মিরসরাই সীমান্তের আতঙ্ক “ডন‍‍ আজিজ”গ্রেফতার

0

এম আনোয়ার হোসেন, মিরসরাই : মিরসরাই সীমান্ত এলাকার আতঙ্ক ডন আজিজ পিস্তলসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। উপজেলার ১ নম্বর করেরহাট ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে ত্রাসের রাজত্ব করে আসছিল আবদুল আজিজ প্রকাশ ডন আজিজ। আজিজের বিরুদ্ধে খুন, সশস্ত্র হামলা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বালুমহাল দখলসহ ডজন খানেক মামলা রয়েছে।

গত সোমবার রাতে উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের পূর্ব অলিনগর এলাকার পাহাড় থেকে একটি বিদেশী পিস্তলসহ হত্যা মামলার আসামী আবদুল আজিজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭ এর একটি দল। এসময় তার কাছ থেকে দুই রাউন্ড কার্তুজসহ একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। সে করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর গ্রামের ডাঃ বদিউর রহমানের পুত্র। মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) র‌্যাব-৭ তাকে জোরারগঞ্জ থানায় তাকে হস্তান্তর করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এলাকার মানুষ তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে অতিষ্ঠ হয়ে উঠলেও ভয়ে মুখ খুলতো না। ২০১০ সালের ৮ আগষ্ট দোকানঘর ভাড়ার বকেয়া টাকা চাওয়ার জেরে আজিজ খুন করে করেরহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য অহিদুর রহমানকে। ঘটনার পরদিন আবুল খায়ের বাদী হয়ে ৯ আগষ্ট মিরসরাই থানায় তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

খুনের মামলায় দীর্ঘদিন ধরে তার নামে আদালতে গ্রেফতারী পরোয়ানা থাকলেও সে স্বদর্পে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছিল। সে করেরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে ছিলো। কিন্তু নানা অপকর্মের কারণে তাকে ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কারের পর সে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা অলিনগর দিয়ে সে মাদকদ্রব্য পাচারের সাথেও জড়িত ছিল। তার নেতৃত্বে রয়েছে সেখানে একটি মাদক সিন্ডিকেট। তার বড় ভাই আবু সাঈদ করেরহাট ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছিলো। ২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই আজিজের ত্রাসের রাজত্ব শুরু হয়।

বিভিন্ন সময় স্থানীয়দের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হুমকি প্রদান, সরকারী বাগানের গাছ লুট, প্রবাসীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়, নিরীহ মানুষের জায়গা দখলসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, ২০১০ সালের পরবর্তী সময়ে আজিজ সরকারের একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের পশ্চিম অলিনগর গ্রাম উন্নয়ন সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। সে ওই প্রকল্পের ৬০ সদস্যের প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা নিজেই পুরোটা লোপাট করে। সমিতির সদস্যরা তার কাছে ঋণের টাকার কথা জানতে চাইলে তাদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হুমকি দমকি দেয়।

র‌্যাব-৭ (সিপিসি-১) ফেনী ক্যাম্পের পরিচালক স্কোয়াডন লিডার শাফায়াত জামিল ফাহিম জানান, জোরারগঞ্জ থানার পশ্চিম অলিনগর গ্রামের ডা. বদিউর রহমানের ছেলে আজিজ এলাকার দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে আসছিলো। আজিজের কাছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ জিম্মি ছিল। জোরারগঞ্জ থানায় তার বিরুদ্ধে খুন, সশস্ত্র হামলা, চাঁদাবাজি, জমি দখল, বালুমহাল দখলের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে।

র‌্যাব আরো জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব সদস্যরা পূর্ব অলিনগর এলাকার কালাঘোনা পাহাড়ী স্থানে অভিযান চালায়। এসময় ওই এলাকার প্রধান সন্ত্রাসী আজিজ বাহিনীর প্রধান আবদুল আজিজ ওরফে ডন আজিজকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশী পিস্তল ও দুই রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে র‌্যাব। অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় আজিজের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করে আসামীকে জোরারগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছে র‌্যাব।

জোরারগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিপুল চন্দ্র দেবনাথ জানান, সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব-৭ এর একটি দল করেরহাটের অলিনগর এলাকার গহীন পাহাড় থেকে একটি বিদেশী পিস্তলসহ তাকে গ্রেফতার করে। তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলাসহ জোরারগঞ্জ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।

তিনি আরো জানান, ২০১০ সালে ৮ আগষ্ট করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম অলিনগর গ্রামের অহিদুর রহমানকে পিটিয়ে হত্যা করে আব্দুল আজিজ। ঘটনার পর আবুল খায়ের বাদি হয়ে মিরসরাই থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। ওই মামলায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.