চিকিৎসার অভাবে অপর পা’টিও হারাতে যাচ্ছে রোকেয়া

কামরুল ইসলমা দুলু (সীতাকুন্ড প্রতিনিধি) : ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস। মহান মুক্তিযুদ্ধ প্রায় শেষ পর্যায়ে এলাকায় পাক সেনাদের অবস্থান সর্বত্র পরিলক্ষিত হচ্ছে। সীতাকুন্ড থানার জাহানাবাদ গ্রামের অধিবাসীরা নিরাপত্তার জন্য পাহাড়ে দলে দলে ছুটে চলছে। তেমনি রোকেয়া নামের ৭ বছরের এক ছুট্ট বালিকা স্বজনদের সঙ্গে পাহাড়ে আশ্রয়ের জন্য বেরিয়েছে। সেদিন ছিল ১০ ডিসেম্বর শুক্রবার। বেলা প্রায় ১২.৩০ টা।

অত্র এলাকার হামিদুর রহমান মুন্সির বাড়ির সামনের গ্রাম্য রাস্তায় পাক বাহিনীর গোপনে পুঁতে রাখা মাইনের আঘাতে রোকেয়ার একটি পা উড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে তার বাবা নুর আহম্মদ ও এক আত্মীয় ইসলাম তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালে ৫ মাস চিকিৎসা নেয়ারপর রোকেয়া ১ পা নিয়ে বাড়ী ফিরে।

মুক্তিযুদ্ধের ৮ মাসপর তার বাবাও মারা যান। অভাব অনটনের সংসারে মা সালমা খাতুনকে নিয়ে কোন রকমে তাদের সংসার চলে, একদিকে চরম অর্থ কষ্ট অন্যদিকে ১ পা না থাকা পঙ্গু রোকেয়াকে এলাকার কেউ বিয়ে করতে চাননি। অবশেষে সিলেটের আবদুস সামাদ নামের এক নিঃস্ব ব্যক্তি পঙ্গু রোকেয়াকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে কোহিনুর ও সাবিনা নামে ২ কন্যার জন্ম হয়। ১০ বছর আগে রোকেয়ার স্বামীও মারা যান। কোহিনুর ও সাবিনাকে বিয়ে দিলেও বছর চারেক আগে সাবিনার স্বামী সেলিমকে রাতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হত্যা করে।

স্বামীর অকাল মৃত্যুর পর সাবিনা ২ শিশু কন্যাকে নিয়ে পঙ্গু অসহায় মায়ের সংসারে উটে। মুক্তিযুদ্ধে পা হারানো রোকেয়ার নিজস্ব কোন বাড়ী ভিটাও নেই। ১৯৯১ সালের ঘুর্নিঝড় ও জলোচ্ছাস্বে অসহায় রোকেয়ার বাড়িঘর পানিতে ভেসে গেলে সেই সাথে যুদ্ধের পরে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসার কাগজপত্রও ভেসে যায়। তাই যুদ্ধে পা হারানোর ডাক্তারী সার্টিফিকেটের কোন প্রমানও তার কাছে নেই। সব হারিয়ে বর্তমানে পঙ্গু রোকেয়ার জীবন কাটছে তীব্র অর্থ কষ্টে। মুক্তিযুদ্ধে বামপা হারানো রোকেয়ার পঁচন ধরার কারনে বর্তমানে ডান পা টাও হারাতে বসেছে। ঔষধ কেনার মতো তার সামর্থ নেই।

রোকেয়ার ডান পাতে পঁচন ধরেছে। বর্তমানে সে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ তলায় চিকিৎসাধীন। সাংবাদিকদের লেখনীর কল্যাণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছ থেকে কয়েকমাস কিছুটা আর্থিক সুবিধা পেলেও অজ্ঞাত কারণে সেটাও বন্ধ হয়ে যায়। মেডিকেলের বেডে শুয়ে রোকেয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্তমানে দেশে মুক্তিযুদ্ধাও যুদ্ধাহতরা সরকারী বেসরকারীভাবে কত সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে অথচ আমি একটি পা হারালাম অপর পাটি হারাতে বসেছি অথচ কোন ভাবেই কোন রকম সহযোগীতা পাচ্ছিনা। অনেক নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও সরকারী কর্মকর্তারা রোকেয়াকে শুধু আশ্বাসই দিয়েছেন কোন সহযোগীতা করেননি। দারিদ্র নিঃস্ব, বাস্তহারা পঙ্গুত্ব ও অপর পা’টি হারানোর দুঃখ তাকে দিন দিন অসহনীয় করে তুলেছে।

মুক্তিযুদ্ধে পা হারানো রোকেয়া সরকারী বেসরকারী এবং দেশের বিত্তবানদের কছে আবেদন জানাচ্ছেন তার এমন দুঃসময়ে এগিয়ে আসার জন্য। কোন সুহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রোকেয়ার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসলে তাহার মেয়ে সাবিনা আক্তার মুন্নির মোবাইল ০১৮৩৬-৪৫৩৭৩১ এই নাম্বারে যোগাযোগ করার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বিনীতভাবে অনুরোধ জানাচ্ছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.