উখিয়ায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার) : কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন চোরাই পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। মিয়ানমার সরকার মুসলিম নিধন, হত্যা, ও বাড়ী ঘরে অগ্নি সংযোগ বন্ধ না করলে পুরো আরকান রাজ্যে রোহিঙ্গা শুন্য হয়ে পড়বে।

ঘটনার পর থেকে উখিয়ার রোহিঙ্গা শরনার্থী শিবির ও আশে পাশে ১০ হাজার রোহিঙ্গা নির্যাতনের মুখে পালিয়ে এসে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। স্থাানীয় মানবপাচারকারী ও ইয়াবা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ হচ্ছে। দুই দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নিত্য নতুন কৌশলে অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে। সীমান্তে কড়াকড়ির মধ্যেও ওই সিন্ডিকেটের সহায়তায় প্রতিদিন শত শত রোহিঙ্গা এদেশে ঢুকে পড়ছে। তবে এখন টেকনাফের চেয়ে উখিয়া ও বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পথ দিয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। টেকনাফ সীমান্তে কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করায় এখন উখিয়া সীমান্তের অরক্ষিত চোরাই পথ বেছে নিয়েছে দালাল ও রোহিঙ্গারা।

গত ২দিন ধরে টেকনাফের হৃীলা ইউনিয়নের লেদা শরণার্থী শিবির ও উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ম্যানেজমেন্ট কমিটি ও অনুপ্রবেশকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভোরে আড়াই শতাধিক মানুষ বাংলাদেশে ঢুকেছে। ভোরের আলোর ফোটার সাথে সাথে এদেশীয় দালাল ও স্বজনদের মাধ্যমে ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছে। বরাবরের মতো তারাও বলেন, স্থানীয় দালালের সহায়তায় নাফ নদী পেরিয়ে রাতের অন্ধকারে বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছে তারা। দুই দেশের সীসান্ত রক্ষী বাহিনীর সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে দালালদের দেখিয়ে দেয়া পথে এদেশে ঢুকে পড়ে। তারাও মিয়ানমান সরকারের অমানবিক নির্যাতনের কথা বর্ণনা দেন।

গত শুক্রবার উখিয়া ও টেকনাফ এবং নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন চলমান সীমান্ত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে বিজিবি‘র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে বলে স্বীকার করেন। তিনি আরো বলেন, যেসব পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা ঢুকছে, সেসব পয়েন্টে নজরদারি বাড়ানো হবে। এছাড়াও সীমান্ত এলাকায় পর্যায়ক্রমে কাটা তারের বেড়া দিয়ে ঘেরা দেয়া হবে।

অনুপ্রবেশকারীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক দিনধরে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, জালিয়াপাড়া, নয়াপাড়া, উলুবনিয়া, হোয়াইক্ষ্যং, লেদা এবং উখিয়া উপজেলার কুতুপালং, ঘুমধুম, তুমব্রু, বালুখালী, বেতবুনিয়া, ঝিমনখালী, বালুখালী কাস্টমস অফিস এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকার তমরু পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল গফুর মাথাপিছু ৫০০ টাকা করে অনুপ্রবেশকারীদের দেশে প্রবেশ করাচ্ছেন।

গত ১২ নভেম্বর থেকে এপর্যন্ত প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। নিবন্ধিত শরনার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, টেকনাফ ও উখিয়া সীমান্ত দিয়ে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মিয়ানমারের জান্তা সরকারের লেলিয়ে দেওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পর থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা গুলোকে নিরাপদ মনে করে রাতের আধাঁরে ব্যাপক হারে নির্যতনের মুখে পালিয়ে আসছে। কক্সবাজারে বিজিবি ও বিজিপি বাহিনীর সাথে পতাকা বৈঠকের পর টেকনাফ এলাকায় নাফ নদী ও সীমান্ত এলাকায় অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়।

মিয়ানমারের পোয়াখালী থেকে আসা জাফর আলম, আবুল হোসেন, মিরামত গতকাল রোববার দুপুরে জানান, মিয়ানমারের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জের ধরে মিয়ানমার সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিপি বাহিনী গণহারে মুসলিম নিধন করে আসছে। এমনকি বাড়ী ঘর জ্বালিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রাকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে পাখিরা মতো হত্যা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয় ছোট ছোট শিশুদের জবাই করে এবং মহিলাদের গণহারে ধর্ষণ করে যাচ্ছে মিয়ানমার মিলিটারী বাহিনী। তাদের অত্যাচার, নির্যাতন ও হত্যার মুখে গুটি কয়েক রোহিঙ্গা যা সংখ্যায় নগন্য তারা পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছে। উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা বস্তি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি আবু সিদ্দিক বলেন, গত শনিবার ও রবিবার প্রায় ১৫টি পরিবার নিয়ে কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে নির্যাতিত পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা আশ্রয় নিয়েছে। জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় বাসিন্দা, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা নাগরিক কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়।

কক্সবাজার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ও উখিয়া সরকারী বঙ্গমাতা মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী বলেন, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে কোন সরাসরি সিদ্ধান্ত না আসলেও রীতিমতো সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে ওপারের মিলিটারী বাহিনীর ন্যাক্কার জনক হত্যাযজ্ঞের ব্যাপারে মুসলিম বিশ্ব সহ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মিয়ানমারকে চাপ প্রয়োগ করার কথা জানান তিনি।

উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের বলেন, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা উখিয়া সীমান্তের জন্য কোন নতুন ঘটনা নয় । এসব চোরাই পয়েন্ট দিয়ে কিছু কিছু রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে। উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাঈন উদ্দিন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে একথা স্বীকার করে তিনি বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। তবে মিয়ানমার সরকারের মুসলিম নির্যাতনের মুখে কিছু কিছু রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশের শরনার্থী শিবির গুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্ণেল ইমরান উল্লাহ সরকার বলেন, মিয়ানমারের সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে সীমান্তে নিয়োজিত প্রহরীদের টহলজোরদারের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতেও বিজিবি সদস্যদের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। সর্বশক্তি দিয়ে সীমান্তের যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে বিজিবি সবসময় প্রস্তুত।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.