আইপিএল অভিষেক ম্যাচেই মুস্তাফিজের বাজিমাত

গোলাম সরওয়ার :   আইপিএলও জয় করতে চলেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। না, মাত্রই তো অভিষেক হলো। পুরো মৌসুমে কী করবেন, সেটা দিয়েই বিচার হবে। তবে প্রথম ম্যাচ আর ম্যাচের আগেই বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছেন। তাঁকে নিয়ে এতটাই আগ্রহ, মুস্তাফিজের ইংরেজি শিখতে বয়েই গেছে, বাকিরাই বরং বাংলা শিখুক!

ইংরেজিটায় এখনো তিনি তেমন সড়গড় নন। বাংলাতেই তো পেটে বোমা পড়লে পরে এক-দুটো কথা ফোটে। তবে দুই বাক্যে যা বলেন, সেটাই যথেষ্ট। আর তা ছাড়া যতক্ষণ বল কথা বলছে, তাঁরই–বা বলার কী দরকার!

গতকাল মঙ্গলবার কলকাতার একটি বাংলা দৈনিকে বেশ বড় সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। আজ ভারতের জাতীয় দৈনিকগুলোতেও আছেন মুস্তাফিজ। পরাজিত দলে খেলেছেন। তার ওপর সেই পরাজয়ও একরকম নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ। পরাজিতদের বন্দনা কেই–বা করে, বিজয়ীর রূপকথাই তো লেখে পৃথিবীর ইতিহাস! তবু সব ম্যাচ রিপোর্টে, প্রতিবেদনে মুস্তাফিজের বোলিং আলাদা করে প্রশংসা কুড়িয়েছে।

বিশ্বের এক নম্বর ক্রিকেট পোর্টাল ইএসপিএনক্রিকইনফো ‘সানরাইজার্সের বড় পরাজয়ে আলো ছড়ালেন মুস্তাফিজ’ শিরোনামের ম্যাচ রিপোর্টে লিখেছে, ‘শুরুর দিকে কোহলি আর ডি ভিলিয়ার্স কেবল একবারই প্রতিপক্ষ বোলারকে সমীহ করেছেন, মুস্তাফিজুর রহমান বোলিং করার সময়। নিজের আইপিএল অভিষেকে কাটার দিয়ে মুস্তাফিজ তাঁদের বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন।

রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর এই দুই মারকুটে ব্যাটসম্যান হায়দরাবাদ সানরাইজার্সের নাকের জল-চোখের জল রীতিমতো এক করে ছেড়েছেন। মাত্র ১৪.৩ ওভারে ১৫৭ রানের টর্নেডো-জুটি গড়েছিলেন। বলে বলে চার-ছক্কা। মুস্তাফিজই শুধু ভোগাতে পেরেছেন মড়া উইকেটেও বলকে প্রাণ দিয়ে।

ক্রিকইনফো তাদের আরেকটি প্রতিবেদনে বড় অংশজুড়ে মুস্তাফিজকে নিয়েই লিখেছে। এরই মধ্যে সবার মুখে মুখে ছড়ানো মুস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারটি নিয়ে লিখেছে, ‘ওই ছয়টি বল আরও প্রমাণ হয়ে থাকল এই ২০ বছর বয়সী বাংলাদেশি ফাস্ট বোলার বড় ম্যাচের কঠিন মুহূর্তগুলোই বরং বেশি উপভোগ করেন। নিজের আইপিএল অভিষেকেই তিনি তাঁর অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নারকে ছক বদলাতে বাধ্য করালেন, মিড অফের খেলোয়াড়টিকে তুলে আনলেন ভেতরে। কাটার ছুড়লেন, ৮২ রানে ব্যাট করতে থাকা ডি ভিলিয়ার্স রীতিমতো বোকা বনে গেলেন। পরের বলেই শেন ওয়াটসনকেও ফেরালেন। দাঁড়িয়ে গেলেন হ্যাটট্রিকের সামনে। আরও একবার তিনি নিজেই সাজালেন নিজের ফিল্ডিং।

ভারতের শীর্ষ দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া কালকের ম্যাচের পাঁচটি আলোচিত মুহূর্তে রেখেছে মুস্তাফিজের ‘আলো ছড়ানো অভিষেক’কেও। পত্রিকাটি লিখেছে, ‘শুরুতেই মুস্তাফিজ দুর্দান্ত ছিলেন, প্রথম দুই ওভারে দিয়েছেন মাত্র ১০ রান। কিন্তু তাঁর সতীর্থরা রানের বন্যা বইয়ে দিলেন, ডানে-বাঁয়ে-সামনে সবদিক দিয়ে। ভুবনেশ্বর আর কর্ণ শর্মা তাদের আট ওভারেই দিয়ে বসলেন ১১৩ রান। নিজের প্রাপ্য পুরস্কারটা দ্বিতীয় স্পেলে মুস্তাফিজ পেলেন ডি ভিলিয়ার্সকে ফিরিয়ে দিয়ে, ততক্ষণ ডি ভিলি​য়ার্স অবশ্য যা ক্ষতি করার করেই ফেলেছে।

পত্রিকাটি এও উল্লেখ করেছে, টসের পরেই তাঁর অধিনায়ক ওয়ার্নার বলেছেন, ‘মুস্তাফিজ গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই নিজের সামর্থ্য দেখিয়েছে। ওকে পাওয়া মানে বড় কিছু পাওয়া।
এদিকে ভারতের আরেক শীর্ষ দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস মুস্তাফিজকে নিয়ে বিশেষ একটি ফিচার প্রকাশ করেছে। এক বছর আগেও এই তরুণ বোলারটিকে খুব কম মানুষ চিনত। এখন তিনিই বিশ্ব ক্রিকেটের বড় তারকাদের একজন। স্লোয়ার কাটার দিয়ে তাঁর এই অবিশ্বাস্য দ্রুত উত্থানকে পত্রিকাটি শিরোনাম করেছে: ‘স্লোয়ার ওয়ান ফাস্ট-ট্র্যাকস মুস্তাফিজুর রহমান টু স্টারডম’।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.