ফটিকছড়ির মেধাবী ছাত্র হান্নানের প্রদীপ নিভে গেল

0

ফটিকছড়ি প্রতিনিধি : কখনো কলেজের বারান্দা, কখনো খেলার মাঠ দাঁপিয়ে বেড়ানো অন্যসব সহপাঠীদের মতোই কর্মচঞ্চল দিন কাটতো হান্নানের। তিনভাই, দু’বোনের দরিদ্র পিতার পরিবারে স্ব্চ্ছলতা ফিরিয়ে আনার জন্য নিয়মিত টিউশনও করা হতো তার। কিন্তু হঠাৎ করেই থেমে গেল হান্নানের জীবনের গতিময়তা। ধীরে ধীরে অসুস্থ হতে লাগলো সে। পরে, চিকিৎসকের সরণাপন্ন হলে জানা গেলো দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে তার কোমল শরীরে। এরপর নানাভাবে তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

দরিদ্র পিতার পক্ষে তার চিকিৎসার খরচ চালানো সম্ভব না হলে এগিয়ে আসেন সহপাঠী, প্রতিবেশী, সাংবাদিক ও স্বজনেরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অর্থ সহায়তা চেয়ে তহবিল গঠন করেন স্থানীয় সাংবাদিক জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ সহ অনেকে। ক্যাম্পেইনিং করে টাকা যোগাড় করতে নেমে পরে সহপাঠী বন্ধুরা। চলতে থাকে চিকিৎসা। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ভারতে। দীর্ঘ তিন মাস চিকিৎসার পর অবস্থার উন্নতি না হলে ফিরিয়ে আনা হয় দেশে। ঢাকার একটি হাসপাতালে কোনভাবে চলতে থাকে চিকিৎসা।

শেষমেষ গত ২০ অক্টোবর সকাল ৭.৪৫ মিনিটে নিভে যায় নাজিরহাট কলেজের এইচ.এস.সি দাদ্বশ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র হান্নানের জীবন প্রদীপ। তার মরদেহ ফটিকছড়ি উপজেলার নাজিরহাট পৌরসভাধীন পূর্ব সুয়াবিল গ্রামের ভাঙ্গা দিঘীর পাড় এলাকায় নিয়ে আসা হলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সহপাঠী বন্ধু, প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

তারা জানান, ‘কৃষক বাবার শেষ সম্ভলটুকু বিক্রি করে শেষ করেছে আদরের ছেলেটাকে বাঁচাতে। ছেলে কলেজে পড়ে তার আত্মসম্মান নষ্ট হবে, বন্ধুদের কাছে ছোট হয়ে যেতে পারে সেই ভয়ে কারো কাছে হাতও পাতেননি তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ নানা গণমাধ্যমে তার অসুস্থতার কথা ছড়িয়ে পড়লে তাকে সুস্থ করে তুলতে হাত বাড়িয়ে দেয় বন্ধু, সহপাঠি, প্রবাসীসহ সমাজের নানা স্তরের মানুষ।

মায়ের আকুতি, বাবার মিনতি, সহপাঠি, সাংবাদিক কিংবা সমাজকর্মীদের শত প্রচেষ্টাকে বৃথা করে হান্নান চলে গেল না ফেরার দেশে। স্কুল-কলেজের দুয়ারে দুয়ারে দাঁড়িয়ে কিংবা রাস্তার মোড়ে মোড়ে হাত পেতে অর্থ সংগ্রহ করে হান্নানের চিকিৎসা তহবিল গঠন করা সে সব নিবেদিত মানুষগুলো হান্নানের এভাবে অকালে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেননা।

অসহায় হান্নানের চিকিৎসা তহবিল গঠেন মূখ্য ভূমিকা রাখা সাংবাদিক ও সমাজকর্মী জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে মনে হচ্ছিল আকাশটা মাথার উপর ভেঙ্গে পড়েছে। হান্নানের সাথে শেষবার দেখা হয়েছিল ভারত যাওয়ার দিন। সেদিন যখন সে মাকে ছেড়ে গাড়িতে উঠছে, বার বার ছেয়ে আছে মায়ের মুখের পানে। ‘মা’ শাড়ির আচলে মুখ লুকিয়ে কান্নাকে বার বার লুকাতে চেয়েছিলেন সেদিন। আজ কি করে কান্না লুকাবেন হান্নানের মা?

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.