বিচার চাওয়ায় সহকর্মীদের রোষানলের শিকার

0

চকরিয়া(কক্সবাজার) প্রতিনিধি::কক্সবাজারের চকরিয়ায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও তার স্ত্রী কতৃক হামলা, নির্যাতন ও হয়রানির বিরুদ্ধে মামলা ও প্রতিবাদ করতে গিয়ে সহকর্মীদের চরম রোষানলের শিকার হলেন হুমায়রা আজাদী নামে এক প্রধান শিক্ষিকা।

সহকর্মী শিক্ষকদের আইনগত সহযোগীতা পাওয়াতো দুরের কথা বরং ভূক্তভোগি ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে গিয়ে কতিপয় শিক্ষক শিক্ষিকা উল্টো তার শাস্তির দাবিতে চকরিয়ার সর্বত্র সরব ভূমিকায় মেতে রয়েছে।এ ঘটনায় চকরিয়ার সচেতন মহলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

অনেককে বলতে শুনাগেছে শিক্ষকরা জাতীর বিবেক কিন্তু সেটা তারা জলাঞ্জলি দিয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও প্রধান শিক্ষিার দ্বন্ধ নিয়ে তারা পক্ষে বিপক্ষে মাঠে নেমেছে। কিন্তু কেউ সমাধানের পথ খুঁজছেনা।আবার কেউ বলছে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ সেখানে আবার ভূক্তভোগী শিক্ষিকার শাস্তি চাওয়া এ সবের কি প্রয়োজন ছিল। বর্তমানে এ ঘটনা নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চকরিয়া সহ কক্সবাজার জেলায় আলোচনার ঝড় বইছে।

ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট রিংভং দক্ষিণ পাহাড় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ও মালুমঘাট এলাকার বাসিন্দা হুমায়রা আজাদী অভিযোগ করেন গত ২৮জানুয়ারী সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আলম ও তার স্ত্রী শাহেদা জাফর বিদ্যালয়ে ঢুকে উপজেলা চেয়ারম্যানের কথা মত কাজ না করায় প্রধান শিক্ষিকা সহ ৩ জনকে পিঠিয়ে আহত ও নাজেহাল করেন। এসময় প্রধান শিক্ষিকাকে উদ্ধারে সহকারী শিক্ষিকা শারমিন আক্তার কানিছ ও প্রধান শিক্ষিকার ভাই জিয়াবুল হক এগিয়ে গেলে তাদেরকেও মারধর করা হয়েছে। তাৎক্ষনিকভাবে তিনি বিদ্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মারধর ও নাজেহালের বিষয়টি উত্থাপন করেন । পরে এ ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি তিনজনের নামে কক্সবাজার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা (নং-১৭৮) দায়ের করেন। মামলাটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

এদিকে এঘনা নিয়ে চকরিয়ায় কর্মরত প্রথিমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষকারা গত ৩ ফ্রেরুয়ারী চকরিয়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে নির্যাতিতা প্রধান শিক্ষিকা হুমায়রা আজাদীর শাস্তিদাবী ও উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার চেয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। ফলে হুমায়রা আজাদী কোন উপায় না দেখে প্রতিকার চেয়ে শনিবার মন্ত্রী পরিষদের সচিব বরাবরে আবারো একটি লিখিত আবেদন করেছেন। ওই আবেদনে তিনি চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্তকালীন মামলা ভিন্নখানে প্রবাহিত করা,উস্কানি ও হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনেন।

আবেদনের সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সাল থেকে রিংভং দক্ষিণ পাহাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করে আসছেন হুমাইরা আজাদী। কিন্তু চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে স্কুল চলাকালীন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার স্ত্রী গিয়ে মালেকা বেগম নামে এক মহিলাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ ও যোগদানপত্র প্রদানের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। এতে হুমাইরা অক্ষমতার কথা ব্যক্ত করেন। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার স্ত্রী ছাত্রছাত্রীদের সামনে হুমাইরাকে মারধর, ও লাঞ্ছিত করে। এ ঘটনায় ৩১ জানুয়ারি তিনজনের নামে কক্সবাজার জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা (নং-১৭৮) দায়ের করেন। মামলাটি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এ মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা, হয়রানি ও চাপ সৃষ্টি করাসহ হুমাইরাকে মানসিকভাবে দুর্বল করার জন্য চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাহেদুল ইসলাম ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা খোরশেদুল আলম চৌধুরী ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলা প্রত্যাহারের দাবি নিয়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষকদের গত ৩ ফেব্রুয়ারি সমাবেশ করতে বাধ্য করেছেন। ।

এমনকি হুমাইরার বিরুদ্ধে দেয়া একটি স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন ইউএও। সমাবেশে কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সরকারি স্কুলের শিক্ষক হুমাইরা আজাদীকে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলেও আবেদনে উল্লেখ করেন। বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাশাপাশি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের সচিব ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবারে অনুলিপি দেন।

প্রধান শিক্ষিকা হুমাইরা আজাদী সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানান, ২০০৫ সালে নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে রিংভং দক্ষিণ পাহাড় রেজি: প্রাথমিক প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর তার প্রতিষ্টিত বিদ্যালয়ে ২০১১ সাল পর্যন্ত সহকারী শিক্ষিকা হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন চকরিয়া পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড পালাকাটা মৃত আহমদ সাহাব উদ্দীনের স্ত্রী মালেকা বেগম। পরে শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে মালেকা বেগম পানি উন্নয়ন বোর্ডের চাকুরিতে যোগ নেন তিনি। এর মধ্যে ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি সরকারিকরণ হয়। সরকারি হওয়ার পর ফের বিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় প্রবেশের চেষ্টা করে মালেকা বেগম।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.