শোকে পাথর গন্ডামারাবাসী

0

বাঁশখালী প্রতিনিধি:: বাঁশখালীর গন্ডামারার কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে নিহতের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিমবড়ঘোনাবাসী।এই ঘটনায় একই পরিবারের ৫ ভাই আহত হলেও ৪ ভাই এখনো পর্যন্ত বাঁশখালী এবং চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বৃহস্পতিবার(২ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টায় নিহত মোঃ আলীর জানাজা তার নিজ বাড়ীর পাশে অনুষ্ঠিত হওয়ার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ সময় বাঁশখালীর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত হলেও নিহতের স্বজনদের বার বার ক্ষোভ লক্ষ্য করা যায় প্রশাসনের প্রতি। তাদের বক্তব্য প্রশাসন সক্রিয় থাকলে মতবিনিময় সভায় কোন ধরনের বিশৃংখলা এবং মারপিট করার সুযোগ পেত না লেয়াকত বাহিনী।

সূত্রমতে, বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের পশ্চিম বড়ঘোনা কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকায় মত বিনিময় সভায় বুধবার সংঘটিত ঘটনায় প্রকল্প সংলগ্ন খলিলুর রহমানের ৬ পুত্রের মধ্যে ৫ জনই আহত হয়। তার মধ্যে মোঃ ইউনুছ, জামাল উদ্দিন, আলী হোছন, মোঃ সৈয়দ, এখনো পর্যন্ত জামাল উদ্দিন এবং আলী হোছেন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

তবে ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ী আসেন তাদের ভাই আহত মোঃ ইউনুছ।সরজমিনে প্রকল্প এলাকা ও নিহতের বাড়ী সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সবার মাঝে এক অজানা আতংক বিরাজ করছে। তবে এই আতংক পূর্বের মত ভয়াবহ নয়। প্রকল্প সংলগ্ন খলিলুর রহমানের বাড়ী এবং তাদের ৬ ভাইয়ের অধিকাংশ জমিসহ ভিটা পর্যন্ত এই প্রকল্পের জন্য দেওয়ার কথা বার্তা হয় বলে পরিবার সূত্রে জানা যায়।

গত বুধবার মিটিং শুরুর প্রাক্কালে তারা সেখানে অংশগ্রহণ করলে প্রতিপক্ষের গ্র“পের লোকজন তাদের উপর হামলা চালালে এক ভাই অপর ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে ৫ ভাই রোষানলে পড়ে প্রতিপক্ষের। এতে সবাইকে মুমুর্ষ হতে হয় প্রতিপক্ষের হামলায়। এদিকে গতকাল সকালে মোঃ আলী নিহত হওয়ার প্রতিবাদে স্থানীয় জনগণ গন্ডামারা ইউনিয়নের সকাল বাজার এলাকায় মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। তারা এ ঘটনার জন্য লেয়াকত আলীকে দায়ী করে তাকে গ্রেফতারের জন্য প্রশাসনের প্রতি জোরালো দাবী জানান।

তাছাড়া তাদের বক্তব্য লেয়াকত বিগত দিনে ৪টি হত্যাা মামলার আসামী হওয়ার পরও কিভাবে প্রশাসনের সাথে একাত্ম হয়ে মিছিল সমাবেশ করে তা এখন সাধারণ জনগণের জিজ্ঞাসা। রাতে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোঃ আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তবে এ ঘটনায় কে বাদী হবে ভাই নাকি নিহতের স্ত্রী তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় রাতে এই রির্পোট লেখা পর্যন্ত মামলা দায়ের হয়নি বলে থানা সূত্রে জানা যায়।

গতকাল বিকাল ৫ টায় মোঃ আলীর নামাজে জানাজা পারিবারিক কবরস্থানে অনুষ্ঠিত হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কেএম এমরান ভুঁইয়া, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এর চট্টগ্রাম জেলার যুগ্ম পরিচালক জালাল উদ্দিন বিশ্বাস ও উপ-পরিচালক মোঃ ইউনুছ পাটোয়ারী, সহকারী পুলিশ সুপার (সাতকানিয়া সার্কেল) মুফিজ উদ্দীনসহ অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আলমগীর হোসেন। বিকাল ৫ টায় নিহতের বাড়ীর পার্শ্বে খোলা মাঠে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় অংশগ্রহণ করেন আইনশৃংখলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ উপজেলা চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মৌলভী নুর হোসেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল মোস্তফা সংগ্রাম, স্থানীয় চেয়ারম্যান আরিফ উল্লাহ ও এম.এ মালেক মানিক এবং মুফিজুল ইসলাম।

ঘটনার ব্যাপারে রাতে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত আমাদের কাছে কোন মামলা দায়ের করতে কেউ আসেনি। তবে এই মামলায় কে বাদী হয়ে সে ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি যৌক্তিক কারণে নিহতের স্ত্রী বাদী হওয়া প্রয়োজন বলে জানান। তবে ঘটনার সাথে জড়িত কাউকে গ্রেফতার হয়নি। বাঁশখালীর গন্ডামারার ঘটনাকে কেন্দ্র করে একদিকে শোক অপরদিকে ক্ষোভ বিরাজ করছে সাধারণ জনগণের মাঝে। এদিকে গতকাল প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা যায় বিগত দিনে প্রকল্প এলাকায় মাটি কাটা থেকে শুরু করে অন্যান্য আনুষাঙ্গিক কার্যক্রম চলতে থাকলেও গতকাল সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিল।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.