সাতক্ষীরার ২৭ যুবক নিখোঁজ

0

অবৈধভাবে সমুদ্রপথে মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে কলারোয়া উপজেলার একটি গ্রামের ১২ জনসহ ২৭ যুবক নিখোঁজ রয়েছেন আট মাস ধরে। জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি দপ্তর নিখোঁজের এই সংখ্যা নিশ্চিত করেছে।
একটি দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে ওই ব্যক্তিরা মালয়েশিয়ায় যাওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে গিয়েছেন। কিন্তু তারপর থেকে তাঁদের বিষয়ে কিছু জানতে পারেনি স্বজনেরা।
কলারোয়া উপজেলার কেশিয়াডাঙ্গা গ্রামের আবদুল খালেক জানান, উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আবদুল লতিফ ও মানিকনগর গ্রামের মো. আবদুল্লাহ তাঁর ছেলে সজিবুর রহমানসহ তাঁদের পাশের গ্রামের আট যুবককে মালয়েশিয়ায় ভালো চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে ঢাকায় নিয়ে যান। এ জন্য জনপ্রতি তাঁদের দিতে হয় ৬০ হাজার টাকা। মালয়েশিয়ায় পৌঁছানোর পর জনপ্রতি আরও ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা।
২০১৩ সালের ১৩ অক্টোবর একই উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের ১২ ব্যক্তি মালয়েশিয়ায় যেতে গিয়ে এখনো নিখোঁজ রয়েছেন। নিখোঁজ আজমল মোড়লের বাবা সিরাজুল ইসলাম জানান, ‘জমি বিক্রির তিন লাখ টাকা ব্যয়ে একমাত্র ছেলেকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়েছি। কিন্তু এখন ছেলেরই খোঁজ মিলছে না।’
কলেজপড়ুয়া একমাত্র ছেলে আরিফ হোসেনের খোঁজ না পেয়ে বুক চাপড়াচ্ছেন মা সালেহা খাতুন। নিখোঁজ সেলিমুল আজমের পিতা আরশাদ আলী জানান, তাঁর ছেলের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
একমাত্র ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আশায় দিন গুনছেন এক যুগ আগে স্বামী হারানো সাইফুলের মা নাসিমা খাতুন। আরও নিখোঁজ রয়েছেন সাহেদ আলী বিশ্বাস, মোতাহার হোসেন, আল আমিন, আবদুস সাত্তার, কবিরুল ইসলাম, বাবু সানা, আবদুর রহিম ও রাজু হোসেন।
কক্সবাজার থেকে পালিয়ে আসা কেশিয়াডাঙ্গা গ্রামের লিটন হোসেন জানান, ‘বিমানে টিকিট পওয়া যাচ্ছে না’—এই বলে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় কক্সবাজারে। সেখান থেকে ট্রলারযোগে তাঁদের মালয়েশিয়ায় যেতে হবে বললে তিনিসহ একই গ্রামের ফারুক হোসেন, নজরুল ইসলাম ও ইদ্রিস আলী পালিয়ে আসেন। ট্রলারযোগে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে রওনা দেন শহীদুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর হোসেন, সুমন হোসেন ও সজিবুর রহমান।
নিখোঁজ শহীদুল ইসলামের পিতা শরীয়তুল্লাহ সানা বলেন, ‘জমি বিক্রি করে দালাল আবদুল লতিফের হাতে টাকা দিয়েছি। আট মাস ছেলের খোঁজ না পেয়ে বাড়ির সবাই কান্নাকাটি করছে। বাকি তিনজনের পরিবারের অবস্থাও একই।’
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি দপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ মুস্তাফিজুর রহমান জানান, অবৈধভাবে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে গিয়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনেরা বিভিন্ন সময় তাঁদের কাছে আবেদন করেছেন উদ্ধারের জন্য। এমন ২৭ জনের তথ্য তাঁদের কাছে আছে বলে জানান তিনি।
কলারোয়া থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, ‘অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর পর তরুণদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে শুনেছি। কিন্তু থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। তবে সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম আদালতে (কলারোয়া) উপজেলার শুভংকরকাটি গ্রামের আবদুল খালেক ১০ মে একটি মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে পরদিন মামলাটি গ্রহণ করি। এতে উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আবদুল লতিফ ও মানিকনগর গ্রামের মো. আবদুল্লাহকে আসামি করা হয়। কিন্তু মামলাটি মানব পাচার আইনে নির্দিষ্ট ধারায় হয়নি, হয়েছে প্রতারণা ও অপহরণ করার অভিযোগে।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.