আবারও বিতর্ক করবিনের ছায়া মন্ত্রিসভা নিয়ে

0

অনলাইন ডেক্স : বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না জেরেমি করবিনের। এবার ছায়া মন্ত্রিসভার নিয়োগ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা করবিন শুক্রবার তাঁর ছায়া মন্ত্রিসভায় রদবদল শুরু করেছেন। এদিন পাঁচজনের মধ্যে নতুন করে দায়িত্ব বণ্টন করেন। এর মধ্যে খাঁটি বামপন্থী নেতা করবিন তাঁর একান্ত অনুগত বলে পরিচিত ডায়ান অ্যাবোটকে ছায়া স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদোন্নতি দিয়ে ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করেছেন।
সম্ভবত, যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে ডায়ান অ্যাবোটই প্রথম কোনো অশ্বেতাঙ্গ, যিনি এই পদে দায়িত্ব পালনের সুযোগ পাচ্ছেন। অভিবাসনের পক্ষে সরব ডায়ান অ্যাবোটকে ছায়া স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে বসানোর ঘটনা সরকারি দলের পাশাপাশি লেবার দলের মধ্যেও তুমুল সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।

সমালোচকেরা বলছেন, এই নিয়োগ প্রমাণ করে করবিন অভিবাসন ইস্যুতে যুক্তরাজ্যের মানুষের মনোভাব বুঝতে কতটা অক্ষম।

মানবাধিকার বিষয়ক দাতব্য সংস্থা লিবার্টির সাবেক পরিচালক স্বামী চক্রবর্তীকে ছায়া অ্যাটর্নি জেনারেল পদে নিয়োগ দিয়েছেন করবিন। যিনি কয়েক মাস আগেও রাজনীতি নিরপেক্ষ বাম ঘরানার মানুষ পরিচিত ছিলেন। চলতি বছরের শুরুতে লেবার দলের মধ্যে ইহুদি বিদ্বেষী মনোভাব নির্মূলে পরিচালিত তদন্তের নেতৃত্ব দেন তিনি। ওই তদন্তের পরপরই স্বামী চক্রবর্তীকে লেবার দলের পক্ষ থেকে হাউস অব লর্ডসের সদস্য করা হয়। আর এখন তাঁকে ছায়ামন্ত্রী সভায় অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনাকে দলে বামপন্থীদের অবস্থান শক্ত করার ইঙ্গিত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।

গত জুনে ছায়া মন্ত্রিসভার গণপদত্যাগে শামিল হয়ে করবিনকে ছেড়ে গিয়েছিলেন ২০১৫ সালে নবনির্বাচিত এমপি কিয়ার স্টারমার। করবিন এবার তাঁকে ব্রেক্সিটবিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে পুনরায় ছায়া মন্ত্রিসভায় ঠাঁই দিয়েছেন। তাঁর দায়িত্ব হবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে যুক্তরাজ্যের সম্পর্কের বিচ্ছেদের বিষয়ে কাজ করা। তাঁর নেতৃত্বের সমালোচক হওয়া সত্ত্বেও করবিন প্রভাবশালী রাজনীতিক নিক ব্রাউনকে ছায়া চিফ হুইপের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তাঁর এই নিয়োগ বাহবা কুড়ানোর পাশাপাশি সমালোচনারও জন্ম দিয়েছে। কেননা এ নিয়োগ দিতে গিয়ে করবিন রোজি উইনটারটনকে ছায়া চিফ হুইপের পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন, যিনি বিদ্রোহী এমপি এবং করবিনের মধ্যে সমঝোতায় ভূমিকা রাখছিলেন। রোজি উইনটারটনকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় দলের প্রভাবশালী এমপিদের অনেকে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, নিক ব্রাউনকে দেওয়ার মতো আরও অনেক পদই খালি ছিল।
অশ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়গুলোর সঙ্গে দলের সম্পর্ক দৃঢ় করার লক্ষ্যে মিনিস্টার ফর ডাইভার্স কমিউনিটি নামে একটি পদ তৈরি করেছেন করবিন। এই পদে আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ডন বাটলারকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
করবিন সমর্থকেরা ছায়া মন্ত্রিসভার এই রদবদলকে করবিনের সাহসী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আর বিদ্রোহী এমপিরা বলছেন, করবিনের এমন নিয়োগ দলীয় ঐক্যের বদলে বিভাজন বাড়াবে।

২০১৫ সালের জাতীয় নির্বাচনে লেবার দলের ভরাডুবির পরিপ্রেক্ষিতে দলীয় সদস্যদের বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে লেবার দলের হাল ধরেন জেরেমি করবিন। কিন্তু দলের প্রভাবশালী এমপিদের অনাস্থা আর বিরোধিতার মুখে এক বছরের মাথায় করবিনকে আবার নেতৃত্ব নির্বাচনের মুখোমুখি হতে হয়। গত মাসে অনুষ্ঠিত ওই নির্বাচনে করবিন আরও বড় জয় পেয়ে দলীয় নেতৃত্বে ফিরে আসেন। তৃণমূল সদস্যদের ব্যাপক সমর্থন আর দলীয় এমপিদের বিরোধিতার এই পরিস্থিতিতে করবিন দলকে কীভাবে ঐক্যবদ্ধ করেন তার ওপরই নির্ভর করছে লেবার দলের ভবিষ্যৎ। আর এ জন্যই তাঁর ছায়া মন্ত্রিসভার নিয়োগ নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সবার।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.