চট্টগ্রামে বিএনপির-নেতাকর্মীরা পালিয়ে বেড়চ্ছে !

গোলাম সরওয়ার : মামলা ও পুলিশি অভিযানের কারনে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র তৃনমুল পর্যায়ের সাংগঠনিক অবস্থা। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ড ও ১৬ থানার বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের অন্তত পাঁচ হাজার নেতাকর্মী মামলায় আসামী হয়ে এখন ঘরছাড়া। এতে তৃনমুল পর্যায়ে সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ধ্বস নেমেছে দলটির। দলের বিভিন্ন নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারী শুরু হওয়া টানা অবরোধ হরতালের পর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যন্ত চার মাসে নগরীর ১৬ থানায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রায় শ’খানেক মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামী করা হয়েছে প্রায় ৫ হাজার নেতাকর্মীকে। এর মধ্যে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী বর্তমানে কারাগারে আছেন। নগর বিএনপির সাধারন সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন,’নগরের বিভিন্ন থানায় পাঁচ হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে শ’খানেক মামলা আছে। এর মধ্যে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মী কারাগারে আছেন। মামলায় জর্জরিত নেতাকর্মীদের কারনে দলের সাংগঠনিক কর্মকান্ডে ধ্বস নেমেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,’ সমস্যা তো কিছুটা হচ্ছে। তবে এর একটা ইতিবাচক দিক আছে। তা হলো, মামলা-কারাগার থেকে নেতাকর্মীরা রাজনৈতিক শিক্ষা নেবেন। সামনে তারা জামিনে মুক্ত হলে তাদের মনোবল বৃদ্ধি পাবে, চাঙ্গাভাব চলে আসবে। সংগঠনও শক্তিশালী হবে। দলীয় সুত্র মতে, নগরীর থানা ওয়ার্ডের নেতাকর্মীদের মামলার আর্থিক খরচ বহন করছেন নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারন সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন। এসব মামলার কারনে নগরের থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীরা গত চার মাস ধরে ঘরছাড়া হয়ে আছে। নেতাকর্মীরা মাঠে না থাকায় গত চার মাস ধরে এমনকি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও নেতাকর্মীদের কোন সাংগঠনিক তৎপরতা ছিল না। জানা গেছে, চেষ্টা তদবির করলেও আদালত থেকে জামিন মিলছে না। কারাগারে যারা আছেন তারা তো বটেই, যারা ঘরছাড়া তারাও মানবেতর জীবন যাপন করছেন। বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ডের দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৫ জানুয়ারী শুরু হওয়া লাগাতার অবরোধ হরতালে সহিংসতার ঘটনায় নগরের প্রতিটি থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৭-৮টি মামলা রয়েছে। আর এসব মামলার প্রতিটিতে ৩শ’ থেকে ৪’শ জনকে আসামী করা হয়েছে। বন্দর থানা এলাকার একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, ৫ জানুয়ারী শুরু হওয়া অবরোধ হরতাল কর্মসুচীকে কেন্দ্র করে শুধুমাত্র বন্দর থানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে ৭টি। এসব মামলার প্রতিটিতে ৩০০-৪০০ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। কোতোয়ালী থানার দায়িত্বশীল নেতা বলেন, কোতোয়ালী থানায় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৫ জানুয়ারীর পর থেকে ১৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলার এজাহারে ২০ থেকে ৩০ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও ৫০ থেকে ১০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এই অজ্ঞাতনামা তালিকাটিই হচ্ছে বর্তমানে বিষফোঁড়া। যে কোন কর্মীকে ধরেই গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে অজ্ঞাতনামা আসামী তালিকা মতো। জানা গেছে, নগরীর থানা-ওয়ার্ড পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা মনে করেন, এ মুহুর্তে কঠোর আন্দোলন কর্মসুচী না দিয়ে সংগঠনকে তৃনমুল থেকে গোছানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ লক্ষ্যে যেসব নেতাকর্মী মামলার কারণে পলাতক রয়েছেন তাদের জামিনে মুক্ত করতে হবে। তারা জামিনে মুক্ত হলে নিষ্প্রান সংগঠন প্রাণ ফিরে পাবে। নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হয়ে আবার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়বে। পাহাড়তলী থানা বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা জানান, ৫ জানুয়ারীর পর পাহাড়তলীতে ৯টি হয়েছে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। এতে প্রায় ৩শ নেতাকর্মীকে আসামী করা হয়েছে। মামলার কারনে নেতাকর্মীরা কেউ বাসায় থাকতে পারছে না। তিনি বলেন,’অন্যদের কথা কি বলবো, আমি নিজেও ঘরছাড়া। নেতাকর্মীরা মামলায় বিপর্যস্ত হওয়াতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। এ বিএনপির নেতা আরও বলেন, নতুন করে আন্দোলন কর্মসুচী দেয়ার আগে যেসব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তাদের জামিনে মুক্ত করতে হবে। না হলে নেতাকর্মীরা ভয়ে মাঠে নামবে না। কর্মসুচিও সফল হবে না। সিইপিজেড থানা বিএনপির দায়িত্ব প্রাপ্ত এক নেতা বলেন, এ থানা এলাকার শত শত নেতাকর্মী ঘরছাড়া। সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও তারা এলাকায় ফিরতে পারেনি। তাই এ মুহুর্তে নতুন করে আন্দোলন কর্মসুচী না দিয়ে মামলার জালে আটকা পড়া নেতাকর্মীদের মুক্ত করতে হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,’জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা অনেক সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন। কারন তাদের অনেককেই পুলিশ চেনে না। আবার শহরে দায়িত্বশীল জামায়াত শিবির নেতাদের অনেকের বাড়িঘর গ্রামাঞ্জলে। ফলে তুলনামুলক জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীদের গ্রেফাতারের সংখ্যাও কম। নগরের দায়িত্বশীল এক জামায়াত নেতা বলেন,’ বিএনপি-জামায়াতের মুখ চেনা কোন নেতা বাদ নেই। টপ টু বটম মামলার জালে বন্ধি। হয় কারাগারে, না হয় পালিয়ে বেড়ানো জীবন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.