রাঙামাটিতে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে সম্মাননা প্রদান

জিয়াউল হক, রাঙামাটি  :   পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য এবারের স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলী ও রাঙামাটির শহীদ ৮জন মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সম্মাননা জানানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৮এপ্রিল) বিকেলে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সম্মেলন কক্ষে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ এ সম্মাননা প্রদান করে।

অনুষ্ঠানে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক দীপংকর তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে রাঙামাটির নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি, মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধে সকল শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।

সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি দীপংকর তালুকদার শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীর স্বাধীনতা পদক প্রাপ্তির প্রসঙ্গ তুলে বলেন, এই অর্জন পুরো পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীর। এই পদক পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানিত করেছে। তিনি আরো বলেন, এখন সময় এসেছে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষনের। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রকাশসহ বধ্য ভূমি চিহ্নিত করে তা সংরক্ষণ করার চেষ্টা চলছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে জাদুঘর স্থাপন করা হবে। যেখানে থাকবে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আলীসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যবহৃত সামগ্রী। দীপংকর তালুকদার বলেন, আগামী প্রজন্মের জন্য শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করা হবে সড়ক, বিদ্যালয়, কলেজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং প্রকাশ করা হবে পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসসমৃদ্ধ গ্রন্থ।

আনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদ সরিক্ষত আসনের সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা, জেলা প্রশাসক সামুসুল আরেফিন, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।

মুক্তিযোদ্ধা শহীদ পরিবারের পক্ষে বক্তব্য রাখেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীর কন্যা নাজমা আক্তার, শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল শুক্কুরের ছোট ভাই এমদাদুল হক, খাগড়াছড়ি জেলার মুক্তিযোদ্ধা রণ বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা, বান্দরবানের প্রীতি কান্তি ত্রিপুরা, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব সুনীল কান্তি দে। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের সহ-সভাপতি মাহাবুবুর রহমান।

অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ফিরোজা বেগম চিনু বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ৪৫বছর পর হরেও পার্বত্য চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষনের অত্যন্ত জরুরী। কেননা দেশকে এগিয়ে নিতে হলে সঠিক ইতিহাসের মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলতে হবে। আর এজন্য মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়েছে অনেক আগে এখন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস রক্ষায় তা সংরক্ষনের জন্য স্বপক্ষের লোকজনদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আলীর কণ্যা নাজমা আক্তার তার অনুভুতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অত্যন্ত আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, তার বাবার প্রাপ্ত স্বাধীনতা পদকসহ সমস্ত কিছু অর্জন রাঙামাটিবাসীর। তিনি রাঙামাটি আব্দুল আলী একাডেমীর কাছে সবকিছু উৎসর্গ করে তার একটি শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য রাঙামাটির বাসীর প্রতি আহ্বান। তার শেষ ইচ্ছা তার মৃত্যুর পর তাকে যেন শহীদ আবদুল আলী একাডেমীর একপ্রান্তে যাতে দাফন করা হয়। রাঙামাটির নাগরিক সমাজ এ সময় দাড়িঁয়ে তার এই ইচ্ছার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।

অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। এসময় শহীদ পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন।

এ বিভাগের আরও খবর

Comments are closed.