সিটিনিউজবিডিঃ ভারতে ভীষণ জনপ্রিয় পণ্য ম্যাগি নুডলসের ওপর ক্ষতিকর খাদ্য হিসেবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হলেও অনেক ভারতীয়ই এখনো ছাড়তে চাচ্ছেন না প্রিয় খাবারটি খাওয়ার অভ্যাস। তাই কালোবাজার থেকে ১০ গুণ বেশি দাম দিয়ে হলেও তারা কিনছেন পণ্যটি! ভারতীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, দক্ষিণ ভারতের অভিজাত এলাকাগুলোতে এখনো গোপনে বিক্রি করা হচ্ছে ম্যাগি নুডলস।
তবে চাইলেই কেনা যাবে না। ক্রেতারা যদি আগে থেকেই চেনাজানা থাকেন এবং তাদের বিশ্বস্ত বলে মনে হয়, তবেই চাইলে ক্রেতাদের ম্যাগি নুডলস বিক্রি করছেন দোকানিরা! মাত্র কয়েকদিন আগেও ভারতের বাজারে সুলভ এই পণ্যটি কেনার জন্য যেখানে যে কেউ মাত্র ১০ রুপি দিয়েই কিনতে পারতেন, সেখানে এখন বিক্রেতাদের কাছে নিজেদের পুরোনো চেনাজানা-বিশ্বস্ততা-খাতিরদারি প্রমাণের পাশাপাশি ক্রেতাদের দিতে হচ্ছে ১০২ রুপি করে। অর্থাৎ ১০ গুণেরও বেশি দাম দিয়ে তারা ম্যাগি নুডলসের একটি প্যাকেট কিনছেন, যেখানে আগে এই দামে পাওয়া যেত এমন ১০টি প্যাকেট!
ভারতীয় ক্রেতাদের কেউ যদি এখন তাদের এই ‘অতীব প্রয়োজনীয়’ পণ্যটির প্রয়োজনীয়তা বিক্রেতাদের বোঝাতে পারেন, কেবল তাহলেই হলুদ রঙের প্যাকেটে মোড়া ম্যাগি নুডলস ভালো করে অস্বচ্ছ প্লাস্টিকের মোড়কে ঢেকে পণ্যটি বিক্রি করা হচ্ছে- ঠিক যেভাবে ব্যবসা চলে অবৈধ ঔষধের! ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিরই কিছু এলাকায় চলছে ম্যাগি নুডলসের এই অবৈধ ব্যবসা।
প্রক্রিয়াজাত খাদ্য প্রস্তুত ও বাজারজাতকারী বহুজাতিক সুইস প্রতিষ্ঠান নেসলের এই ভীষণ জনপ্রিয় পণ্যটিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকের উপস্থিতি পাওয়া যাওয়ার পর ভারত সরকার পণ্যটি নিষিদ্ধ করলে দেশটির বাজার থেকে নিজেদের পণ্য সরিয়ে নেয় নেসলে। কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী শেষবার কেনা নুডলসগুলো ফেরত দেয়নি বলেই এখন নুডলসের কালোবাজারি করতে পারছেন তারা। আর বিস্ময়করভাবে ‘পণ্যটির প্রতি বিশ্বস্ত’ ক্রেতাদের অবাধ চাহিদা দেখে দোকানদাররাও নিষিদ্ধ পণ্যটি বিক্রির বিনিময়ে ইচ্ছেমতো দাম চাইছেন। ৭৫ গ্রাম ওজনের নুডলসের প্যাকেটটি একজনের কাছে একবারে সর্বোচ্চ দু’টো করে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা।
দক্ষিণ ভারতের অভিজাত বসন্ত বিহারের এক দোকানদার জানান, নিষেধাজ্ঞা জারির আগে তিনি বিক্রির জন্য যে বিপুল পরিমাণ ম্যাগি নুডলস কিনেছিলেন, সেগুলো ফেরত নিতে যায়নি কেউ। তাই সেগুলো ফেলে দেয়ার বদলে বিক্রিই করছেন তিনি। যেখানে মানুষ যেকোনো মূল্যেই পণ্যটি কিনতে ইচ্ছুক, সেখানে তিনি কেন সে সুযোগ নেবেন না- প্রশ্ন তার। তিনি জানালেন, তার হাতে এখনো বেশ কিছু প্যাকেট রয়েছে নুডলসটির এবং প্যাকেটের সংখ্যা যতো কমবে, ততোই চড়া দামে তিনি বাকিগুলো বিক্রি করবেন।
রাশমি সিনহা নামের এক ২৯ বছরের তরুণী পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার, ওই এলাকারই বাসিন্দা। কালোবাজারির মাধ্যমে ম্যাগি নুডলসের তিনি একজন ক্রেতা। অনুতাপহীন কণ্ঠে এই ম্যাগিপ্রেমিক বললেন, অনেক বছর ধরে আমরা ম্যাগি নুডলস খেয়ে আসছি। তাই এই পরিমাণ সীসা খেয়ে আমাদের শরীর অভ্যস্ত হয়ে গেছে বলেই আমি মনে করি। যদি ভেজালের কারণে কোনো খাদ্য খাওয়া আমাদের বন্ধ করতে হয় এই দেশে বসে, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।’
পশ্চিম দিল্লির জনকপুরী-সি১’র স্থানীয় দোকানদাররাও ম্যাগি নুডলস বিক্রি করছেন এখনো, তবে প্রকাশ্যে নয়। ক্রেতাদের কাছ থেকে ফোনের মাধ্যমে ম্যাগি নুডলসের অর্ডার নিচ্ছেন তারা, তারপর নিজেরাই ক্রেতার দরজায় পণ্যটি পৌঁছে দিয়ে আসছেন। এরকমই এক দোকানের মালিকও বললেন, ‘আমরা কোনো ঝামেলায় জড়াতে চাই না এবং সেজন্যই আমরা আমাদের দোকানে ম্যাগি নুডলস রাখার জন্য খদ্দেরদের অনুরোধও রাখি না। চেনাজানা ক্রেতাদের কাছ থেকে আমরা ফোনের মাধ্যমে অর্ডার নিই এবং বাড়িতে তা পৌঁছে দিয়ে আসি।’