নিউজ ডেস্ক:: ‘মিজারুল কায়েস শুধু একজন দক্ষ কূটনীতিকই ছিলেন না, ছিলেন একজন আদর্শবান মানুষ। সাহিত্য অনুরাগী আর দেশপ্রেমী। মানুষকে আনন্দ দেয়া ছিল তার স্বভাব। ক্ষণজন্মা এই বাঙালির অকাল মৃত্যুতে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের ফাঁকে ফাঁকে স্মৃতিকথা থেকে এমন কথাই উঠে আসছিল সদ্য প্রয়াত ব্রাজিলে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. মিজারুল কায়েসকে নিয়ে। সোমবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তার মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সর্বস্তরের মানুষ। শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় এই কূটনীতিককে স্মরণ করছেন তারা।
সোমবার সকাল ১০টার দিকে শহীদ মিনারে নেয়া হয় মিজারুল কায়েসের মরদেহ। এরপর থেকে মিজারুল কায়েসের মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল্লাহ ও বিসিএস ১৯৮২ ব্যাচের পক্ষ থেকে সভাপতি মিজানুর রহমানসহ আরো অনেকে। এছাড়া বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র, ঢাকা কলেজ, ঢাকাস্থ পাকুন্দিয়া ছাত্র সংগঠন, সাবেক কূটনীতিকরা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও ছুটে আসেন প্রিয় মানুষটির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনে। শ্রদ্ধা নিবেদনের পাশাপাশি তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণও করেন শুভানুধ্যায়ীরা।
স্মৃতিচারণকালে সাবেক রাষ্ট্রদূত আনোয়ারুল আলম বলেন, মিজারুল কায়েস শুধু কূটনীতিক হিসেবে দক্ষ ছিলেন না। তিনি শিল্পগুণে ভরপুর ছিলেন।
মিজারুল কায়েসের মতো আদর্শবান মানুষ আমি জীবনে কম দেখেছি।
তিনি আরো বলেন, মোরশেদ খান যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী তখন একটি উইংয়ের মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মিজারুল কায়েস তার কক্ষে বঙ্গবন্ধুর একটি পোট্রেট টাঙিয়েছিলেন। এই পোট্রেটটি সরাতে বলা হয়। সেই বার্তাটি আমিই তাকে পৌঁছে দেই। কিন্ত কায়েস আপোষ করেননি। ওই ছবি নামিয়ে ফেলতে অস্বীকৃতি জানান তিনি। পরে কায়েসের অফিস কামড়াটিই বদলে দেয়া হয়। এমন সাহসী, আদর্শবান ও দৃঢ়চেতা মানুষ আমি আমার জীবনে খুব কম দেখেছি।
প্রয়াত মিজারুল কায়েসের বড় ভাই মেজর জেনারেল (অব.) ইমরুল কায়েস বলেন, মা-বাবার কাছে থাকতে চাইত কায়েস। তাকে বনানী কবরস্থানে তাদের পাশেই কবর দেয়া হবে। এর আগে হেলিকপ্টারযোগে তাকে মঙ্গলবার কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া নেয়া হবে। সেখানে আরেকটি জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হেলিকপ্টার চেয়েছিলাম, তিনি বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার দিয়েছেন। এতে করেই মিজারুল কায়েসকে ওইদিন ঢাকা আনা হবে।
দুপুর ১২টা পর্যান্ত মিজারুল কায়েয়েস প্রতি সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন চলে। এর আগে, সোমবার সকাল ৮টার দিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মিজারুল কায়েসের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, গত ১১ মার্চ ব্রাজিলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মিজারুল কায়েস। ২০১৪ সাল থেকে ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। এর আগে তিনি রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালদ্বীপে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ১৯৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা মিজারুল কায়েস ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। পেশাদার কূটনীতিক জেনেভা, টোকিও এবং সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ মিশনের বিভিন্ন পদে কাজ করেছেন। এছাড়া তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সার্ক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, অর্থনৈতিক বিষয়াবলী, আনক্লস ও বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্বও পালন করেছেন।