দেশে ফিরলো ১৫০ জন অভিবাসী

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া(কক্সবাজার) : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেকিবনিয়া বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের ইমিগ্রেশন বিভাগের সাথে এক পতাকা বৈঠক শুরু অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সাড়ে ১০ টার দিকে শুরু হয়ে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত প্রায় ৩ ঘন্টা ব্যাপী এ বৈঠক চলে। উভয় পক্ষের মধ্যে ফলপ্রসু আলাপ আলোচনা হয়েছে বলে বিজিবি জানিয়েছেন। দুপুর দেড় টার দিকে বৈঠক শেষে মিয়ানমারে উদ্ধার করা ১৫০ বাংলাদেশী অভিবাসীকে ফেরত দেওয়া হয় বলে বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল খালেকুজ্জামান পিএসসি জানিয়েছেন।

বাংলাদেশের পক্ষে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন বিজিবি ১৭ ব্যাটালিয়ান কমান্ডার লেঃ কর্ণেল সাইফুল আলম, উপ অধিনায়ক মেজর ইমরান উল্লাহ সরকার, মেজর আমিনুল ইসলাম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি বিএম জামাল হোসেন, অভিবাসন সংস্থার প্রতিনিধি ওমর ফারুক, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মোশারফ হোসেন, জেলা পুলিশের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফাইল আহমদ ও মিয়ানমারের পক্ষে ছিলেন মংডু ইমিগ্রেশন বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর সো নেইং, মিয়ানমার ইমেগ্রেন কর্মকর্তা, বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) কমান্ডিং অফিসার লেঃ কর্ণেল কই তুই জা সহ ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল। বৈঠকে বিজিবির কক্সবাজার সেক্টর কমান্ডার কর্ণেল মোঃ খালেকুজ্জামান ও মিয়ানমারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদপ্তরের উপ-মহা পরিচালক নে পে ট পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলটি সাংবাদিকদের সৌজন্যে অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রেস ব্রিফিং দেন। এ সময় প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

বিজিবি প্রেস ব্রিফিংকালে সেক্টর কমান্ডার খালেকুজ্জামান বলেন, ২০৮ জন অভিবাসীর মধ্যে ১৫০ জনকে বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবে সনাক্ত হওয়ায় সরকার প্রাথমিক ভাবে তাদেরকে ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুতি নিলে দীর্ঘ ১৭ দিন পর গতকাল সোমবার সকাল ১০ টায় মিয়ানমারের ঢেকিবনিয়ায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে তাদের ফেরত আনা হয়। কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন, ফিরে আসা এসব অভিবাসীদের সঠিক নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাইয়ের পর তাদেরকে নিজ নিজ পরিবারের কাছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হবে। এসব অভিবাসীদের পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে কারা সমূদ্রের মাঝ পথে ফেলে দিয়েছে সেই সব হোতাদের খুঁজে বের করারও নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক।

পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ বলেন, ফিরে আসা অভিবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আসল মানবপাচারকারী দালালদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান অব্যাহত রাখবে। এসময় উপস্থিত ছিলেন, সহকারী পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন মজুমদার, উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিল্লোল বিশ্বাস, উখিয়া সহকারী কমিশনার ভুমি এইচএম মাহফুর রহমান, উখিয়া থানার ওসি জহিরুল ইসলাম খান, ওসি তদন্ত হাবিবুর রহমান ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি দেওয়ান আবুল হোসেন।

ফিরে আসা ১৫০ জন অভিবাসীদের মধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলার ২৯, নরসিংদীর ৫৬, চট্টগ্রাম ৮, বান্দরবান ৯, ঝিনাইদাহ ১২, পাবনা ৫, চোয়াডাঙ্গা ৪, বাগেরহাট ৪, বিবাড়িয়ার ৬, সুনামগঞ্জ ৪, নারায়নগঞ্জ ২, টাইঙ্গাইল ৩, যশোর ২, হবিগঞ্জে ১, কুমিল্লা-১ ও নাটোরের ১ জন অভিবাসী রয়েছে।

এদের মধ্যে ঝিনাইদাহর ইসমাইল হোসেনের ছেলে মফিউর রহমান, মোঃ নিজামের ছেলে হারুন উর রশিদ, ওসেল বিশ্বাসের ছেলে মহসিন বিশ্বাস, ইসমত আলীর ছেলে মোঃ সোবহান, মকবুল মুল্লার ছেলে পলাশ, মোতালেব মন্ডলের ছেলে রফিকুল ইসলাম, রাহাজ উদ্দিন মন্ডলের আবুল কালাম, রজব আলীর ছেলে আব্দু রাজ্জাক, শরীফ বিশ্বাস ছেলে দুলাল, ইসমাইল সরদারের ছেলে আব্দুল মালেক, রাসেদ মন্ডলের ছেলে ছব্বির হোসেন।

সুনামগঞ্জের মোহাম্মদ উল্লাহর ছেলে সাহেদ উদ্দিন, আহমদ আলীর ছেলে রমজান আলী, সোনাপুর আলীর ছেলে শওকত আলী, মোঃ ইদ্রিস আলীর ছেলে আলী হোসেন,
বিবাড়িয়ার ছিদ্দিক সরকারের ছেলে আনোয়ার হোসেন, হোসেন মিয়ার ছেলে এরশাদ। বান্দরবান জেলার ইকবালের ছেলে জাহিদ ইসলাম, নূরুল হকের ছেলে রহিম উল্লাহ, মনির আহমদের ছেলে আব্দু ছবি, মোঃ শফির ছেলে নূরুল হক, কুমিল্লা জেলার সোলতান আহমদের ছেলে রিদুয়ান, চাঁদপুরের ইউসুপ আলীর ছেলে কালাম, রাজবাড়ির আব্দুল খালেকের ছেলে সাইফুল ইসলাম, কক্সবাজার জেলার নূরুল ইসলামের রমিজ উদ্দিন, মোঃ সৌরভের ছেলে নূরুল হোসেন, মহসিন আলীর ছেলে সাকের, আসমত আলীর ছেলে সিরাজুল হক, জহির আহমদের ছেলে মিজানুর রহমান, ইমতিয়াছ আহমদের ছেলে আব্দুল খালেক, কাশেম আলীর ছেলে মোঃ রশিদ মিয়া, সেলিম হোসেনের ছেলে হামিদ হোসেন, রহমত আলীর ছেলে শাহাজান, আব্দুল জব্বারের ছেলে জসিম উদ্দিন, আব্দুর রহমানের ছেলে ইয়াছিন আরফাত, আমির হাওলাদারের ছেলে শহিদুল ইসলাম, দুলু মিয়ার ছেলে ইউসুপ খান, মোঃ হাসেমের ছেলে আবুল হোসেন, ফজল করিমের ছেলে একরাম, আব্দুল করিমের ছেলে ইকরাম, আব্দুল করিমের ছেলে সোহেল সরকার, মোঃ রাশেদের ছেলে ইদ্রিস, হাজী নূরুল হকের ছেলে ইমরান হোসেন, আহমদ আলীর ছেলে জসিম উদ্দিন, নুরুল ইসলামের ছেলে আব্দুস শুক্কুর, জিয়াবুল হকের ছেলে মিজানুর রহমান, মাহমুদুল করিমের ছেলে গিয়াস উদ্দিন, মৃত আবু তাহেরের ছেলে সাদ্দাম হোসেন, হাবিবুর রহমানের ছেলে সালামত উল্লাহ, শামশুল আলমের ছেলে মোক্তার হোসেন, মোঃ হাশিমের ছেলে নুরুল আবছার, সিরাজুল হকের ছেলে মুবিনুল হক, মৃত উলা মিয়ার ছেলে রফিক আলম, কালা মিয়ার ছেলে সাইফুল, টাইঙ্গাইলের আব্দুল করিমের ছেলে আব্দুল ছৈয়দ, আব্দুল জলিলের ছেলে উজ্জল হোসেন, জহির উদ্দিনের ছেলে সাহাদত হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা সাহাব উদ্দিনের ছেলে মোঃ হেলাল, উমর আলীর ছেলে হাসেম, সাহেদ আহমদের ছেলে লুকমান কবির, আলী আমজাদের ছেলে চাদ মিয়া, শহিদুল্লাহর ছেলে সেলিম উদ্দিন, বদিউল আলমের ছেলে মোঃ বাদশা, আব্দুল আলিমের ছেলে মোঃ জলিল, শাহ আলমের ছেলে মোঃ আরিফ, চুয়াডাঙ্গার ফিরোজ মন্ডলের ছেলে সাইফুল মন্ডল, সুমিত আলী ছেলে মোঃ আরিফুল ইসলাম, আব্দুরফ ফরাজির ছেলে শফিকুল ইসলাম, মফিউর রহমানের ছেলে মফিজুল হোসেন, নারায়নগঞ্জ জেলার আবু মিয়ার ছেলে রাসেল মিয়া ও নুরুল ইসলামের ছেলে মোঃ হালিম, নরসিংদীর সোনা মিয়ার ছেলে এবাদুল মিয়া, মুজিবুল মিয়ার ছেলে ফাহাদ মিয়া, আব্দুল হাসিমের ছেলে রুহুল আমিন, জহিরুল হকের ছেলে মেহেদী হাসান, সুজাউদ্দিনে ছেলে পারু মিয়া, তাজু মিয়ার ছেলে সালাম মিয়া, তারা মিয়া ছেলে নাহাম, ওহাব মিয়ার ছেলে সাগর, আব্দুল আওয়ালের জসিম উদ্দিন ও ওবাইদুল হাসানের ছেলে শামীম মিয়া।

এদিকে উদ্ধারকৃত অভিবাসীদের বিকেল সাড়ে ৫ টায় ৬টি বাসে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে আশ্রয় দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার উদ্ধারকৃত এসব অভিবাসীদের আদালতে তোলা হবে। আদালত জবানবন্দি গ্রহন শেষে এসব অভিবাসীদের স্ব-স্ব বাড়ি ঘরে ফিরিয়ে দেওয়া হবে বলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার শ্যামল কান্তি নাথ জানিয়েছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.