জুলাই থেকেই নতুন বেতন স্কেল কার্যকর হবে

সিটিনিউজবিডি : মাস পর জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশনের সুপারিশ চূড়ান্ত করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে জমা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের পর্যবেক্ষণ কমিটি।

সচিব কমিটির প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বুধবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের দপ্তরে প্রতিবেদনটি জমা দেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেতন ও চাকরি কমিশন সর্বোচ্চ ৮০ হাজার ও সর্বনিম্ন ৮,২০০ টাকা মূল বেতন ধরে নতুন বেতন কাঠামো সুপারিশ করছিল। সচিব কমিটি তাদের প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮,২৫০ টাকা সুপারিশ করেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত প্রতিবেদন গ্রহণ করে বলেন, ১ জুলাই থেকেই নতুন বেতন স্কেল কার্যকর করা হবে।
মুহিত বলেন, ‘রিপোর্টটি এখনও আমার পুরোপুরি পড়া হয়নি। অর্থমন্ত্রণালয় পর্যালোচনা করার পর এ প্রস্তাব কেবিনেটে উঠেবে। তবে বাজেটের ব্যস্ততার কারণে ৪ জুলাইয়ের আগে সেটা আমি দেখতে পারব বলে মনে হয় না। তবে নতুন বেতন কাঠামো ১ জুলাই থেকেই কার্যকর হবে।’
জানা গেছে, সচিব কমিটির সুপারিশ প্রয়োজনে সংশোধন করে তা আগামী সোমবার অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে। সেখানে অনুমোদনের পর প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে আগামী অর্থবছরের প্রথম দিন ১ জুলাই থেকে এটি কার্যকর করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় বেতন ও চাকরি কমিশন গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।এর ১০ দিন পর ওই সুপারিশ পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে আহ্বায়ক করে কমিটি গঠন করা হয়। পরে কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে নেয় কমিটি।অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সরকারি চাকরিজীবী, প্রতিরক্ষা ও অন্যান্য বাহিনী এবং উন্নয়ন প্রকল্পে থাকা জনবলসহ মোট প্রায় ২১ লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা জাতীয় বেতন কাঠামো অনুযায়ী হয়ে থাকে।তাতে প্রায় শতভাগ বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নতুন কাঠামো বাস্তবায়নে শুধু মূল বেতন বাবদই বছরে অতিরিক্ত ব্যয় হবে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি। পাশাপাশি অন্যান্য ভাতা বাবদ দরকার হবে আরো প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। একসঙ্গে এত অর্থের সংস্থান দুরূহ হবে বিধায় আগামী ১ জুলাই থেকে শুধু বর্তমান বেতন-ভাতার সঙ্গে বর্ধিত মূল বেতন এবং পরের অর্থবছরে বর্ধিত ভাতা দেওয়া হবে।তবে আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন কাঠামো কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে ২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে দেওয়া ২০ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা বাতিল হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টও কিছুটা সমন্বয় করা হবে। তাতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রকৃত বেতন-ভাতা বাড়বে প্রায় ৬০ শতাংশের মতো। অর্থাৎ এখন যিনি ১০০ টাকা পান, নতুন কাঠামোয় তিনি পাবেন ১৬০ টাকার মতো।
চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রায় ১২ লাখ সরকারি চাকরিজীবীর (বিভিন্ন বাহিনীর লোকবল বাদে) বেতন-ভাতা খাতে বরাদ্দ রয়েছে ২৩ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা। দেশে শিল্প-বিনিয়োগে গতি না থাকায় আগামী অর্থবছর ও পরের অর্থবছরে বেতন-ভাতা বাবদ যে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি দরকার হবে, তার জোগান দেওয়া কঠিন হলেও জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় এটি কার্যকরে কৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
তারা বলছেন, বর্ধিত বেতন-ভাতার অর্থের জোগান দিতে গিয়ে বড় ধরনের চাপে পড়বে এনবিআর।
আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত করতে গিয়ে মঙ্গলবার অর্থমন্ত্রী এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে যে বাড়তি অর্থের প্রয়োজন হবে, তা কোন কোন খাত থেকে কিভাবে আদায় করা সম্ভব হতে পারে সে বিষয়ে তিনি আলোচনা করেন।
এ সময় অপ্রচলিত খাত থেকে আরো বেশি রাজস্ব আদায়ের উপায় বের করার ওপর জোর দেন অর্থমন্ত্রী। একই সঙ্গে আয়করের আওতা বাড়ানো এবং মূসক আইন ২০১২ পুরোপুরি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ভ্যাট আইন বাস্তবায়িত হলে রাজস্ব আদায় কয়েক গুণ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া করদাতার সংখ্যা আরো বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।
রাজস্ব আয় বাড়াতে নেওয়া বিভিন্ন কৌশল বাস্তবায়ন করতে পারলে নতুন অর্থবছরে বেতনের অর্থ জোগানে কোনো সমস্যা হবে না বলে অর্থমন্ত্রীকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
বিদ্যমান ২০টি গ্রেডকে ১৬টি গ্রেডে রূপান্তর করে সর্বনিম্ন গ্রেডে শতভাগ বাড়িয়ে বেতন ৮,২০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডেও শতভাগ বাড়িয়ে ৮০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.