সিটিনিউজবিডি : চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার একটি সার কারখানার ট্যাংক ফেটে ছড়িয়ে পড়া অ্যামোনিয়া গ্যাসের ঘনত্ব কমে এসেছে বলে দাবি করেছে ফায়ার সার্ভিস।
সোমবার রাত ১০টার দিকে কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (সিইউএফএল) সংলগ্ন ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) সার কারখানায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
এতে অসুস্থ হয়ে পড়া মোট ৫২ জনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসতাপালে ভর্তি করা হয়। তাদের মধ্যে নয়জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছে।
ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
ডিএপি সার কারখানাটি ড্যাপ নামেও পরিচিত। যেখানে দুটি ইউনিট ড্যাপ-১ ও ড্যাপ-২ আছে।
এই কারখানার পাশেই কাফকো ও সিইউএফএল সার কারখানা। নদীর অপর পাড়ে শাহ আমানত বিমানবন্দরসহ চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
ফায়ার সার্ভিস ও কারখানার কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ড্যাপ-১ এর ৫০০ মেট্রিক টন এমোনিয়া গ্যাস ধারণ ক্ষমতার ট্যাংকটিতে ৩০০ মেট্রিক টনের মতো গ্যাস ভরার পর ওই দুর্ঘটনা ঘটে।
কারখানায় কাছাকাছি তিনটি ট্যাংকের একটিতে দুর্ঘটনা ঘটলেও বাকি দুটি ঠিক আছে বলে জানিয়েছেন আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক জসিম উদ্দিন।
বিস্ফোরণে ট্যাংকটির একটি অংশ ফেটে গেছে বলে চট্টগ্রাম আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা আবুল কালামের ভাষ্য।
“ট্যাংকে আর গ্যাস নেই। সেখানে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় অ্যামোনিয়া ছিল। বিস্ফোরণে সেখান থেকে ছড়ানো গ্যাস আশাপাশে ঘন কুয়াশার মতো ভেসে ছিল।”
কীভাবে গ্যাস সরানো হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “গ্রাউন্ড মনিটর এবং টুইন ওয়ান গ্রাউন্ড ফেইজের মাধ্যিমে পানি ছিটানো হচ্ছে। এতে সেই কুশায়ার ঘনত্ব কমতে কমতে রাত ৪টার দিকে ৬০ শতাংশে আসে। সকাল ৮টা নাগাদ ১০ শতাংশে নেমেছে।”
সকাল ১০টা নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে ধারণা করছেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, দুর্ঘটনার পর অ্যামোনিয়া গ্যাস কর্ণফুলী নদীর অপর তীরের পতেঙ্গা, ইপিজেড, বন্দরসহ আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
বাতাসে অ্যামোনিয়া ছড়ানোর প্রভাব সম্পর্কে মহসিন কলেজের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইদ্রিস আলী বলেন, বাতাসে অ্যামোনিয়া ছড়ালে এর প্রভাবে মাথায় ঝিমুনি, বমি বমি ভাব ও শ্বাসকষ্ট হতে পারে।
এ অবস্থায় নিরোধক ‘মাস্ক’ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
চমেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির নায়েক আব্দুল হামিদ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বলেন, “হাসপাতালে মোট ৫২ জন ভর্তি হয়েছিলেন। নয়জন চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন। এখন আছে ৪৩ জন।”
এর আগে ফাঁড়ির এএসআই পংকজ বড়ুয়া জানান, অ্যা মোনিয়া গ্যাসে হয়ে অসুস্থ ৪৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ১৭ জন আনসার, ১২ জন এপিবিএন সদস্যি এবং বাকিরা সাধারণ মানুষ।
অসুস্থ এপিবিএন সদস্যরা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্ব পালন করছিলেন। আর আনসার সদস্যরা ছিলেন ওই কারখানা ও পাশের কাফকো সার কারখানার।
চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ড্যাপ-২ এর যান্ত্রিক বিভাগের শ্রমিক মো. মইনুল বলেন, “ড্যাপ-১ এর একটি ট্যাংক থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে আমরা বের হই এবং ঝাঁঝালো গন্ধ পাই। এক পর্যায়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ি।”
খবর পেয়ে অ্যামোনিয়া গ্যাসে আক্রান্তদের দেখতে রাতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিন।
তিনি বলেন, গ্যাসে আক্রান্ত কারও অবস্থা তেমন আশঙ্কাজনক না। কারখানার আশপাশের এলাকার লোকদের সতর্ক থাকতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তদন্ত কমিটি
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মেজবাহ উদ্দিনের নির্দেশে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মমিনুর রশিদকে।
কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন আনোয়ারা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম বাড়ৈ ও কর্ণফুলী থানার ওসি রফিকুল ইসলাম।