মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংস্কারে পুকুর চুরি

0

মিরসরাই প্রতিনিধি : মিরসরাই উপজেলা মাস্তাননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রক্ষনাবেক্ষন ও সংস্কারে নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে ৩৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে অর্থ বরাদ্দের এক বছর পরও ওই টাকার কি কাজ হয়েছে তা জানেনা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ। সংস্কারের বিষয়ে কাগজপত্র ঠিকঠাক থাকলেও দৃশ্যমান কোন কাজ নেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এঘটনায় সম্প্রতি একটি বৈঠকে মিরসরাইয়ে সংসদ সদস্য, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জনকে বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেন।

জানা গেছে, ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে উপজেলা মাস্তাননগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩য় শ্রেনীর আবাসিক ভবন, স্যানিটারী, ইলেকট্রিনিক মেরামত ও সংস্কারের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় থেকে দুই ধাপে প্রায় ৩৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের স্মারক নং ৪৫.১৬৬.১১৪০০.০০.০৫৯.২০১৫-৯৭০ / ১৩.৮.২০১৫ ইং তারিখ যুগ্ন সচিব খাজা আব্দুল হান্নান স্বাক্ষরিত চিঠি ওই বরাদ্দের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়। এরপর স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিভিন্ন সংস্কার কাজ দেখিয়ে ওই টাকা উত্তোলন করে নেয়। কিন্তু স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সংস্কার কাজের দৃশ্যমান কোন নমুনা না দেখায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির সভাপতি মো. জসীম উদ্দিন জানান, গত ৬ মাস আগে তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালনা কমিটির দায়িত্ব নিয়েছেন। অতীতের সংস্কার কাজের বিষয়ে তিনি তেমন কিছু জানেন না। তবে চলতি মাসের প্রথম দিকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি বৈঠকে ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের কমপ্লেক্সে নামে বরাদ্দ হওয়া অর্থে কোন কাজ না হওয়ায় মিরসরাইয়ের অভিভাবক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কাজ করলে তা দৃশ্যমান হতো। তাই বরাদ্দকৃত অর্থ কি কাজে খরচ করা হলে, কাজ না হলে এ অর্থ কোথায় গেল তা তদন্ত করা প্রয়োজন। বর্তমানে মন্ত্রীর নিজস্ব অর্থায়নে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলাকায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজসহ বেশ কিছু কাজ করানো হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা রতন কুমার দে জানান, তিনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। এ বিষয়ে বিস্তারিত তিনি কিছু জানেন না। হাসপাতালের সংস্কার কাজ গুলো করার দায়িত্ব স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের। ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে মন্ত্রনালয় থেকে সংস্কার কাজের একটি তালিকা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ থেকে তাদেরকে পাঠানো হয়েছে জানান। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের চিঠি দেখাতে পারলেও তিনি সংস্কার কাজের কোন তালিকা বা নথিপত্র দেখাতে পারেননি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৎকালীন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ তবারক উল্যা বায়েজীদ (অবসরপ্রাপ্ত) জানান, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংস্কারের বিষয়ে আমাদের কোন হাত নেই। তারা শুধু কাজের চাহিদা দিয়ে থাকেন। সংস্কারের বরাদ্দ পেয়ে কাজ গুলো স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ করে থাকে। তবে তিনি জানান, তৎকালীন সময়ে কমপ্লেক্সে এলাকায় দুইটি ভবনের পুরাতন ছাদ ভেঙ্গে নতুন করে করানো হয়। এছাড়া পানির লাইন নির্মানসহ কিছু কাজ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ওই কাজের কোন নথি না থাকার কথাও তিনি স্বীকার করেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারি প্রকৌশলী মো. সাহাবুদ্দীন জানান, তিনি সম্প্রতি নতুন দায়িত্ব নিয়েছেন। তৎকালীন সময়ে আব্দুল হামিদ নামে একজন প্রকৌশলী দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে তিনি কুমিল্লায় দায়িত্বে রয়েছে। ওই সময় মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাজের একটি ওয়ার্ক আর্ডার ও সংস্কার কাজ বুঝি নেয়ার তৎকালীন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার স্বাক্ষরিত কিছু কাজগপত্র তাদের কাছে আছে। এরপরও তৎকালীন সময়ে দায়িত্বে থাকা সহকারি প্রকৌশলী ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী আব্দুল হামিদের (বর্তমানে কুমিল্লায় দায়িত্বরত) মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোন কেটে দেন। পরে ফোন করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন আজিজুর রহমান চৌধুরী জানান, সংস্কারের বিষয়টি স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ দেখে। তবে সংস্কার কাজের বরাদ্দ নিয়ে অভিযোগ উঠার পরে আমি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিদর্শন করে কাজের দৃশ্যমান কিছু দেখিনি এবং তৎকালীন সময়ে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা কর্মচারীরাও কাজ না হওয়ার কথা জানান। কিন্তু কমপ্লেক্সে সংস্কার কাজ করার বিষয়টি কাগজপত্রে ঠিক রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দৃশ্যমান কাজ না দেখার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.