সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সংসদে গৃহীত রাষ্ট্রপতির সম্মতি

0
স্টাফ রিপোর্টারঃ-  স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সংসদে গৃহীত সংবিধানের ১০০তম সংশোধনীতে সম্মতি দিয়েছেন দেশটির রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। আগামী শনি ও রবিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রাক্কালে গত ২৮ মে তিনি ওই সম্মতি দেন। সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে রাজ্যসভা ও লোকসভায় বিল অনুমোদনের পর ভারতের অন্তত অর্ধেক রাজ্যের সংসদে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে বলে মনে করা হলেও তার প্রয়োজন নেই বলেই সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর এরই মধ্যে গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় সংবিধান সংশোধন প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। স্থল সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ৪১ বছর পর আগামী শনিবার মোদির সফরের প্রথম দিনই ওই চুক্তি বাস্তবায়নের বিষয়ে ঘোষণাপত্র স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সব দলকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যার সমাধানকে বার্লিন দেয়াল ভাঙার মতো বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহাসিক ঘোষণা বলে অভিহিত করেছেন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার ‘মোদির ঢাকা সফরে স্থলসীমান্ত প্রাধান্য পাবে’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করার কাজ ভারত সুসম্পন্ন করবে- ঢাকা সফরে এমন জোরালো বার্তা দেবেন মোদি। এটিই এ সফরের মূল প্রতিপাদ্য। নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভারতকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে হাসিনা ভালো প্রতিবেশীর চেয়েও বেশি। এখন ভারতের প্রতিদান দেওয়ার পালা।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তাঁর প্রথম বাংলাদেশ সফরে দুটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল উপহার নিয়ে আসছেন। এর একটি হলো ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় রাষ্ট্রীয় সফরকালে জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণের কম্প্যাক্ট ডিস্ক (সিডি)। অন্যটি হলো স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের সংবিধান সংশোধনের জন্য বিল নিয়ে সংসদের উভয় কক্ষে সদস্যদের আলোচনার ট্রান্সক্রিপ্ট। আগামী শনিবার বিকেলে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনার হাতে ঐতিহাসিক ওই প্রামাণ্য দলিল দুটি হস্তান্তর করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের সেই ঐতিহাসিক ছবি উপহার দেবেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সাথী ও দুর্দিনের আশ্রয়দাতা ভারতের মহান জনগণ ও সরকারের আমন্ত্রণে বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতা সফরে যান। সেদিন কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে ভারতের তৎকালীন ইতিহাসের বৃহত্তম জনসভায় বঙ্গবন্ধু ভারতবাসীকে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছিলেন কবিগুরুর ভাষায়। কবিতার অংশ উদ্ধৃত করে তিনি বলেছিলেন, ‘নিঃস্ব আমি রিক্ত আমি/দেবার কিছু নাই/আছে শুধু ভালোবাসা/দিয়ে গেলাম তাই।’
গত মে মাসে স্থলসীমান্ত বিল নিয়ে সংসদে আলোচনার সময় ভারতের সংসদ সদস্যরা বাংলাদেশ নিয়ে আবেগময় বক্তব্য রেখেছেন। বঙ্গবন্ধুর প্রতি সম্মান জানাতে গিয়ে তাঁকে নিয়ে গান ‘শোনো, একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি…’ উল্লেখ করে বক্তব্য রেখেছেন।
ভারতের সংবিধানের ১০০তম সংশোধনীর প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পথ সুগম হলো। একই সঙ্গে ছয় দশক ধরে নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত ছিটমহলবাসীরও মুক্তির স্বাদ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হলো।
১৯৪৭ সাল থেকেই বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে স্থলসীমান্ত সমস্যার সমন্বিত সমাধানে পৌঁছার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ১৯৫৮ সালের নেহরু-নুন চুক্তি এবং ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে সীমানা জটিলতার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে ওই দুই চুক্তিতে প্রায় ৬ দশমিক ১ কিলোমিটার অচিহ্নিত সীমান্ত, ছিটমহল বিনিময় ও অপদখলীয় ভূমির বিষয়ে কোনো সমাধান ছিল না। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে সই হওয়া ১৯৭৪ সালের স্থল সীমান্ত চুক্তির প্রটোকলে সীমান্তের সব সমস্যার সমাধান রয়েছে। ওই প্রটোকলে সীমান্তে অচিহ্নিত অংশগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ছিটমহল এবং অপদখলীয় ভূমি সমস্যার সমাধান করে স্থায়ী সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। এর আওতায় বাংলাদেশের ভেতর থাকা ভারতের ১১১টি ছিটমহল (১৭ হাজার ১৬০.৬৩ একর) বাংলাদেশকে দেবে ভারত। অন্যদিকে ভারতের মধ্যে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল (সাত হাজার ১১০.০২ একর) বাংলাদেশ দেবে ভারতকে। অপদখলীয় ভূমি বিনিময়ের ফলে ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে দুই হাজার ৭৭৭.০৩৮ একর জমি পাবে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ভারতের কাছ থেকে পাবে দুই হাজার ২৬৭.৬৮২ একর।
এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.