কক্সবাজারে ফের সক্রিয় আরএসও

0

শহিদুল ইসলাম, উখিয়া (কক্সবাজার): চট্টগ্রাম, পার্বত্য বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্থান এখন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেন (আরএসও) এর উগ্র জঙ্গী সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ঘাঁটিতে পরিনত হয়েছে। এদের অর্থায়নে নির্মিত প্রতিষ্ঠানে দিব্যি এরা নিয়মিত ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্ট প্রশাসন আরএসও’র আস্তানায় হানা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের অত্যাধুনিক অস্ত্র ভান্ডার অরক্ষিত রয়েছে। ফলে এখনো আরএসও উগ্র সন্ত্রাসীরা এক প্রকার আড়ালে-আবডালে থেকে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে সামনে রেখে এরা যে কোন মহুর্তে দেশে নাশকতা ঘটাতে পারে বলে অনেকেই আশংকা করছেন। আরএসও’র এসব উগ্র জঙ্গী গোষ্টির নেটওয়ার্ক কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবির থেকে রাজধানী ঢাকা পর্যন্ত বিস্তৃতি রয়েছে।
আরএসও’র একটি সুত্র জানায়, ২০০০ সালের দিকে আরএসও মিয়ানমার ভিত্তিক এ সংগঠনটি ভেঙ্গে ৪ টুকরা হয়ে ৪টি আলাদা নতুন সংগঠন গড়ে উঠে। সংগঠন গুলো হল যথাক্রমে ইত্তেহাদুল জমিইয়াদুত রোহিঙ্গা, রোহিঙ্গা ঐক্য সংগঠন, রোহিঙ্গা আওয়াজ, হেকমাতুন ইনসানিয়া নামের এ ৪ সংগঠনের আরএসও সন্ত্রাসীরা সক্রিয় রয়েছে।

চট্টগ্রামের একটি সিন্ডিকেট রোহিঙ্গাদের নামে বিদেশ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তা রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা দেওয়ার পরিবর্তে নিজেরা সুকৌশলে আতœসাৎ করে। এসব আরএসও উগ্র জঙ্গী সন্ত্রাসীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থার চোখ ফাঁকি দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে গড়ে তুলেছেন মা ক্রোনা নামের একটি প্রতিষ্ঠান এর প্রধান হচ্ছেন মিয়ানমারে মংডু তুমব্রু এলাকার শামসুল আলম (পান্ডু মেম্বারের ভাগনী জামাই টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের পানখালী গ্রামে অবস্থান করছেন)। স্বনির্ভর সমাজ নামে রামু উপজেলায় একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এর প্রধান হচ্ছেন মিয়ানমারের বুচিদং ঠং বাজার এলাকার রোহিঙ্গা মৌলভী আবদুল হামিদ। টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের আবদুল হামিদের একটি টিন শেড বাড়ি এবং কক্সবাজার জেল গেইট এলাকায় ৫ম তলা বিশিষ্ট একটি ভবন রয়েছে। যা তদন্ত এবং অনুসন্ধান করলে এর ব্যাপক সত্যতা পাওয়া যাবে।

অভিযোগ উঠছে, চট্টগ্রামের আচ্ছাতুন হেকমাতুন ইনসানিয়া সংগঠনটির ব্যানারে আরএসও জঙ্গীরা সক্রিয় থেকে বিদেশ ফান্ড সংগ্রহের কাজ পুরোদ্যমে চালিয়ে আসছে। কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাও ইসলামাবাদ এলাকার ইত্তেহাদুল নামের একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেটা আরএসও জঙ্গীদের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা করা হয়। ঈদগাও’র কালাম মেম্বার রোহিঙ্গা ছালামত ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে এ প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়ে আসছে। এছাড়াও আরএসও অর্থায়নে কক্সবাজারের কলাতলিতে ২টি কটেজ রয়েছে যেটা হোটেল বেবিউ’র পূর্ব পাশে অবস্থিত। মিয়ানমারের বুচিদং পুইমালি গ্রামের সালামত খান বর্তমানে চট্টগ্রামের চুনতি এলাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আরএসও জঙ্গীদের অর্থায়নে কক্সবাজারে আরো ৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলো যথাক্রমে মহিদুল এলমি, আদর্শ শিক্ষা নিকেতন (কলাতলি) এর নেতৃত্বে রয়েছে খতিব জাবের এবং অপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আদর্শ শিক্ষা নিকেতন (বিসিক) নামের প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্বে ও অর্থের যোগান দিচ্ছে মৌলভী জামাল। কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের মোঃ হোছন, আমান উল্লাহ এমআরসি নং ৮৪৭৫, শেড নং ৮০৮, ব্লক নং সি, রুম নং-৪, বর্তমানে টেকনাফের নয়াপাড়া মোছনী ক্যাম্পে অবস্থান করছে। এছাড়াও হেলথ ফাউন্ডেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানে জড়িত ছৈয়দ হোসেন প্রকাশ সিরাজ এমআরসি-১৮০৭, ব্লক এ কক্সবাজার ডিজিটাল হাসপাতালে অর্থায়ণ করার চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া ক্রোনার প্রধান শামশুল আলম, আবদুল হামিদ, ছালামত খাঁন, হিসাব রক্ষক আবু আবদুল্লাহ, আলী ছেলে সেলিম কক্সবাজার হাশেমীয়া মাদ্রাসা এলাকায় অবস্থান করছে। এসব উগ্র আরএসও জঙ্গী সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে গ্রেফতার অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় তারা দেশের বিভিন্ন পাহাড়ী অঞ্চলে সশস্ত্র অবস্থায় অবস্থান নিয়েছে। এছাড়াও আরএসও’র সাবেক প্রধান ডাক্তার ইউনুছ বর্তমানে আমেরিকাতে থাকলেও রোহিঙ্গাদের নামে সংগৃহীত অর্থ নিয়মিত কালেকশন করে চলছেন। সীমান্ত জেলার কক্সবাজার ও বান্দরবানের গহীন স্থানে এখনও অনেক আরএসও সদস্য আতœগোপনে রয়েছে বলে বিশ্বস্ত সুত্রে জানা গেছে।

অনিবন্ধিত ক্যাম্পের আরএসও নেতা জঙ্গী আবু ছিদ্দিক এ প্রসঙ্গে জানান, র‌্যাবের অভিযানের ভয়ে অনেকেই ক্যাম্প ছেড়ে লাপাত্তা হয়েছে। পাশ্ববর্তী সীমান্ত উপজেলা নাইক্ষ্যংছড়িতে জনৈক প্রভাবশালীর আশ্রয়ে রয়েছে শতাধিক আরএসও সদস্য। মিয়ানমারের আরএসও’র প্রভাবশালী নেতা মৌলভী আবদুর রহমানের ভাতিজা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা জঙ্গী মোঃ নূর বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে শুরু করে কক্সবাজার জেলায় আরএসও’র অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ওইসব প্রতিষ্ঠানে তারা আতœগোপন করেছে। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করলে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সম্পর্কে ব্যাপক তথ্য ও উপাত্তের সন্ধান পাওয়া যাবে।
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের ইনচার্জ মোঃ শামসুদ্দোহা বলেন, এ ধরনের কোন তথ্য আমার হাতে নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উখিয়া সার্কেল) চাইলাউ মারমা বলেন, সরকার জঙ্গী দমনে বদ্ধপরিকর। জঙ্গীদের কোনভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এমনকি কোন জঙ্গী বা সন্ত্রাসী গোষ্টিকে দেশের ভূ-খন্ড ব্যবহার করতে দেওয়া হবে না।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.