চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বাজেট ২২২৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা

0

গোলাম সরওয়ার : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের জন্য ২ হাজার ২ শত ২৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার বাজেট ঘোষনা করেছে। এ প্রস্তাবিত বাজেটে হোল্ডিং কর সহ কোন খাতে কোন ধরনের কর বৃদ্ধি করা ছাড়াই অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ, পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও বাসযোগ্য নান্দনিক চট্টগ্রাম নগরী প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করা হয়। একটি মডেল মেগাসিটি নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়নের অভিপ্রায়ে, বিশ্ব ইতিহাসে চট্টগ্রামকে ঐতিহ্যবাহী নগরী হিসেবে চট্টগ্রামবাসীর সর্বোচ্চ নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকরণ, পরিচ্ছন্ন, আলোকিত, উন্নত যোগাযোগ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বান্ধব, ক্লিন ও গ্রিন সিটির স্বপ্ন বাস্তবায়নকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
আজ ৯ অক্টোবর রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কে বি আবদুচ ছত্তার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ সাধারণ সভায় সিটি মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন আনুষ্ঠানিকভাবে এ বাজেট ঘোষনা করেন।
সভায় একই সাথে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের ৫ শত ৯২ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকার সংশোধিত বাজেটও অনুমোদন দেয়া হয়। বাজেটে নিজস্ব উৎস কর ও অভিকর থেকে ২৪২ কোটি ৪৬ লক্ষ ৫২ হাজার টাকা, হাল ও অভিকর ৫৫০ কোটি ৮৯ লক্ষ ৪৮ হাজার, অন্যান্য কর থেকে ২২২ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা, ফিস আদায় বাবদ ৬১ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা, জরিমানা বাবদ ৩০ লক্ষ টাকা, সম্পদ হতে অর্জিত ভাড়া ও আয় ৭২ কেটি ১২ লক্ষ টাকা, সুদ বাবদ ৫ কোটি টাকা, বিবিধ আয় থেকে ১৮ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা, ভর্তুকি বাবদ আয় ২৪ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা অর্থাৎ নিজস্ব উৎস থেকে প্রাপ্তি ১ হাজার ১ শত ৯৭ কোটি ৪২ লক্ষ টাকা। এ ছাড়াও ত্রাণ সাহায্য ২০ লক্ষ টাকা, উন্নয়ন অনুদান ৯ শত ৮৫ কোটি ১০ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য উৎস থেকে ৪২ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা সহ সর্বমোট ১ হাজার ২৮ কোটি ২৫ লক্ষ টাকা দেখানো হয়েছে।
বাজেট বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় চট্টগ্রামকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে পরিণত করা, নগরীর ছাত্রীদের এবং কর্মজীবী মহিলাদের যাতায়াতের সুবিধার জন্য বিশেষ রুটে ২০টি এসি বাস চালুকরণ. জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৯৯৫ সালে প্রস্তাবিত ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান এর যুগোপযোগী বাস্তবায়ন, নগরীর যানজট নিরসনে বাস-ট্রাক টার্মিনাল স্থাপন, কালুরঘাটে গার্মেন্ট পল্লি স্থাপন, অত্যাধুনিক ও উন্নত সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নগরভবন নির্মাণ, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ও ঠান্ডাছড়ি এলাকায় পর্যটনের উন্নয়ন, সাইক্লোন সেন্টার-সহ স্কুল নির্মাণ, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন প্ল্যান্ট স্থাপন, বাকলিয়া স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানের স্পোর্টস কমপ্লেক্স হিসেবে উন্নয়ন, জাইকার সহায়তার অত্যাধুনিক সলিড ওয়েষ্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবস্থার প্রবর্তন, নগরীতে বিদ্যমান অব্যবহৃত পাহাড়সমূহকে পরিকল্পিত উন্নয়নের আওতায় নিয়ে সেখানে বিনোদন ও পর্যটন, শিক্ষা, চিকিৎসা ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আবাসন সুবিধা হিসেবে গড়ে তোলা, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ২৬টি খাল খনন এবং প্রয়োজনীয় পাম্প হাউস-সহ স্লুইস গেইট নির্মাণ, কর্পোরেশনের সাগরিকা স্টোর এলাকার সামগ্রিক মাস্টার প্ল্যান তৈরি ও সেখানে আন্তর্জাতিক মানের বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণ, কর্পোরেশনের এলাকায় অবস্থিত আগ্রাবাদ ডেবা, পাহাড়তলী জোড়া দিঘি, বেলুয়ার দিঘি ও আসকার দিঘি ইত্যাদির সংরক্ষণের পাশাপাশি অন্যান্য বৃহদাকার পুকুর ও জলাশয় সংরক্ষণ করা, নগরীতে বিদ্যমান খেলার মাঠ ও উন্মুক্ত স্থানমূহের সংরক্ষণ, পাহাড়ে বসবাসকারী ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিবাসীদের জন্য বহুতল ফ্ল্যাট নির্মাণ, নগরীর পতেঙ্গা হতে ফৌজদারহাট পর্যন্ত সমুদ্র সৈকত উন্নয়ন, বিশেষ রুটে কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালুকরণ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেল গঠন (পর্যাপ্ত লোকবল ও সরঞ্জমাদি-সহ), পাহাড়ের পাদদেশে সুবিধাজনক স্থানে জলাধার স্থাপন, চট্টগ্রাম (সদরঘাট) হতে সুবিধাজনক রুটসমূহে নৌপরিবহণ চালুকরণ, ইনার রিং রোড নির্মাণ (কালুরঘাট শিল্পাঞ্চলকে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে দ্রুততম সময়ে সংযোগ স্থাপনের জন্য শাহ আমানত ব্রিজ হতে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত চার লেন রাস্তা, বাঁধ ও সংযুক্ত খালসমূহে স্লুইস গেট নির্মাণ), নগরীতে প্রয়োজনীয় ফ্লাইওভার নির্মাণ, নতুন অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট স্থাপন, প্রিমিয়ার ড্রিঙ্কিং ওয়াটার প্ল্যান্টের প্রয়োজনীয় সংস্কার, হালিশহর টিজি ও আরেফিন নগর টিজি তে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন, সি.এন.জি-প্ল্যান্টে ২ টি নতুন কম্প্রেসার মেশিন স্থাপন, দামপাড়ায় ১ টি নতুন ফিলিং স্টেশন স্থাপন, নগরীর সকল সড়ক বাতি এলইডি বাতিতে রূপান্তর, সাগরিকাস্থ টিউব-লাইট ফ্যাক্টরিকে এল.ই.ডি. বাতি ফ্যাক্টরিতে রূপান্তর, কর্পোরেশন এলাকায় রাস্তার দুই পার্শ্বে ও মিড আইল্যান্ডের বাগান এবং বিভিন্ন পার্কে রঙিন এল.ই.ডি. গার্ডেন লাইট স্থাপন, ৪১টি ওয়ার্ডের চাহিদার প্রেক্ষিতে এবং প্রধান প্রধান সড়কে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বৈদ্যুতিক পোল স্থাপন, সেবক কলোনি-সহ অন্যান্য স্থাপনায় বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্র স্থাপন, ট্রাফিক সিগন্যাল বাতির আধুনিকায়ন ও নতুন প্রযুক্তি সংযোজন, সমগ্র নগরীকে ইবধঁঃরভরপধঃরড়হ-এর আওতায় আনয়ন সহ ৩৬ টি বিষয় উল্লেখ করেন মেয়র।
দায়িত্ব পালনকালিন সময়ে দ্বিতীয় বাজেট বক্তব্যে মেয়র সর্বশক্তিমান স্রষ্টা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে লক্ষ-কোটি শুকরিয়া আদায় করে, পরম শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশ নামক জাতিরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করেন এবং ১৯৫২ সনের ভাষা শহিদদের এবং ১৯৭১ সনের ৩০ লক্ষ শহিদ, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা-সহ সকল মুক্তিযোদ্ধাদের সশ্রদ্ধচিত্তে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ হতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তাকে মেয়র পদে সমর্থন প্রদানের জন্য এবং তার উপর আস্থাশীল হওয়ার জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
মেয়র আরো স্মরণ করেন চট্টগ্রামের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার প্রয়াত কীর্তিমান ব্যক্তিদের, যাঁদের শ্রম ও মেধায় এই নগরী গড়ে উঠেছে তাদের সকলকে।
বাজেট বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিবালয়, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিচ্ছন্ন, রাজস্ব ও প্রকৌশল বিভাগের বিভিন্ন চিত্র তুলে ধরেন।
তিনি সচিবালয় প্রসঙ্গে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটি স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যা স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর আলোকে পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১৯৮৮ সালের সরকার অনুমোদিত একটি জনবল কাঠামো রয়েছে। সে জনবল কাঠামোতে বিভিন্ন পদের সংখ্যা ৩১৮০ টি। ফলে ১৯৮৮ সালের জনবল কাঠামোতে অনুমোদিত জনবল দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীতে বসবাসকারী ৬০ লক্ষ লোকের যথাযথ নাগরিক সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছেনা বিধায় বিভিন্ন সময়ে অস্থায়ী ভিত্তিতে লোক নিয়োগ করে কর্পোরেশনের বিশাল কর্মকান্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। নাগরিকদের সেবা চাহিদা পূর্বের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। নাগরিকদের যথাযথ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে জনবল বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত অতিরিক্ত ২৩৪৭ জনের প্রস্তাবিত জনবলের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় গত ৪ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে ১০৪৬টি পদ সৃজনে সম্মতি প্রদান করেছেন। বর্তমানে অত্র সিটি কর্পোরেশনে ৭৪৯১ জন স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত আছেন। ইতোপূর্বে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত কর্মচারীগণ তাদের বেতনের ২০% হারে সর্বনিম্ন ১৫০০ টাকা উৎসবভাতা প্রাপ্ত হতেন। মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারীদের কথা বিবেচনা করে সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে উৎসবভাতা বৃদ্ধি করে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের একমাসের বেতন দুই ঈদে সমানভাবে ভাগ করে এবং অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসবে এক মাসের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ একসাথে প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ইতোমধ্যে সরকার স্থায়ী কর্মচারীদের মূল বেতনের ২০% হারে বাংলা নববর্ষ বা বৈশাখি ভাতা ঘোষণা করা হলে, সাধারণ সভার অনুমোদনক্রমে স্থায়ী কর্মচারীদের ন্যায় অস্থায়ী কর্মচারীদেরকেও ২০% হারে বাংলা নববর্ষ ভাতাকে উৎসাহভাতা হিসাবে প্রদান করা হচ্ছে। অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতনভাতা ২৭% হতে ৩৫% পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডোর টু ডোর গমন করে বিন এর মাধ্যমে ময়লা আবর্জনা সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য আরও ২ হাজার জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়োগের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন শিক্ষা বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, শিক্ষা হচ্ছে অতীত সংস্কৃতির বাহক, বর্তমান সভ্যতার পৃষ্ঠপোষক এবং ভবিষ্যৎ প্রগতির ধারক। শিক্ষা মানুষের মনের অন্ধকার দূরীভূত করে আলোকপ্রাপ্ত সমৃদ্ধ মানুষে পরিণত করে। জন্মগতভাবে প্রতিটি মানুষের মধ্যে যে অমিত মেধা ও সম্ভাবনা সুপ্ত অবস্থায় থাকে এর বিকাশের জন্য প্রয়োজন গুণগত মানসম্পন্ন শিক্ষা। শিক্ষা বিস্তারের ধারাবাহিকতায় মানসম্মত উচ্চশিক্ষা প্রসারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে ও ভূমিতে প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় নামে একটি আন্তর্জাতিক মানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম-সহ সমগ্র বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে। তা ছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে বর্তমানে ২টি কলেজে অনার্স কোর্স চালু-সহ মোট ৭টি ডিগ্রি কলেজ, ১৪টি উচ্চ-মাধ্যমিক কলেজ, ৪৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি ইংলিশ মিডিয়াম-সহ মোট ৭টি কিন্ডারগার্টেন, ২টি প্রাথমিক, ১টি কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ৫টি কম্পিউটার কলেজ (ক্যাম্পাস), ১টি থিয়েটার ইনস্টিটিউট (টিআইসি), ১টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ৪টি বয়স্কশিক্ষা কেন্দ্র, ৩৫০টি ফোরকানিয়া মাদ্রাসা এবং আরো কতিপয় বিশেষ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। সম্প্রতি পাথরঘাটা মহিলা মহাবিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল মডেল স্কুল ও কলেজ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক অধিগ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এ বিশাল কর্মকা- পরিচালনা করে আসলেও আলাদাভাবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে শিক্ষক নিয়োগ, বদলি, পদোন্নতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে নানা জটিলতা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
মেয়র বলেন, শিক্ষা বিভাগের কার্যক্রম ঢেলে সাজাতে গিয়ে এ সমস্যাটি উপলব্ধিতে আসে। শিক্ষা বিভাগের কাজে সমন্বয় সাধন ও যাবতীয় জটিলতা নিরসনকল্পে একটি সুষ্ঠু ও যুগোপযোগী শিক্ষা নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। নীতিমালা প্রণয়নে গঠিত কমিটি ইতোমধ্যে একটি খসড়া নীতিমালা প্রস্তুত করেছে। অচিরেই উক্ত নীতিমালা চূড়ান্ত করে শিক্ষা বিভাগের মান উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করা হবে।
তিনি স্বাস্থ্য বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন দীর্ঘদিন যাবৎ স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। স্বাস্থ্য বিভাগ পরিচালিত হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহের চিকিৎসাসেবা আরো উন্নততর ও পরিকল্পিতভাবে করার জন্য মেডিক্যাল অফিসার, নার্স ও মিডওয়াইফ-সহ বিভিন্ন পর্যায়ে ৭৭ জন লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে। দুস্থ, দরিদ্র-সহ আপামর জনসাধারণ যাতে সহজে চিকিৎসাসেবা নিতে পারে সেজন্য স্বাস্থ্য কেন্দ্রসমূহের বহির্বিভাগের রেজিস্ট্রেশন ফি ৩০ টাকার পরিবর্তে ১০ টাকায় পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে।
সিটি কর্পোরেশন জেনারেল হাসাপাতালকে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট একটি পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করা হয়েছে, যেখানে সার্বক্ষণিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে দন্ত বহির্বিভাগ চালু করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজির অধীনে ম্যাটস কোর্স চালু করা হয়েছে। তা ছাড়া প্রতিবন্ধীদের জন্য প্রতিবন্ধী কর্ণার স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য নতুন উদ্যোগ হিসেবে একটি স্বাস্থ্য নীতিমালা প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এ ছাড়াও জেনারেল হাসপাতালে চক্ষু বহির্বিভাগ ও ১০ শয্যাবিশিষ্ট বার্ন ইউনিট চালুকরণ, মাতৃসদন হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসা সেবাসমূহের বিভিন্ন ফি পুনঃনির্ধারণ, সিটি কর্পোরেশন মিডওয়াইফারি ইনস্টিটিউট কর্তৃক পরিচালিত জুনিয়র মিডওয়াইফারি কোর্সকে ১৮ মাস থেকে ৩ বৎসর মেয়াদে উন্নীত করে ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্স চালু করা এবং ইনস্টিটিউট অব হেল্থ টেকনোলজি এন্ড ম্যাটস-এ বিভিন্ন বিষয়ে বিএসসি কোর্স চালুকরণ বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে।
তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ইপিআই কার্যক্রমে সর্বোচ্চ সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ঐরমযবংঃ ওসঢ়ৎড়াবসবহঃ অধিৎফ লাভ করেছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ১টি মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন, জেনারেল হাসপাতালে ওঈট, ঈঈট, ঐউট, ডায়ালেসিস ইউনিট স্থাপন ও মেমন মাতৃসদন হাসপাতাল-সহ অন্যান্য মাতৃসদন হাসপাতালে ঘওঈট (ঘবড়হধঃধষ ওহঃবহংরাব ঈধৎব টহরঃ) চালুকরণ কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন আছে।

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন পরিচ্ছন্ন বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে বিভিন্ন সেবা ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের মধ্যে মহানগরীকে সার্বিকভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মশক ও দূষণমুক্ত রাখা কর্পোরেশনের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এ নগরীকে গ্রিন ও ক্লিন সিটিতে রূপান্তর করার লক্ষ্যে জবাবদিহিতার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন বিভাগের কাজের মান আরো উন্নত ও গতিশীল করার নিমিত্তে প্রত্যেক ওয়ার্ডের সম্মানিত কাউন্সিলরদের সার্বিক সহযোগিতায় স্ব-স্ব ওয়ার্ডের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম দিনের পরিবর্তে প্রত্যহ রাত ১১ ঘটিকা হতে ভোর ৬ ঘটিকা পর্যন্ত পরিচালিত হচ্ছে। পরিচ্ছন্ন কাজে বিগত এক বছরে ৭টি ডাম্প ট্রাক, ৩০টি নতুন আবর্জনাবাহী টেম্পু যুক্ত হয়েছে। নাগরিক স্বার্থে পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যসম্মত নগরী নিশ্চিত করার জন্য ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহস্থালী, দোকান, মার্কেট ও হাট-বাজার ইত্যাদির সৃষ্ট আবর্জনা ডোর টু ডোর সংগ্রহপূর্বক রিকশা ভ্যান-এর মাধ্যমে নিকটস্থ ঝঞঝ-এ নিয়ে ট্রাকের মাধ্যমে সরাসরি ডাম্পিং গ্রাউন্ডে অপসারণ করা হবে। যেখানে ঝঞঝ নেই সেখানে একটি নির্দিষ্ট জায়গা হতে আবর্জনা সরাসরি আবর্জনাবাহী ডাম্প ট্রাকে তোলা হবে। চট্টগ্রামকে পরিচ্ছন্ন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ একটি যুগান্তকারী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ১ আগস্ট হতে ৩১ ডিসেম্বর ২০১৬-এর মধ্যে ৫টি ধাপে ৪১টি ওয়ার্ডে ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ করা হবে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে অতিরিক্ত ২ হাজার সেবক, ১০ লক্ষ বিন ও ২ হাজার রিকশা ভ্যান প্রয়োজন হবে। এ খাতে বেতনভাতা বাবদ বৎসরে প্রায় ২৮ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা এবং ভ্যান ও বিন বাবদ প্রায় ৬০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। ক্লিন সিটির পাশাপাশি গ্রিন সিটি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার থেকে নগরীর দীর্ঘদিনের জঞ্জাল ৪,৯৫৮টি বিলবোর্ড, ওভারহেড, ইউনিপোল, মিনিপোল, মেগা সাইন, বেল সাইন, সাইনবোর্ড ইত্যাদি অপসারণ করে চট্টগ্রাম নগরীকে বিলবোর্ড মুক্ত করা হয়েছে। এ সকল বিলবোর্ড অপসারিত না হলে কালবৈশাখি-ঘূর্ণিঝড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-এ বিলবোর্ডগুলো অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারতো। চট্টগ্রামবাসী এখন বিলবোর্ডমুক্ত খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিতে সক্ষম হচ্ছেন। মানুষ এখন সবুজ পাহাড় আর সবুজ প্রকৃতি দেখে মুগ্ধ। এ থেকে চট্টগ্রাম ফিরে পেয়েছে হাজার বছরের নৈসর্গিক সৌন্দর্য। চট্টগ্রাম এখন সবুজের স্বর্গপুরী। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সকল রাস্তার ডিভাইডার ও ফুটপাতকে যথাযথ বিউটিফিকেশনের আওতায় এনে সবুজায়ন-সহ সবুজ প্রকৃতিকে রক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। এ নগরীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং নাগরিকসেবা অব্যাহত রাখতে মেয়র নগরবাসীর সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
তিনি রাজস্ব বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, কর্পোরেশনের পৌরকর সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্যাদি নিয়মিত হালনাগাদকরণ, কর প্রদানে সম্মানিত হোল্ডিং মালিকগণের অযথা হয়রানি বন্ধ, কর বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধে এবং অনলাইন ট্যাক্স পেমেন্ট সিস্টেম চালু করার প্রত্যয়ে হোল্ডিং-এর যাবতীয় তথ্য ঐড়ষফরহম ঞধী গধহধমবসবহঃ ঝুংঃবস (ঐঞগঝ) সফ্টওয়্যারে ইনপুট দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে চলতি অর্থ বছরের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগরীর আওতাধীন সকল ট্রেড লাইসেন্স অটোমেশনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। এ ছাড়া এ পদ্ধতির শক্তিশালী মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে কর আদায়কারীগণের কোনো অনিয়ম করার সুযোগ থাকবে না। ‘এইচটিএমএস’ পদ্ধতিতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে গৃহকর আদায় শুরু হলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যপূরণ সম্ভব হবে বলে মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন। গৃহকর আদায় অটোমেশনের আওতায় এলে বা ‘এইচটিএমএস’ পদ্ধতি চালু হলে নগরবাসী উপকৃত হবেন। নগরবাসী ঘরে বসেই যাবতীয় তথ্য জানতে পারবেন। ফলে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন ডিজিটাল বাংলাদেশ করার যে প্রক্রিয়া তাতেও সিটি কর্পোরেশন শরিক হতে সক্ষম হবে। শীঘ্রই চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সামগ্রিক কর্মকান্ড অটোমেশনের আওতায় আনা হবে।
নগরবাসীর আবাসন সংকট নিরসনকল্পে মেয়র বলেন, তিনি দায়িত্বভার গ্রহণের পর লেক সিটি হাউজিং-এ ৫৪৮টি প্লট গ্রহীতার মধ্যে বর্তমানে ‘এ’ ব্লকের ৭০টি প্লট রেজিস্ট্রি করা হয়েছে । এ ছাড়াও বিওসি ব্লকের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে রয়েছে। নগরীর মধ্য আয়ের লোকদের আবাসনসমস্যা সমাধানকল্পে অক্সিজেন অ্যাপার্টমেন্টে ৭২টির মধ্যে ৫৫টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে, ইসলামাবাদ অ্যাপার্টমেন্ট মাদারবাড়ী ৯৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণপূর্বক সব কটি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে এবং ইসলামাবাদ অ্যাপার্টমেন্টের ৪নং ভবনে আরো ৩২টি ফ্ল্যাটের উন্নয়ন কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর বরাদ্দ প্রদান করা হবে। বহদ্দারহাট ও চকবাজার কাঁচা বাজারের উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ ছাড়াও মাদারবাড়ী ইসলামাবাদ অ্যাপার্টমেন্ট ভবন-৪, রাজগরিয়া ভবন, বহদ্দারহাট কাঁচা বাজার, চকবাজার কাঁচা বাজার, লালচান্দ রোডে অ্যাপার্টমেন্ট প্রকল্প, বহদ্দারহাট এফআইডিসি রোডে চসিক-এর নিজস্ব ভূমিতে এ সকল প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস ভিলেজ স্থাপনের জন্য বিজিএমইএ-এর সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাবে এবং দেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, উন্নয়ন ও অগ্রগতির সাথে বৈদেশিক আয়ও বৃদ্ধি পাবে এবং জনকল্যাণেও ব্যাপক ভূমিকা রাখবে বলে মেয়র আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
তিনি প্রকৌশল বিভাগ প্রসঙ্গে বলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সড়ক, ব্রিজ, কালভার্ট, নর্দমা, ফুটপাত, প্রতিরোধ দেওয়াল ও গভীর নলকূপের বর্তমান চিত্র তুলে ধরে বলেন,
অ্যাসফল্ট তথা পিচ ঢালা সড়ক মোট সংখ্যা ১১৪০টি, মোট দৈর্ঘ্য ৬২০ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ৭.২০মি. কংক্রিট সড়ক মোট সংখ্যা ১১০৯টি, মোট দৈর্ঘ্য ২৪৯ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ৩.৫৫ মি., ব্রিক সলিং সড়ক মোট সংখ্যা ২৩৫টি, মোট দৈর্ঘ্য ৫৮.৫ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ৩.৫০ মি., কাঁচা সড়ক মোট সংখ্যা ২৪৫টি, মোট দৈর্ঘ্য ৪৮.০০ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ৩.৮০ মি., খালের মাট সংখ্যা ১১৮টি (শাখা-প্রশাখা-সহ) মোট দৈর্ঘ্য ১৮২.২৫ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ৭.২৮ মি. কাঁচা অংশের দৈর্ঘ্য ১১০ কি.মি., পাকা নর্দমা মোট দৈর্ঘ্য ৭১০ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ১.১০ মি., কাঁচা নর্দমা মোট দৈর্ঘ্য ৫৫ কি.মি. এবং গড় প্রস্থ ১.৪০ মি., ফুটপাত মোট সংখ্যা ১৩৫টি, মোট দৈর্ঘ্য ১৫০ কি.মি.এবং গড় প্রস্থ ১.৮০মি., প্রতিরোধ দেওয়াল মোট দৈর্ঘ্য ৮০ কি.মি.এবং গড় প্রস্থ ১.২৫ মি., মোট ব্রিজ ১৯২টি, গভীর নলকূপ ৩৮৫টি, কালভার্ট ৯৯৮টি, ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯৫৮২.৪৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৮৭.৪৭ কি.মি. রাস্তা, ১৩৩৮.৯০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ১৪৮.৬২ কি.মি. খাল-নর্দমা হতে মাটি উত্তোলন ও অপসারন, ১৪১১.৪২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২১.৭১ কি.মি. নালা-নর্দমা নির্মাণ, ১০৮.৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২.৭১ কি.মি. ফুটপাত নির্মাণ, ২৪০.৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ০.৮৩ কি.মি. প্রতিরোধ দেওয়াল নির্মাণ, ৭৭.০০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৯টি ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, ১২০৭.০৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২৩টি ভবন নিমার্ণ ও সংস্কার, ১৩.৭৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৩টি নলকূপ স্থাপন ও উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে, এডিপি খাতে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরের গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬২৪২.৮৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬২.১৭ কি.মি. রাস্তা, ১২৭.৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪টি ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ ও ৬২.৭০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ০.৭৯ কি.মি. নালা-নর্দমা নির্মাণ এর কাজ চলমান রয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরের ১৭৫৮.৮৯ লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে মোট ১৭৯৩৬.১৫ ঘন মিটার মাটি বিভিন্ন নালা-নর্দমা হতে উত্তোলনপূর্বক অপসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৪১টি ওয়ার্ডে ৮৮,৯২০ জন শ্রমিক দ্বারা এবং ২টি স্কেভেটরের মাধ্যমে ৩৬৮.৬৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন নালা-নর্দমা খাল থেকে মাটি উত্তোলন করা হয়। ফলে চলমান বর্ষা মৌসুমে পূর্বের তুলনায় জলাবদ্ধতা অনেকাংশে হ্রাস পেয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে অতিরিক্ত দৈনিকভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করে এবং নিজস্ব ও ভাড়ায় চালিত স্কেভেটর দ্বারা বিভিন্ন খাল ও নালা হতে নিয়মিত মাটি উত্তোলন ও অপসারণের মাধ্যমে খাল ও নালাসমূহ পরিস্কার রাখার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, বর্তমান জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য যান্ত্রিক শাখায় ৫টি নতুন ডাম্প ট্রাক, ১টি স্কেভেটর এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতি ক্রয় করা হয়েছে। ভবিষ্যতে সংশ্লিষ্ট কাজ আরো গতিশীল হবে এবং চট্টগ্রাম মহানগরীর সম্মানিত জনগণ এর সুফল ভোগ করবেন। সাম্প্রতিককালে চীন সফরকালীন সময়ে চীনা বিশেষজ্ঞগণের সাথে এ বিষয়ে বৈঠক হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা সমস্যাযুক্ত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। বর্তমানে তাঁদের সমীক্ষা চলমান রয়েছে। ভবিষ্যতে তাঁরা চট্টগ্রাম মহানগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ সম্পন্ন করলে জলাবদ্ধতার সমস্যা হ্রাস পাবে। নগরবাসীর দোরগোড়ায় সহজে, দ্রুত সময়ে এবং স্বল্প খরচে সকল ধরনের সরকারি এবং বেসরকারি সেবা পৌঁছানোর প্রয়াসে একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি ওয়ার্ডে নগর ডিজিটাল সেন্টার কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডের কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের নিমিত্তে প্রতিটি ওয়ার্ডে কম্পিউটার ও প্রিন্টার সরবরাহ করা হয়েছে। প্রতিটি বিভাগের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আনয়ন ও দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলার জন্য অটোমেশন কার্যক্রমের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে ঠবযরপষব ঞৎধপশরহম ঝুংঃবস চালু করা হয়েছে এবং পুরো নগরভবনকে ঈঈঞঠ-এর আওতায় আনা হয়েছে।
সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন মনে করেন, নগরবাসীর প্রয়োজনীয় নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কর্পোরেশনের সার্বিক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরবাসী তাকে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত করে যে গুরুদায়িত্ব তার উপর অর্পণ করেছেন, সকলের সহযোগিতা ও সক্রিয় অংশগ্রহণে সে পবিত্র দায়িত্ব সততা, নিষ্ঠা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে পালন করে সমৃদ্ধ ‘কিøন ও গ্রিন’ সিটি গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন। তিনি কর্পোরেশনের সার্বিক কর্মকা- সম্পর্কে গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা ও আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন। বাজেট পেশ উপলক্ষে বিশেষ সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব আ জ ম নাছির উদ্দীন। এ বিশেষ সাধারণ সভায় বাজেট প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। পরে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বাজেট অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হাজী কাজী মো. শফিউল আলম। সাংবাদিক ও কাউন্সিলরদের উপস্থিতিতে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরের বাজেট বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তার পক্ষে আয়-ব্যয়ের হিসাব উপস্থাপন করেন অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর শফিউল আলম। প্রধান হিসাবরক্ষন কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠিত বাজেট অধিবেশনের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলোয়াত করা হয়। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র, কাউন্সিলর, সংরক্ষিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর, সচিব, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা, প্রধান প্রকৌশলী, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সহ বিভাগীয় ও শাখা প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.