সিটিনিউজ ডেস্ক::জঙ্গিবাদ ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ‘যৌথ ঘোষণা’ স্বাক্ষরিত হয়েছে। এতে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক, শ্রীলংকার পুলিশের মহাপরিদর্শক পুজিৎ সেনাধি বান্দ্রারা জয়াসুন্দ্রাসহ সম্মেলনে অংশ নেয়া দেশগুলোর প্রতিনিধিরা স্বাক্ষর করেন।
বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রধানদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শেষ দিন মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।
আইজিপি জানান, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রধান, ঊর্ধ্বতন পুলিশ প্রতিনিধি এবং বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
যৌথ ঘোষণায় দক্ষিণ্ এশীয় অঞ্চল এবং বিশ্বব্যাপী অপরাধের ধরণ চিহ্নিতকরণ, আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে একটি কৌশল উদ্ভাবন, ইন্টারপোল সদস্য দেশসমূহের মধ্যে এনসিবির মাধ্যমে ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশন, প্রধান পুলিশদের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি প্লাটফর্ম গঠন, কাউন্টার টেররিজমে সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে তথ্য বিনিময়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিশ্বের নেতৃস্থানীয় সংস্থার মধ্যে পেশাগত সম্পর্ক বৃদ্ধি, সন্ত্রাসবাদ এবং আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমনে তথ্য প্রযুক্তি নেটওয়ার্ক স্থাপন, ফরেনসিক ল্যাবরেটরি এবং ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি, মানি লন্ডারিং, সাইবার ক্রাইম এবং অর্থনৈতিক অপরাধ দমনে সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহযোগিতা বাড়ানো, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে অপরাধ দমনে অভিজ্ঞতা বিনিময়ের লক্ষ্যে যৌথ সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণ আয়োজন ইত্যাদি গুরুত্ব পেয়েছে।
এ কে এম শহীদুল হক বলেন, পুলিশের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারপোলের সহযোগিতায় সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো ‘ওয়ান টু ওয়ান কমিউনিকেশনের (সরাসরি যোগাযোগ) ব্যাপারে একমত হয়েছে। জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের তথ্য বিনিময়ের পাশাপাশি, এক দেশের জঙ্গি অন্য দেশে লুকিয়ে থাকলে তাকে হস্তান্তরে দেশগুলো কাজ করবে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি জানান, ফেসবুকের নীতিমালায় কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করার সুযোগ না থাকায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ সমঝোতা স্মারক হয়নি। তবে ফেসবুক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে একজন ফোকাল পয়েন্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে। ওই ফোকাল পয়েন্ট ফেসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে।
মিয়ানমার মাদক সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করতে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে জানিয়ে এ কে এম শহীদুল হক বলেন, মিয়ানমার ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম ও চীন সমঝোতা স্মারক সাক্ষরে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
সম্মেলনের সমাপনী অনুষ্ঠান মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়। সমাপনী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল এ কে এম শহীদুল হক এবং অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন। প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে চিফস অব পুলিশ কনফারেন্সকে একটি সফল সম্মেলন হিসেবে অভিহিত করেন। তারা এ ধরনের সম্মেলন আয়োজন আগামীতেও অব্যাহত রাখার জন্য ইন্টারপোল এবং বাংলাদেশ পুলিশ কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বাংলাদেশে অবস্থানকালে আন্তরিক আতিথেয়তা প্রদানের জন্য বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান এবং বাংলাদেশ পুলিশের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানান। সমাপনী অনুষ্ঠানে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত পুলিশ সদস্য এবং সন্ত্রাসবাদের ভিকটিমদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
সমাপনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘বাংলাদেশে আইএস বা আন্তর্জাতিক কোনো জঙ্গি সংগঠনের অস্তিত্ব নেই। যারা আছে তারা দেশীয় জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। তবে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আন্তর্জাতিক কোনো সংগঠন ‘লোকাল’ জঙ্গিদের প্রভাবিত না করতে পারে।’
সোনারগাঁও হোটেলে রবিবার শুরু হওয়া তিন দিনের ‘চিফস অব পুলিশ কনফারন্স’শেষ হলো আজ। সম্মেলনে ইন্টারপোল মহাসচিবসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পুলিশ প্রধানসহ ১৪টি দেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনে বিভিন্ন বিষয়ে ১৪টি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়। সম্মেলনে আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনাই, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নেপাল, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মিয়ানমার, ভিয়েতনামের পুলিশ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। ইন্টারপোল ও বাংলাদেশ পুলিশের যৌথ উদ্যোগে এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য-রিজিওনাল কো-অপারেশন ইন কার্বিং ভায়োলেন্ট অ্যাক্সট্রিমিজম ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (উগ্র চরমপন্থা ও বহুজাতিক অপরাধ দমনে আঞ্চলিক সহযোগিতা)।