বারীয়া দরবার হক দরবার : বদরুদ্দোজা বারী

0

সিটিনিউজবিডি ডেস্ক :   বারীয়া দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন পীরে তরীকত আল্লামা শাহ সুফী সৈয়দ বদরুদ্দোজা বারী বলেছেন, বারীয়া দরবারের লাখ লাখ অনুসারীর প্রতি আমার আহ্বান, জীবনকে আল্লাহ পাক, হুজুরপুর নূর হযরত (দ.) ও জামানার শ্রেষ্ঠতম মুজাদ্দেদ, সুলতানুল আউলিয়া গাউসুল আলম হযরত শাহজী পীর ছাহেব কেবলা (রহ.) এর অনুসরণে গড়ে তুলুন। তিনি বলেন, হযরত শাহজী বাবা (রহ.) যা চেয়েছেন, মহান আল্লাহ তা করে দিয়েছেন। তাঁর হাতে যারা হাত রাখার সৌভাগ্য অর্জন করেছেন, কাল কেয়ামতের মাঠে তার তার সুফল পাবেন।

আল্লামা বদরুদ্দোজা বারী বলেন, বারীয়া দরবার হচ্ছে হক দরবার। এই দরবারে বাকীর কোনো রীতি নেই। সবই নগদ। দিলকে পরিষ্কার করে দরবারের উসিলায় যা চাইবেন আল্লাহ পাক তাই বকশে দেবেন।

চট্টগ্রামের চান্দগাঁওস্থ দরবারে বারীয়া শরীফের বার্ষিক ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল ও হযরত শাহজী পীর ছাহেব (রহ.)-এর ওরশ শরীফ উপলক্ষে সভাপতির ভাষণে আল্লামা বদরুদ্দোজা বারী উপরোক্ত বক্তব্য রাখেন। তিনি আখেরী মুনাজাতও পরিচালনা করেন।

দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত শাহজী বাবার ১২তম ওরশ মাহফিলে এর আগে বোখারী শরীফসহ অন্যান্য খতম সম্পন্ন হয়। ২ মার্চ সকালে কূলের ফাতেহা অনুষ্ঠিত হয়।

বিকেলে আল আমিন কামিল মডেল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মাহফিলে দরবারের সেজো শাহজাদা, রওনকে দরবারে বারীয়া শরীফ আলহাজ্ব মাওলানা সৈয়দ দস্তগীর বারী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, আমাদের মুরশিদ এই দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহজী বারী (রহঃ) ছিলেন আল্লাহপাকের মাহবুব ওলী। তিনি এই দরবারকে একটি প্রকৃত আশেকে রসুলের দরবার হিসেবে রেখে গেছেন। কাল হাশরের মাঠে আপনাদের কাফেলার তিনি নেতৃত্ব দেবেন। এই জামানায় আর তেমন আল্লাহপাকের ওলী আসবেন কিনা সন্দেহ। তিনি যাঁকে এই দরবারের সাজ্জাদানশীন হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে গেছেন, তিনি একযুগ ধরে তাঁর মন-প্রাণ দিয়ে দরবারের খেদমত করে যাচ্ছেন।

আল আমিন কামিল মডেল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মাহফিলে
আল আমিন কামিল মডেল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত মাহফিল

এবারের মাহফিলই বলে দিচ্ছে যে বারো বছরের পরীক্ষায় তিনি সফল হয়েছেন। কামেলিয়তের জগতে একটা হিসাব আছে। বলা হয় একজন কামেল ওলীর দরবারে যদি কোন সাধক খেদমতে নিয়োজিত থাকেন , ওলির নেগাহ করম যদি তার উপর থাকে তবে একযুগ তথা ১২ বছরে সেই সাধক সিদ্ধিলাভ করতে সক্ষম হন। এই ওরশ মুবারকে যোগ দিয়েছেন আপনারাও যারা, শাহজী বারী বাবা (রহঃ)-এর এই দরবারকে কেন্দ্র করে আল্লাহ এবং রসুল (দঃ)-এর পথে দায়েম-কায়েম আছেন, যারা নিজের চর্ম চক্ষু দিয়ে না দেখে শাহজী বাবাকে কলবের চোখ তথা জ্ঞান চক্ষুতে দেখেছেন, অনুভব করেছেন, তারাও এবার মাহফিল থেকে নিজ নিজ যোগ্যতা অনুযায়ী নিজেদের ঝুলি ভরে নিয়ে যেতে পারবেন বলে আমি বিশ্বাস করি।

সৈয়দ দস্তগীর বারী বলেন, চর্ম চক্ষু দিয়ে আল্লাহর ওলীকে দেখলে আপনি আপনার অভ্যাস ও স্বভাবই দেখতে পাবেন, আর যদি কলবের চোখ তথা জ্ঞানের চক্ষু দিয়ে ওলী আল্লাহকে দেখেন, অনুভব করেন, তখন আপনার সামনে কামেল ওলী মারেফতের দুনিয়া উন্মুক্ত করে দেবেন। মাঝে আর কোনোরকম পর্দা থাকবেনা। আপনার সাধনা সফল হবে, জীবনও ধন্য হবে।

আলেম-ওলামা ও বুজুর্গদের এক রুহানী মেলায় পরিণত হয় পুরো মাহফিল। যারা তকরির পেশা করেন এবং উপস্থিত ছিলেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হচ্ছেন, খতিবে বাঙাল আল্লামা ওবায়দুল হক নঈমী, আল্লামা কাযী মঈনুদ্দিন আশরাফী, আল্লামা আশরাফুজ্জামান আল কাদেরী, অধ্যাপক আল্লামা মাহবুবুরর রহমান, আল্লামা আবুল কাশেম নূরী, অধ্যক্ষ আল্লামা আবদুল আলিম রেজভী, আল্লামা আবু সুফিয়ান আবেদী আল্ কাদেরী, বারীয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আল্লামা ইসমাইল নোমানী, ভাইস প্রিন্সিপাল আল্লামা আবদুল আজিজ আনোয়ারী, প্রভাষক মাওলানা রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী, মাওলানা জসীম উদ্দিনসহ অনেক ওলামায়ে কেরাম।

এলাকার জাতীয় সংসদ সদস্য মইনুদ্দিন খান বাদলও বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলামও বক্তব্য রেখেছেন। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন আজকের সূর্যোদয়-এর প্রধান সম্পাদক খোন্দকার মোজাম্মেল হক, আল্লামা শামসুদ্দিন আল কাশেমী, আল্লামা বশির উদ্দিন আল কাশেমী সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। ১ মার্চ খতমে কোরআন, খতমে বোখারী শরীফ, খতমে কসিদায় গাউছিয়া, খতমে কছিদায় বোরদা সম্পন্ন হয়। এই খতমের অনুষ্ঠানেও সাজ্জাদানশীন পীর ছাহেব হযরত সৈয়দ বদরুদ্দোজা বারী উপস্থিত ছিলেন। যোগ দিয়েছিলেন খতিবে বাঙাল আল্লামা ওবায়দুল হক নঈমীও।

২৮ জানুয়ারী থেকে ভক্ত, আশেকানরা আসতে শুরু করেন। দরবার, মসজিদ ও মাদ্রাসার পুরো এলাকাকে অনুপম আলোক সজ্জায় সজ্জিত করা হয়। দরবারের প্রতিষ্ঠাতা হযরত শাহজী পীর ছাহেব (রহ.) ও দাদাজান কেবলা সৈয়দ আবদুর রহিম (রহ.)-এর মাজার জেয়ারত করেন ভক্ত-অনুসারীরা। পুরো এলাকাতেই ছিল উৎসবের আমেজ। শাহজী পীর ছাহেব (রহ.) দুনিয়া থেকে পর্দ্দা করার এক যুগপূর্তিতে দরবারের রওনক যেন উপচে পড়ে। প্রতিবছর ভক্ত-মুরিদানের উপস্থিতি বেড়েই চলেছে। এবার যেন বাঁধভাঙ্গা জোয়ারের মতো আশেকে রাসুলদের আগমন ঘটে। এই উপলক্ষে চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদী, দৈনিক পূর্বদেশসহ পত্র-পত্রিকায় ২ মার্চ শাহজী পীর ছাহেবকে নিয়ে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। মাদ্রাসা ও এতিমখনার ছাত্ররা বের করে বেশ কটি সংকলন।
হযরত শাহজী পীর ছাহেব (রহ.) আল্লাহর রাসূল (দ.)-এর আওলাদ। তিনি লক্ষ্মৌ, দিল্লী, আজমীর, লাহোরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রখ্যাত ওলী-আবদালদের ১৭ জনের কাছ থেকে বিভিন্ন ত্বরীকায় খেলাফত লাভ করেন। জীবনের শেষভাগে তিনি সব ত্বরীকার নির্যাস নিয়ে ‘আলীয়া কাদেরীয়া বারীয়া’ ত্বরীকা তৈরি করেন। সেই ত্বরীকাতে দরবার পরিচালিত হচ্ছে।

হযরত শাহজী পীর ছাহেব প্রায় প্রতিবছর হজ্ব, ওমরা পালন করতেন। প্রায় শতবার তিনি রাসুলের দরবারে হাজিরা দিয়েছেন। এ ছাড়া নবী-রাসূল ও আউলিয়ায়ে কেরামের মাজার জিয়ারতের উদ্দেশ্যে বাগদাদ, কূফা, নজফ, কারবালা, দিল্লী, আজমীর, বোম্বাই, লক্ষ্মৌ, লাহোর, জর্দান, ফিলিস্তিন সফর করেছেন। তাঁর উপস্থিতিতে দরবারে বারীয়া শরীফের মাহফিলে এসে বক্তব্য রাখেন গাউসুল আজম বড় পীর ছাহেবের আওলাদ ও সাজ্জাদানশীন বুজুর্গরা। এসেছেন দিল্লীর মাহবুবে পাক নিজামুদ্দিন আউলিয়ার আওলাদ পীরে জামিন শাহ (রহ.)। তাঁর শাহজাদা ও দিল্লীর দরবারের সাজ্জাদানশীন আল্লামা খাজা আহমেদ নিজামী বর্তমান পীর সাহেবের সময়ও অনেকবার ওরশ মাহফিলে এসেছেন। আরও একটি বিষয় লক্ষ্যণীয়।

এই দরবারের আমন্ত্রণে ভারত উপমহাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ রুহানী সম্রাট গরীবে নেওয়াজ খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী (রহ.)-এর সর্বশেষ আওলাদ তাজুল আরেফিন জয়নাল আবেদীন চিশতীও বাংলাদেশে আসেন। বর্তমান পীর ছাহেব সৈয়দ বদরুদ্দোজা বারীর সভাপতিত্বে আল্লামা জয়নাল আবেদীন চিশতী বঙ্গবন্ধু কনভেনশন হলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন।

কঠিন রেয়াজত ও সাধনার মাধ্যমে শাহজী বাবা নামে খ্যাত শাহ-সুফী হাফেজ সৈয়দ আবদুল বারী শাহ (রহ.) ফানাফির রাসুল, ফানাফিল্লাহ ও বাকা বিল্লাহ স্তরে পৌঁছেন। দেশের অনেক মন্ত্রী, সচিবসহ খ্যাতিমান ব্যক্তিরা তার কদমে হাজিরা দিতেন। তিনি বার বার সরকারি হজ্ব কাফেলায় আমীরুল হজ্ব ছিলেন। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীরাও তার নেতৃত্বে হজ্ব সমাপন করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.