খেলাধুলা: একজনের সম্পর্কে তাঁর অধিনায়কের প্রশংসাপত্র— তাঁকে নাকি কিছু বলতেই হয় না! একটাই জিনিস জানেন তিনি। বল পেটাও! অন্যজন আবার নিজেই তাঁর সাফল্যের রসায়ন ফাঁস করছেন— তাঁর ব্যাটিংয়ের চাবিকাঠিটাই নাকি পরিস্থিতি বুঝে নিয়ে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাট করা। তারা হার্দিক পাণ্ডে ও রোহিত শর্মা। একদিন আগেই শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ দুজন মিলে হারিয়েছিলেন।
এশিয়া কাপ টি২০-তে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির দলের প্রথম ম্যাচের পরের দিন বিসিসিআই ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রোহিত বলেন, ‘একটা ইনিংস খেলতে খেলতে আমার ব্যাটিংয়ে এই যে গিয়ার চেঞ্জ দেখেন, সেটা আসলে ঠিক ওই সময়ে ম্যাচের পরিস্থিতি, নিজের দলের প্রয়োজনেরই বহিঃপ্রকাশ। তবে সব কিছুই ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে সেই ব্যাটিংয়ের প্রাথমিক ব্যাপারগুলোর উপর নির্ভর করে। টি২০ ক্রিকেটেও আপনি ব্যাটিংয়ের বেসিকস কখনও ভুলতে পারেন না। কখনও হয়তো আপনি এমন একটা পিচে নামলেন, যার উপর শুরুতেই নিজের মতো করে শট খেলাটা সমস্যার। তখন আপনাকে নিজের অনুকূল সময়ের অপেক্ষায় থাকতে হবে আর দেখতে হয় কী ঘটছে ম্যাচে।’
সাকিব ক্যাচ ফেলার আগে ২১ রানে থাকা রোহিত ১৩টা ডট বল খেলেছিলেন। তার পরের ২৭ বলে তিনি তোলেন ৬২। যে ২৭ ডেলিভারিতে একটাই ডট বল— যেটায় আউট হন রোহিত!
এই নিয়ে তিনি বলেন, ‘স্ট্রোক প্লে সবসময় অত সোজা কাজ নয়। আপনাকে তার জন্য ইনিংসের একটা ভিত তৈরি করা দরকার। আর পরিস্থিতি বুঝে ইনিংসটার গতি বাড়াতে হবে। আমি জানি, একবার নিজের আর দলের জন্য আমার সেই ভিত গড়া হয়ে গেলে তার পরে শট খেলতে, ইনিংসের গিয়ার পাল্টাতে পারব। বাংলাদেশ ম্যাচে ব্যাট করতে নেমে পিচটা দেখেই বুঝেছিলাম, এটা ১৬০-১৭০ রানের পিচ নয়। তাই প্রাথমিক ধারণা ছিল, ১৪০-১৫০ রান তোলার। কারণ আমরা জানতাম, দেড়শো তোলার টার্গেট নিলে তার চেয়ে হয়তো কিছু বেশি রানেই পৌঁছব। কিন্তু শুরু থেকেই ১৭০ তুলব ভাবলে তার চাপে শেষমেশ ১৪০-ও হয়তো না উঠতে পারে।’
সীমিত ওভারের ফরম্যাটে রোহিতের ব্যাটিং ফর্মকে এখন বলা হচ্ছে— তিনি যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারেন! আর স্বয়ং রোহিত বলছেন, ‘ফর্ম নিয়ে আমি খুব বেশি পিছনের দিকে তাকাই না। বরং সেটাকে সামনে যে টুর্নামেন্ট, যে ম্যাচ আমার আসে, সেখানে নিয়ে যেতে চেষ্টা করি। তাই এখন বাংলাদেশ ম্যাচ আমার কাছে অতীত। পাকিস্তান এর পর। আমি সেই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে আছি।’
হার্দিকের গলায় আবার তাঁর অধিনায়ক ধোনির প্রতিধ্বনি। ‘হ্যাঁ, সত্যিই আমি টিম থেকে কোনও মেসেজ পাইনি বাংলাদেশ ম্যাচে ক্রিজে নামার আগে। দলের কেউ আমাকে বলেনি যে, তুমি নেমে এইভাবে খেলো বা এই ভাবে খেলো না। আমি স্রেফ ওই সময় আমাদের ইনিংসের গতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে গিয়েছি। নিজের ইনস্টিঙ্কটে ব্যাট করেছি। যে শটে সবচেয়ে বেশি রান আসবে সেই শট খেলেছি’- বলেছেন আগের দিন ডেথ ওভার্সে নেমে ১৮ বলে ৩১ করা ভারতের তরুণ পেসার-অলরাউন্ডার।
সঙ্গে আরও হার্দিক যোগ করেছেন, ‘এটাই আমার ব্যাটিং স্টাইল। ক্রিকেটটা আমি এই মেজাজেই খেলি। আমাকে কিন্তু টিম কখনও পিঞ্চ-হিটার হিসেবে ক্রিজে পাঠায়নি। আমার বিশ্বাস, আমি সত্যিকারের ব্যাটসম্যান।’
ধোনি যদি তাঁর তরুণ তুর্কি সম্পর্কে বলেন, ‘হার্দিকের মতো কাউকেই তো আমরা দলে চেয়ে আসছিলাম এত দিন’- তাহলে রোহিত বলছেন, ‘মাঠে হার্দিক কোনো কিছুতেই ভয় পায় না। নিজের খেলাতেও সেই মানসিকতা আনতে চায় সবসময়। ব্যাটিং বা বোলিং, যেটাই করুক, উজ্জীবিতভাবে করে।’