অদ্ভুত অদ্ভুত পরীক্ষা বিজ্ঞানের

0

সিটিনিউজ ডেস্ক : বিজ্ঞান মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গেই যে শুধুমাত্র যুক্ত, তাই নয়, বিজ্ঞান ছাড়া সভ্যতা ভাবাই সম্ভব নয়। কখনও তা মারণ রোগ সারিয়ে মানুষকে দিচ্ছে নতুন জীবন, তো কখনও পৃথিবী ছাড়িয়ে মহাকাশের অন্য প্রান্তে খোঁজ করছে নতুন প্রাণের।

বিজ্ঞানের দুর্দান্ত সব আবিষ্কারের কথা আমরা অনেকেই জানি। সে সব আবিষ্কার তার আবিষ্কারককে অমর করে রেখেছে। আবার এই বিজ্ঞানই বিভিন্ন সময়ে এমন কিছু পরীক্ষা হয়েছে, যেগুলো নিয়ে একটি শব্দই বলা যায়, অদ্ভুত। তেমনই বেশ কয়েকটি অদ্ভুত, ভয়ঙ্কর পরীক্ষার খোঁজ।

মৃত্যুর সময়ে হৃদস্পন্দন: মৃত্যুর ঠিক আগে মানুষের হৃদস্পন্দন কেমন থাকে তা মাপার জন্য এক বিচিত্র পরীক্ষা করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। ১৯৩৮ সালের ৩১ অক্টোবর এক ব্যক্তির কব্জিতে সেন্সর বেঁধে দেন বিজ্ঞানীরা। তারপর তাকে গুলি করে মারা হয়।

শক দ্য পাপি: কুকুর মানুষের কতটা অনুগত, তা বুঝতে একটি প্রশিক্ষিত কুকুরকে নিয়ে পরীক্ষা করেন এক দল বিজ্ঞানী। সঠিক আজ্ঞা পালন না করলেই বিদ্যুতের শক দেয়া হচ্ছিল কুকুরটিকে। প্রতি ভুলের জন্য একটু করে শকের পরিমাণ বাড়ানো হচ্ছিল। কুকুরটির অবস্থা দেখে বেশ কয়েক জন এই পরীক্ষায় আর অংশ না নিয়ে বেরিয়ে যান।

দ্য ফ্র্যাঙ্কেনস্টাইন এক্সপেরিমেন্ট: মৃত ব্যক্তির শরীরে বিদ্যুতের শক দিলে কী হয়, তা দেখার জন্য পরীক্ষা হয়েছে বহু বার। তবে ভয়ঙ্করতমটি সম্ভবত ঘটেছিল ১৮০৩ সালে। এক বিশাল প্রেক্ষাগৃহে একটি মৃতদেহের শরীরে ১২০ ভোল্টের বিদ্যুতের শক দেয়া হয়। শক দেয়ার ফলে মৃতদেহ বিকৃত হয়ে স্টেজে সোজা হয়ে কাঁপতে থাকে। ভয়ে জ্ঞান হারান একাধিক দর্শক।

দ্য এপ অ্যান্ড দ্য চাইল্ড: পশুদের মাঝে কোনও মানবশিশু বড় হলে তার চরিত্রে পশুদের ছাপ পড়ে। কিন্তু উল্টোটাও কি সত্যি? এটা বোঝার জন্য একটি শিম্পাঞ্জির বাচ্চাকে তাদের সন্তানের সঙ্গে মানুষ করতে শুরু করেন এক বিজ্ঞানী। দু’জনকেই আর কারও সঙ্গে মিশতে দেয়া হত না। ফলাফল হয় অদ্ভুত। নয় মাস পরে শিশুটি শিম্পাঞ্জির মতো আচরণ শুরু করে। শিম্পাঞ্জিটিকে এরপর তার নিজের পরিবেশে ছেড়ে দেয়া হলে কিছু দিন সে মারা যায়।

দ্য রিমোট কন্ট্রোলড টেস্ট: রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে কি মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব? এটা বোঝার জন্য একটি ক্ষ্যাপা ষাঁড়ের মাথায় চিপ লাগিয়ে পরীক্ষা করা হয়। আশানুরূপ ফল পেয়ে মানুষের উপর শুরু হয় পরীক্ষা। ছয় এবং সাতের দশকে করা এই পরীক্ষাগুলোর বহু মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল।

মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন: ১৯৭০ সালের মার্চে বিজ্ঞানীরা একটি বানরের মস্তিষ্ক কেটে অন্য একটি বানরের দেহে তা বসিয়ে দেন। মাত্র দেড় দিন বেঁচেছিল এই বানরটি। পরীক্ষার করতে গিয়ে একাধিক বানরের মৃত্যু হয়েছিল। ভয়ঙ্কর এই পরীক্ষার বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল একাধিক সংগঠন।

বেনিফিশিয়াল ব্রেনওয়াশিং: স্কিত্জোফ্রেনিয়ার চিকিৎসায় এক বিচিত্র পদ্ধতির সাহায্য নেন বিখ্যাত চিকিৎসক এউইন ক্যামেরন। তার দাবি ছিল, এই ধরনের কোনও রোগীর মস্তিষ্ককে দীর্ঘ দিন ভাল চিন্তা করতে বাধ্য করা হলে রোগ সেরে যায়। চিকিৎসার অঙ্গ হিসাবে দিনের পর দিন রোগীকে হেডফোনে গান শোনাতেন ক্যামেরন। রোগ নির্মূল হওয়ার বদলে অন্য বিভিন্ন সমস্যা শুরু হয়।

পীতজ্বরের পরীক্ষা: পীতজ্বর ছোঁয়াচে নয়, এটা প্রমাণ করতে এক বিচিত্র পরীক্ষা করেন স্টাবিন্স ফার্থ। ১৯ শতকের গোড়ার এই চিকিৎসক তার বক্তব্য প্রমাণে পীতজ্বর আক্রান্ত রোগীর বমি খেতেন। পরে অবশ্য প্রমাণ হয়, ফার্থ সঠিক বলেননি। রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় এই রোগ।

মানুষ-বানর শঙ্কর: ১৯২৭ সালে সাবেক সোভিয়েতের এক বিজ্ঞানী ইভানভ চেষ্টা করেছিলেন মানুষের সঙ্গে বানরের শঙ্কর তৈরির। পরীক্ষা করতে বহু দিন আফ্রিকায় থেকেছিলেন তিনি। পরীক্ষা ব্যর্থ হয় এবং ইভানভের জেল হয়।

কাটা মস্তিষ্কের পরীক্ষা: ফরাসি বিপ্লবের গিলোটিন পরবর্তী অধ্যায়ের পর বিজ্ঞানীরা একটি বিষয় দেখতে চাইছিলেন, খণ্ডিত মস্তিষ্ক জীবিত রাখা সম্ভব কি না। ১৯২৮ সালে এক সোভিয়েত বিজ্ঞানী এই পরীক্ষায় সফল হন। একটি কুকুরের কাটা মাথা একটি বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে জীবিত রাখেন তিনি। এক দল বিজ্ঞানীর সামনে সেই জীবিত মস্তিষ্ক দেখানোও হয়।

হোমোসেক্সুয়াল পরীক্ষা: কয়েক বছর আগে পর্যন্ত সমকামিতাকে অসুখ হিসেবে দেখা হত। ১৯৭০ সালে তুরান বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক এক সমকামীর মাথায় বিদ্যুতের শক দিয়ে তাকে স্বাভাবিক করার পরীক্ষা শুরু করেন। পরীক্ষা ব্যর্থ হলেও সেই সমকামী মানুষটির আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।

দু’মুখো কুকুর: ১৯৫৪ সালে সোভিয়েত বিজ্ঞানী দেমিকভ সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেন তার আবিষ্কার দিয়ে। তিনি একটি জার্মান শেফার্ডের ঘাড়ের সঙ্গে একটি স্পিতজের মাথা এবং ডান পা জোড়া লাগিয়ে দেন। সবাইকে অবাক করে কুকুরটি হেঁটে দেখায়। কিছু দিনের মধ্যেই অবশ্য প্রাণীটি মারা যায়।

হাতির উপর ড্রাগের পরীক্ষা: একটি হাতিকে ড্রাগ দিলে কী হবে? উত্তর জানার জন্য ১৯৬২ সালে এক দল বিজ্ঞানী একটি হাতিকে ২৯৭ মিলিগ্রাম এলএসডি দেন। মানুষের সহ্যক্ষমতার প্রায় তিন হাজার গুণ এই পরিমাণ ড্রাগ দেয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই হাতিটি মারা যায়।

সাইবর্গ পরীক্ষা: সাইবর্গ কথাটি তখনও বিজ্ঞানীমহলে বিশেষ পরিচিত নয়। সেই সময়ে কেভিন ওয়ারউইক নামে এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী নিজের দেহে মাইক্রোচিপ ঢুকিয়ে সরাসরি ইন্টারনেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। আধুনিক রোবটের যুগে ইনিই প্রথম সফল সাইবর্গ।

হোমিনকিউলাস পরীক্ষা: মধ্যযুগের বিখ্যাত পদার্থবিদ প্যারাসেলসাস একবার এক বিচিত্র জীব তৈরির চেষ্টা করেছিলেন। ১৫০০ সালে তিনি মানুষের শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু ঘোড়ার জঠরে স্থাপন করে নিষিক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন। পরীক্ষাটির নাম দিয়েছিলেন হোমিনকিউলাস। বলা বাহুল্য, তার সেই পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছিল।

আত্মার ওজন: বিংশ শতকের গোড়ায় এক মার্কিন বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন তিনি আত্মার ওজন নির্ণয় করতে পারবেন। মৃত্যুর ঠিক আগে ও পরে একাধিক ব্যক্তির ওজন নিয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, আত্মার ওজন ২১ গ্রাম। যদিও তার এই মতামতকে বিজ্ঞানীরা গুরুত্ব দেননি।

কার্ডিয়াক ক্যাথেটেরাইজেশন: ১৯২৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী ওয়ার্নার ফোর্সম্যান নিজের কাঁধ দিয়ে নিজেই একটি সার্জিকাল ক্যাথিটার হৃদপিণ্ড পর্যন্ত ঢুকিয়ে দেন। পরে নিজেই সেই অবস্থায় এক্স রে করে দেখেন। তার এই অমানষিক পরীক্ষার জন্য তাকে বহিষ্কার করা হয়। পরে ১৯৫৬ সালে প্রথম সফল কার্ডিয়াক ক্যাথেটেরাইজেশনের জন্য নোবেল পান তিনি।

কাতুকুতু পরীক্ষা: কাতুকুতু দিলে মানুষ শারীরবৃত্তীয় কারণে হাসে, না বাকিদের দেখে হাসে এটা বোঝার জন্য নিজের সন্তানের উপর অনবরত কাতুকুতু দিয়ে পরীক্ষা করেন ক্লরেন্স লিউবা নামে এক বিজ্ঞানী। যে সময়ে শিশুটিকে কাতুকুতু দেয়া হত, তখন অন্য কেউ সেখানে থাকতেন না। সাত মাস পরীক্ষার পর দেখা গেল শারীরবৃত্তীয় কারণেই কাতুকুতু দিলে মানুষ হাসে, অন্যদের দেখে নয়।

লেড গ্যাসোলিন: আজকের পৃথিবীর বেশির ভাগ দূষণের জন্য দায়ী টমাস মিডগ্লে জুনিয়রকে। তিনিই প্রথম লেডমিশ্রিত গ্যসোলিন আবিষ্কার করেন এবং এটি ক্ষতিকারক নয় বোঝাতে নিজে সেটি দিয়ে হাত ধুয়ে টানা এক মিনিট সেটির গন্ধ শোঁকেন। তখন তার কিছু না হলেও পরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তিনি।

মৃতকে জীবিত করার পরীক্ষা: ১৯৩০ সালে রবার্ট কর্নিশ নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক বিজ্ঞানী দাবি করেছিলেন, তিনি মৃতকে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে পারেন। বক্তব্য প্রমাণে এক দল শেয়ালের উপর পরীক্ষা করেন তিনি। মৃত শেয়ালগুলোকে অনবরত রক্ত দিয়ে এবং তার নিজের আবিষ্কারের দু’টি ইঞ্জেকশন দেন তিনি। কয়েক মুহূর্তের জন্য সত্যিই শেয়ালগুলির দেহে প্রাণ ফিরে আসে। তবে এরপরে আর কখনও এই পরীক্ষায় সফল হননি তিনি।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.