রমজানের আগে বাড়ছে ভোগ্যপণ্যের দাম…

0

মো. শহিদুল ইসলাম,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পাইকারী বাজার চাক্তাই,খাতুন গঞ্জে ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে রমজানের আগে বেড়েই চলেছে ভোগ্যপণ্যের দাম। এক সপ্তাহের ব্যবধানে চাউল,তেলে,ছোলা, চিনি, ডাল, আদারসহ প্রতিটি পণ্যের দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন চাহিদার চেয়ে আমদানী কম থাকায় দাম বাড়ছে। শনিবার চাক্তাই ও খাতুন গঞ্জে গিয়ে জানাগেছে, গত এক সপ্তাহে আগে পাইকারি বাজারে যে ছোলার দাম ছিল কেজি প্রতি ৪৫-৪৮ টাকা। সেই ছোলা ১২ টাকা বেড়ে গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬০-৬২ টাকায়। অন্যদিকে ইক্রোন ও আস্টোলিয়ার উন্নত মানের ছোলা বিক্রি হয়েছিল ৬০ টাকা। সেটি বেড়ে ৭০-৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেটি খুচরা বাজারে ৮৩-৮৫ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এদিকে ছোলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সকল প্রকার ডালের দামও। সপ্তাহ আগে ভালো মানের চিকন মসুর ৯৮ বিক্রি হয়ে আসলেও তা বেড়ে ১০৮ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১১৫ টাকা ১২০ টাকায়। আর খেশারি ডাল ৩৮ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪২ টাকা। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকার কাছাকাছি। মটর ডাল ৩৬ টাকা থেকে ৪০-৪২ টাকায়। সপ্তাহ আগে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ২৭-২৮ টাকায়। গত সপ্তাহের তা বেড়ে বিক্রি হয়েছিল ৩০-৩১ টাকা দরে। আবার উন্নতমানের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৩৩ টাকায়।বেড়ে চলেছে আদার দাম। দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ৯০ টাকা থেকে বেড়ে বর্তমানে বিক্রি পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০-১৩৫ টাকার বেশি দরে। বেড়ে চলেছে চিনির দাম। ৫০ কেজি ওজনের বস্তা প্রতি চিনির দাম দুই সপ্তাহ আগে ছিল ১ হাজার ৭৫৫ থেকে ১ হাজার ৭৬০ টাকা। সেই চিনি দাম এখন এক হাজার ৮৫০ টাকা। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ৯৮ টাকা বেড়েছে। তবে গত দু’দিন আগে সয়াবিনের দাম বাড়লেও গতকাল শনিবার তা আবার কিছুটা কমেছে। খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা থেকে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকায়। সুপার পাম বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। ৫ লিটার ওজনের বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৪৫৫-৪৬০ টাকায়। রূপচাঁদা ব্যান্ডের সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ৪৭৫ টাকায়। তীর ব্যারেø সয়াবিন ৪৬০ টাকায়। এবিষয়ে চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক সৈয়দ ছগির আহম্মদ বলেন, আন্তজার্তিক বাজরের ভোগ্যপণ্যের দাম পাশাপাশি আমদানী কম থাকায় দাম বাড়ছে। পর্ণ্য মজুদের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, এসব পণ্য আগে থেকে আমদানী করে গোদামে রাখায়। সেখান থেকে পাইকারী ও খুচরা বাজারের বিক্রি জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। অন্যদিকে কয়েক মাস চালের বাজার কম থাকলেও এপ্রিলের শেষ দিক থেকে দেশি জাতের চালেরসহ সব চালের দাম বস্তা প্রতি প্রায় ৫০-৬৫ টাকা বেড়েছে। পাইকারি বাজারে জিরাশাইল চাল বস্তা প্রতি মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮ শ থেকে ১৯ শ টাকা। নাজির শাইল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৬শ টাকায়। পারি সিদ্ধ ১ হাজার ৫শ টাকা। পাইজাম সিদ্ধ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭শ টাকা। তবে নতুন জাতের ধান বাজারে আসতে শুরু করলে চালের দাম কমে আসবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওমর আজম। মধ্যস্বত্বভোগী ও মজুতদাররা কৌশলে রমজানের আগে থেকে ক্রমান্বয়ে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিদের। তারা বলছেন রমজান মাস আসার দেড়-দুই মাস আগে থেকে নিত্য প্রয়োজনীয় ও ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তি দামের প্রভাব ভোক্তাদের উপর চাপ পড়ছে। তবে পাইকারি ব্যবসায়ীদের দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দর বৃদ্ধির কারণে স্থানীয় বাজারেও দাম বেড়েছে। এদিকে গত বুধবার ২০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ- টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) দ্বাদশ বিশ্ব মেট্রোলজি দিবস উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আসন্ন রমজানে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পাঁয়তারা করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে ঘোষণা দেন। একই অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন বলেন, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। রমজানের আগে পাঁচটি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে। এর আগে বাণিজ্যমন্ত্রী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, রমজানে সকল প্রকার পণ্যের দাম সাধারণ মানুষের নিয়ন্ত্রণের থাকবে। তবে মন্ত্রী, সচিব ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ারি উচ্চারণের পরও ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে রমজানের অন্যতম পণ্যসামগ্রী। ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, অসাধু ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট রমজানের আগে পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে গ্যাপ সৃষ্টি হয়েছে বলেও দাবি সংগঠনটির।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.