আনোয়ারায় বন্দর বধ্যভূমির প্রকল্প অর্থাভাবে ঝুলে আছে

0

জাহেদুল হক,আনোয়ারা : আনোয়ারায় সবচেয়ে বেশি আলোচিত বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ দীর্ঘদিন ধরে অর্থাভাবে ঝুলে আছে। ২০১০ সালের ১৮ নভেম্বর এ নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন তৎকালীন সংসদ সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু। ইতিমধ্যে কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর ও স্মৃতিস্তম্ভের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় কমপ্লেক্স নির্মাণ সম্ভব হয়নি।

স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান,উপজেলার বন্দর গ্রামের বধ্যভূমিতে ১৯৭১ সালের ২০ মে ভোর চারটা থেকে সকাল নয়টা পর্যন্ত বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী ১৫৬ জন মানুষকে অমানুষিক নির্যাতনের পর গুলি করে মারা হয়। এতে পাকিস্তানী বাহিনীকে সহায়তা করে স্থানীয় রাজাকার,আলবদর ও আলশামস বাহিনী। এসব শহীদ মুক্তিযোদ্ধার স্মৃতি রক্ষার্থে বধ্যভূমির ৫০ শতক সরকারি খাস জমির উপর আকর্ষণীয় কমপ্লেক্স ও স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণের উদ্যোগ নেয় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজে সহায়তা করছে বিভিন্ন ব্যাংক ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা। এরইমধ্যে ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে কমপ্লেক্সের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে যার পুরোটাই দিয়েছেন এক মুক্তিযোদ্ধা। বর্তমানে বধ্যভূমিতে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ শেষ হলেও টাকার অভাবে ঝুলে আছে স্মৃতি কমপ্লেক্সের নির্মাণ কাজ।

জানা গেছে, ১৯৭১ সালে এখানে ১৫৬ জন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ওইসব শহীদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ১৫৬টি পিলার হবে। আর প্রতিটি পিলারে একেক জনের ছবি থাকবে। ১৯৭১ সালের বিজয়ের স্মরণে ৭১ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন টাওয়ার হবে কমপ্লেক্সে। আর শোকের প্রতীক হিসেবে চারদিকে কালো মার্বেল পাথর খচিত আটটি পিলার থাকবে। ১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২০ বছর সময়কে স্মরণে রাখার জন্য অর্ধচন্দ্রাকারে ২০টি পিলার থাকবে। কমপ্লেক্সে সম্পূর্ণ আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর বিশালাকার মিলনায়তন থাকবে। এতে গ্রন্থাগার,জাদুঘর ও সেমিনার কক্ষ থাকবে। আর ছাদের উপর থাকবে খোলা মঞ্চ। এ স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে ব্যয় হবে আড়াই কোটি টাকা। এরইমধ্যে প্রায় ৪৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

কমপ্লেক্সের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপনা অংশীদার ও বারশত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্ বলেন,বীর শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মিত কমপ্লেক্সের কাজ করতে পেরে আমরা গর্ববোধ করছি। তবে অর্থ সংকটের কারণে আপাতত কাজ বন্ধ আছে। বন্দর বধ্যভূমি স্মৃতি কমপ্লেক্স বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব মুক্তিযোদ্ধা লিয়াকত আলী চৌধুরী জানান,কমপ্লেক্সটির নির্মাণ কাজে আড়াই কোটি টাকা ব্যয় হবে। ইতিমধ্যে আমরা এ কাজে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা ব্যয় করেছি। তারমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরো ৩৫ লাখ টাকা পাবে। কমপ্লেক্সের ৪৫ শতাংশ কাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। বাকি কাজ এখন অর্থাভাবে বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় সাংসদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রীর সুপারিশ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে লিখেছি। আশা করছি সেখান থেকে অনুদান মিলবে।

স্থানীয় সাংসদ ও ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেন,আনোয়ারার বীর শহীদদের আত্মত্যাগকে স্মরণীয় করে রাখতেই আমার শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু একটি স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মাণে উদ্যোগী হন। শুক্রবার এ কমপ্লেক্সের কাজ পরিদর্শন করে ঘুরে দেখেছি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগও করা হয়েছে। যত অর্থই ব্যয় হোক,সরকার বধ্যভূমি কমপ্লেক্স নির্মাণে সহায়তা দেবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.