলেও জানান তিনি।

পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী জানান, মাটিরাঙাসহ অন্যান্য ঘটনায় উস্কানিদাতাদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তাদের শনাক্ত করতে মাঠে কাজ করছে প্রশাসন। মোটরসাইকেল চালক শান্ত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তারকৃতদের পুলিশি রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃত দু’জনই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে।’

অপরদিকে, মাটিরাঙায় বিক্ষোভকারীদের হামলায় একাধিক পাহাড়ি আহত হয়েছে এমন গুজব চললেও সেদিন কোনো হতাহতের রোগী মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা আশপাশের কোনো চিকিৎসা কেন্দ্রে ভর্তি হয়নি বলে জানিয়েছেন মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খায়রুল আলম।

তিনি মুঠোফোনে জানান, ঘটনার দিন (২১ শে ফেব্রুয়ারি) মাটিরাঙা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স বা উপজেলার কোথাও কোনো হতাহতের রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে তার জানা নেই।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে নিখোঁজ হওয়া মাটিরাঙার নতুন পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মোটরসাইকেল চালক আজিজুল হক শান্তের লাশ পাওয়ার পর গত রোববার সকালে প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে এলাকাবাসী। এ সময় মাটিরাঙা, গুইমারাসহ আশপাশের সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছের গুড়ি ফেলে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুদ্ধ জনগণ। সে সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহল মাটিরাঙায় গাড়ি থেকে নামিয়ে নামিয়ে পাহাড়িদের মারধর করা হচ্ছে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও নানা রকম সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিতে থাকে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.