মিরসরাইয়ে ৩ যুগের বিএনপি কার্যালয় ভাঙ্গা হলো গভীর রাতে

0

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই : মিরসরাই উপজেলা বিএনপির ৩ যুগ ধরে ব্যবহৃত কার্যালয়টি গভীর রাতে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করেন, সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে মিরসরাই পৌর কর্তৃপক্ষ ভবনটির সম্মুখভাগ ও দক্ষিণ অংশ ভেঙ্গে দেয়। তবে মিরসরাই পৌরসভার মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলছেন, পৌরসভার জায়গার উপর নির্মিত ভবনটি ভাঙ্গার জন্য সাবেক মেয়র এম শাহজাহান ঠিকাদার নিয়োগ করেছিলেন। ওই ঠিকাদার কার্যালয়টি ভেঙ্গে ফেলে।

এদিকে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন তাদের উপজেলা কার্যালয় ভেঙ্গে দেওয়ার বিষয়ে মঙ্গলবার বিকালে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। মিরসরাই উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমিন ও সদস্য সচিব সালাহ্ উদ্দিন সেলিম স্বাক্ষরিত সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো এক লিখিত প্রতিবাদ লিপিতে তারা বলেন, ভবনটি ভেঙ্গে আওয়ামীলীগ যে প্রতিহিংসার রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন ভবিষ্যতে তার খেসারত দিতে হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাত প্রায় পোনে দুইটার সময় অর্ধ শতাধিক যুবকের উপস্থিতিতে একটি স্কেবেটর দিয়ে উপজেলা বিএনপির দোতলা ভবনটি ভাঙ্গার কাজ শুরু হয়। ১ ঘন্টার মধ্যে ভবনের সামনের অংশ ও দক্ষিণ পাশের দেয়াল ভাঙ্গা হয়। ঠিক ওই অবস্থাতেই এখনও ভেঙ্গে যাওয়া ভবনের বিভিন্ন অংশ পড়ে আছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে দরজা জানালা।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমিন জানান, ১৯৮০ সাল থেকে মিরসরাই ইউনিয়ন পরিষদের জায়গায় বিএনপির কার্যালয় ছিল। ২০০১ সালে মিরসরাই ইউনিয়ন পরিষদের সাথে প্রতি মাসে ৫শ টাকা ভাড়ার চুক্তি করে ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে দ্বিতল ভবন করা হয়। এরপর মিরসরাই সদরকে পৌরসভা ঘোষণা করা হলে পৌর কর্তৃপক্ষ সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জায়গাটি কিনে নেয়। টাকা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ অন্যত্র সরে যায়। এখন পৌরসভা আমাদেরকে কোন নোটিশ, ভবনের ক্ষতিপূরন না দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে প্রায় তিন যুগের ভবনটি ভেঙ্গে ফেলেছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি আইনগতভাবে মোকাবেলা করা হবে।
মিরসরাই পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও পৌর মেয়র গিয়াস উদ্দিন বলেন, ২০১১ সালে মিরসরাই সদর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মিরসরাই পৌর কর্র্তৃপক্ষ সকল স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিসহ ৩৮ শতক জায়গা ৯৪ লাখ টাকা দিয়ে কিনে নেয়। ওই সময় ইউনিয়ন পরিষদকে বিএনপির ভবনটির জন্যও ৯ লাখ টাকা পরিশোধ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপর উপজেলা বিএনপিকে তাদের কার্যালয় সরিয়ে নিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে নোটিশও দেওয়া হয়। তারা কার্যালয় সরিয়ে না নেওয়ায় সাবেক পৌর মেয়র ওই কার্যালয় ভাঙ্গার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করে। এখন ওই ঠিকাদার তাদের কাজ করছে। দিনে না ভেঙ্গে রাতে কেন ভাঙ্গা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঠিকাদার তাদের কাজ দিনে করবে না রাতে করবে সেটা ওই ঠিকাদারের বিষয়।
মিরসরাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে রাতের আঁধারে আওয়ামীলীগ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা জোরপূর্বক বিএনপির কার্যালয় গুড়িয়ে দিয়েছে যা অত্যন্ত ঘৃণিত ও ন্যাক্কারজনক ঘটনা।
ছাত্রদলের সহ-সভাপতি (চট্টগ্রাম বিভাগ) ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সরওয়ার উদ্দিন সেলিম বলেন, বর্তমান সরকার বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনকে ধ্বংস করতে সর্বদা তৎপরতা চালাচ্ছে, তারই বহিঃপ্রকাশ মিরসরাই উপজেলা বিএনপির কার্যালয় রাতের আঁধারে গুড়িয়ে দেওয়া। সভ্য সমাজে এমন কর্মকান্ডে আমরা হতবাক।
এদিকে রাতের আঁধারে বিএনপির কার্যালয় গুড়িয়ে দেওয়ায় পৃথক পৃথকভাবে তীব্র নিন্দাও প্রতিবাদ জানিয়েছেন উপজেলা বিএনপির আহবায়ক নুরুল আমিন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল আউয়াল চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, সদস্য সচিব সালাহ উদ্দিন সেলিম, বিএনপি নেতা আলা উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ আলমগীর, গাজী নিজাম উদ্দিন, বারইয়ারহাট পৌরসভা বিএনপির আহবায়ক দিদারুল আলম মিয়াজী, উপজেলা যুবদলের আহবায়ক শাহীনুল ইসলাম স্বপন, যুগ্ন আহবায়ক ইফতেখার উদ্দিন মাহমুদ জিপসন। এছাড়া প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানান উপজেলা বিএনপির আহবায়ক (একাংশ) ও সাবেক সভাপতি এম আলা উদ্দিন ও যুগ্ম আহবায়ক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাইন উদ্দিন মাহমুদসহ উপজেলা যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
এ বিষয়ে মিরসরাই পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাখের ইসলাম রাজু বলেন, বিএনপির কার্যালয় ভেঙ্গে ফেলার বিষয়টি ব্যাক্তিগতভাবে আমি অবহিত ছিলাম না। মেয়র এই ব্যাপারে আমার সাথে কোন আলোচনা করেনি। তবে কাউন্সিলরদের সাথে আলোচনা হয়েছে কি-না বলতে পারবো না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.