বাংলাদেশ দল আজ সোনালি অর্জনের অপেক্ষায়

0

গোলাম সরওয়ার  :    ওয়ানডে ক্রিকেটে গত আটটি মাস স্বপ্নের মতো কেটেছে বাংলাদেশের। গত নভেম্বর-ডিসেম্বরে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ তে হোয়াইটওয়াশ, এ বছরের এপ্রিলে পাকিস্তানকে ৩-০ তে হোয়াইটওয়াশ, আর সবশেষ গত মাসে ভারতের বিপক্ষে ২-১-এ সিরিজ জয়। ঘরের মাঠে টানা তিনটি সিরিজ নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এবার আরেকটি সোনালি অর্জনের হাতছানি। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ঘরের মাঠে টানা ৪টি সিরিজ জয়ের সুযোগ মাশরাফি বিন মুর্তজার দলের সামনে। আর এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চান বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।

ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সাকিব বলেন, ‘বিশ্বকাপ ক্রিকেটের পর থেকে এ পর্যন্ত সবগুলো হোম সিরিজে আমরা জয়ী হয়েছি। তাই এবারের সুযোগটাও কাজে লাগাতে চাই।’ তবে সুযোগ কাজে লাগাতে হলে ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- তিন বিভাগেই যে ভালো করতে হবে, সেটাও মনে করিয়ে দেন ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটের এই অলরাউন্ডার, ‘ম্যাচ জিততে হলে তিন বিভাগকেই ভালো করতে হবে। এখানে শুধু স্পিনার, পেসার কিংবা ব্যাটসম্যানের আলাদা কোনো প্রতিযোগিতা নেই। প্রতিযোগিতা সবার। প্রতিযোগিতা মাঠে, মাঠের বাইরে সব জায়গায়।’Bangladesh1436931762

দ্বিতীয় ওয়ানডের আগেও সবকিছু ধূসর মনে হচ্ছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ হারের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। তবে ওই একটি ম্যাচই পাল্টে দিয়েছে সবকিছু। প্রোটিয়াদের হারিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে টাইগাররা। ফলে আজ তৃতীয় ওয়ানডের আগে সবকিছু আর ধূসর নয়, রঙিন হয়ে উঠেছে। উৎসবের রং ছড়াচ্ছে। এশিয়ার দুই পরাশক্তি পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর আরেকটি বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন উঁকি দিচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে।

ফাইনালে পরিণত হওয়া দুই দলের তৃতীয় ওয়ানডে ম্যাচটি আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে। ম্যাচটি শুরু হবে বেলা ৩টায়।

 

চট্টগ্রামের এই মাঠটি বাংলাদেশের জন্য ‘লাকি ভেন্যু’ হিসেবেই পরিচিত। এখানে মাঠে গড়ানো ১৫ ওয়ানডের ৯টিতেই জিতেছে বাংলাদেশ। সবশেষ ১০ ওয়ানডের ৮টিতেই জয়। তবে এই মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একমাত্র ম্যাচটি বিশাল ব্যবধানে হেরে যায় বাংলাদেশ। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ হেরেছিল ৯ উইকেটে। তবে সেই বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের বিস্তর পার্থক্য। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ এখন অনেক পরিণত একটা দল। গত একটি বছর ধরেই এর প্রমাণ রেখে চলেছে বাংলাদেশ।

 

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশি ভাবাচ্ছিল নিজেদের ব্যাটিং। তবে গত ম্যাচে ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বলতা ছড়িয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সবাইকে ব্যাট করতে হয়নি। ৭ উইকেটের জয়ের কারণে মুশফিক, সাব্বিরদের ব্যাটিংয়েই নামতে হয়নি। তামিম, লিটন আগের মতো গত ম্যাচেও ব্যর্থ হয়েছেন। তবে আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার রানেই আছেন। চোট কাটিয়ে মাহমুদউল্লাহও ছন্দে ফিরেছেন। তার প্রমাণ তার গত ম্যাচের ফিফটি, সৌম্যর সঙ্গে ১৩৫ রানের অতি প্রয়োজনীয় এক জুটি গড়ে তুলে দলকে জয় উপহার দেওয়া। তবে চট্টগ্রাম জ্বলে উঠতে হবেই তামিম-মুশফিকদেরও।

 

বোলিংয়ে তেমন একটা ভাবতে হচ্ছে না বাংলাদেশকে। গত ভারত সিরিজে অভিষেক থেকেই দারুণ বল করছেন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। গত ম্যাচে বাংলাদেশের জয়ে বড় অবদান রাখেন এই তরুণ তুর্কি। ওই ম্যাচে মুস্তাফিজ নেন ৩ উইকেট। একাদশে ফিরে দারুণ বোলিং করেছেন আরেক পেসার রুবেল হোসেন।  হাশিম আমলার স্টাম্প উপড়ে কয়েক গজ পেছনে ফেলেছেন এই গতিময় পেসার। এরপর ক্রিস মরিসকে নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন রুবেল। পেস আক্রমণে এই দুজনের সঙ্গে অধিনায়ক মাশরাফি তো আছেনই। আর তাদের সহায়তা করতে রয়েছেন তিন স্পিনার সাকিব, নাসির ও মাহমুদউল্লাহ।

 

অপরদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাও শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ নিজেদের করে নিতে মরিয়া। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করলেও শেষ ম্যাচে জেতার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী সফরকারীরা। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে দলের প্রতিনিধি হয়ে আসা স্পিনার ইমরান তাহির এমনটাই বলেছেন, ‘শেষ ম্যাচে কি হয়েছে তা নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই। আমরা কেবল আগামীকালের (আজ) ম্যাচের দিকে মনোযোগ দিচ্ছি। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। আমরা নিজেদের সেরা চেষ্টাটাই করব।’

সিরিজের প্রথম দুই ওয়ানডেতেই একপেশে লড়াই হয়েছে। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১৬০ রানে অলআউট, দক্ষিণ আফ্রিকা ৮ উইকেটে জয়ী। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬২ রানে অলআউট, বাংলাদেশের জয় ৭ উইকেটে। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে তাই দুই দলের জমজমাট লড়াইয়ের প্রত্যাশা সবার।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.