বাবর মুনাফ : চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফি এর দ্বিগুণ অর্থ বোয়ালখালীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি করছে বলে জানিয়েছেন অভিভাবকরা। ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের এ অভিযোগ এনেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের পরিবারগুলো অর্থের যোগান করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
অভিভাবকরা জানান, ফরম পূরণের জন্য বিদ্যালয়গুলো সবনিন্ম ২হাজার ৮৮৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৯৮৫টাকা নিচ্ছে। কোচিং ফি বাবদ সর্বোচ্চ ২২ শত টাকা আদায় করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এ নিয়ে প্রায় ৫হাজার টাকার ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
অভিভাবকরা আরো জানান, নির্ধারিত বোর্ড ফি এর সাথে বিদায় সংবর্ধনা, মসজিদের চাঁদা, সরস্বতী পূজা, চুর্তথ শ্রেণির বিশেষ ভাতা, মডেল টেষ্ট, তিন মাসের কোচিং ফি ও অন্যান্য চাঁদাসহ প্রায় ৩হাজার টাকা শিক্ষার্থীপ্রতি আদায় করছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শাকপুরা আর্দশ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাজ মিয়া বলেন, ফরম পূরণে ১হাজার ৩শত ৮৫ টাকা নেয়া হচ্ছে। অভিভাবকদের আবেদনের প্রেক্ষিতে বিশেষ ক্লাস হলে বোর্ডের বিধি মোতাবেক ফি নেয়া হবে। এখন শুধু বোর্ড ফি নিয়ে এসএসসির ফরম পূরণ করা হচ্ছে।
আজগর আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলী বলেন, ১হাজার ৪শত ৮৫ টাকায় এসএসসি ফরম পূরণ করা হচ্ছে।
কধুরখীল উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ বড়ুয়া বলেন, বোর্ডের নির্ধারিত ফি নিয়েই ফরম পূরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. ইউনুচ এ ব্যাপারে বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি সর্বোচ্চ ১৫শত টাকা। তার চেয়ে বেশি অর্থ নিলেও তা সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের দায়দায়িত্ব।
চলতি বছরের গত ২১ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত আদেশে ফরম পূরণে নির্দেশনা দেয়া হয়। তাতে বোর্ড নির্ধারিত ফি এর চেয়ে অতিরিক্ত ফি আদায় না করার জন্য বলা হয়।
এ সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। তবে বিদ্যালয়গুলো সে নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নির্ধারিত ফি এর চেয়ে দ্বিগুন ফি আদায় করছে বলে জানা গেছে।
২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর মহামান্য হাইকোর্টের সুয়্যেমোটো রুল নং ২৫/২০১৪ এর আলোকে বিগত ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে মানবিক নিয়মিত ১হজার ৩শত ৫৫টাকা, অনিয়মিত ১হাজার ৪শত ৫৫টাকা, বিজ্ঞান নিয়মিত ১হজার ৪শত ৫৫টাকা, অনিয়মিত ১হাজার ৫শত ৪৫টাকা ও ব্যবসা শিক্ষা নিয়মিত ১হাজার ৩শত ৫৫টাকা, অনিয়মিত ১হাজার ৪শত ৫টাকা (ব্যবহারিক পরীক্ষা ও কেন্দ্র ফিসহ সর্বোচ্চ) ফি নিধারণ করা হয়েছিল।
এছাড়া ওই আদেশে কোনো প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায় করলে তাৎক্ষণিকভাবে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের ই-মেইল ce@bise-ctg.gov.bdএ তথ্য প্রমাণসহ অভিযোগ পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট অভিভাবকগণকে অনুরোধ জানানো হয়। তাতে এও বলা হয় অভিযোগ প্রমাণ হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের জন্য শিক্ষা র্বোডকর্তৃক নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত অর্থ আদায় না করার জন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের নির্দেশ প্রদান করে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। এছাড়াও সকল শিক্ষার্থীদের নিকট হতে কোচিং ফি এর নাম করে বাধ্যতামূলক বাড়তি ফি আদায়ের ব্যাপারে বলা হয়। যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্য বন্ধের নীতিমালা ২০১২ এর পরিপন্থি।
উক্ত নীতিমালার ২(খ) অনুচ্ছেদে মেট্রো পলিটন এলাকা বিষয়ভিত্তিক ৩০০ টাকা, জেলা শহরে ২০০/- এবং উপজেলা পর্যায়ে ১৫০/-। যা কোনো ভাবে শিক্ষার্থী প্রতি সবোর্চ্চ ১২শত টাকার অধিক বিনা রশিদে আদায় করা যাবে না। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আবেদন করতে হবে। রসিদ ছাড়া কোন অর্থ প্রদান না করার জন্য শিক্ষার্থী এবং অভিাবকদের অনুরোধ করে জেলা প্রশাসন।
কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গৃহিত অর্থের রসিদ প্রদান না করলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চট্টগ্রামে অভিযোগ দায়ের এবং জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, চট্টগ্রাম নামে Face Book Page-এ পোষ্ট অথবা dcchittagong@mopa.gov.bd/ adcictchittagong@gmail.com এ মেইল করার জন্য অনুরোধ করা হয়।
এ ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সরকারি বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।