কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির ঘোষণাটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার

0

সিটিনিউজ ডেস্ক :  ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কওমী মাদরাসার দাওরায়ে হাদীসের সনদকে সর্বোচ্চ মান তথা মাস্টার্স (এমএ) মান প্রদানের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন। আমরা তার এই যুগান্তকারী ঘোষণাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা দ্ব্যার্থহীন ভাষায় বলতে চাই, সাম্প্রতিক কওমী সনদের স্বীকৃতিকে কেন্দ্র করে ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক স্বার্থের বলি হওয়ার যেমন সুযোগ নেই তেমনিভাবে সরকার বিরোধী চেতনাকে পুঁজি করে কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ সাংস্কৃতিক চিন্তায় আক্রান্ত হয়ে যুগান্তকারী এই পতক্ষেপকে অযৌক্তিক প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে ভিন্নহাতে প্রবাহিত করার সুযোগ নেই।

সোমবার(১৭ এপ্রিল) সকাল ১১ টায় চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামীয়া লালখান মাদরাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী এসব বলেন।

এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যারা সরকারের সাথে সংগ্রামী ঐতিহ্যের ধারক বাহক দেওবন্দী আলেমগণের আঁতাতের প্রশ্ন তুলেছে তাদের জানা থাকা চাই যে, ১১ এপ্রিল বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামীলীগ সরকার প্রধান শেখ হাসিনা কর্তৃক স্বীকৃতি ঘোষণাটি। স্বীকৃতির পক্ষে চলমান দীর্ঘ ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশবিশেষ। বিশেষ করে যা মূলত শুরু হয়েছিল, বিগত ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে।

কওমী মাদ্রাসাগুলো জনগণের ধর্মীয় আবেগের চাহিদা কেবল পূরণ করছে না, বরং বিশাল সেবামূলক ও নৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে এবং নিজস্ব আর্থিক পরিকল্পনার মাধ্যমে জাতির উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে এক অনন্য অবদান রেখে চলেছে। কওমী মাদ্রাসাগুলো আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কোন প্রকার পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া এবং সরকারের কোন রূপ তত্ত্বাবধান ব্যাতিত মানবসম্পদের ক্ষেত্রে যে বিশাল উন্নয়নযজ্ঞ পরিচালনা করছে তা এক অকল্পনীয় মহাবাস্তবতা। যে বাস্তবতাকে বারবার দুঃখজনকভাবে স্যেকুলার তথাকথিত সুশীলমহল এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। আর উল্টো বিভিন্ন অপবাদ আরোপ করে কওমী মাদ্রাসার নিরীহ চারিত্রিক ঐতিহ্যের বিরুদ্ধেসু-পরিকল্পিতভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। যাতে নতুন প্রজন্মকে তার ধর্মীয় অভিভাবক ও কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আস্থাহীন করে তোলা যায়।

আমরা মনে করি স্বীকৃতির মাধ্যমে ওলামায়েকেরাম মূলধারায় অন্তর্ভূক্ত হওয়ার সুযোগ পেলে শিক্ষার হার যেমন বৃদ্ধি পাবে তেমনিভাবে উন্নয়নের সম্ভাবনার দিগন্তগুলোও আরো সম্প্রসারিত হবে। ওলামা ও আধুনিক সমাজের মাঝে সহঅবস্থান দৃঢ় হওয়ার মাধ্যমে জাতীয় ও সামাজিক পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পাবে। সংঘাত ও মনস্তাত্বিক বিভেদের আধার ধীরে ধীরে তিরোহিত হবে। সমাজতাত্ত্বিক এহেন বাস্তব ইঙ্গিতগুলোকে না বুঝার ভান করে উগ্র ধর্ম বিদ্বেষী গোষ্ঠী দূরত্ব ও বাঞ্চনার উপাদানগুলো বজায় রেখে জাতিকে বিভক্ত করে রাখতে চায়। এরাই মূলত বিশংখলার উস্কানিদাতা।

দেওবন্দের মূলনীতিকে অক্ষুন্ন রেখে স্বকীয়তা বজায় রেখে স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারে যারা আপত্তি তুলেছেন এবং কওমী মাদ্রাসার সংস্কার ও আধুনিকায়ন এবং সরকারী নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার কথা যারা বলেছেন, তাদের ব্যাপারে আমরা এই কথা প্রমাণে সক্ষম যে, তারা শিক্ষাকে ডি-ইসলামাইজেশনের এজেন্ডা হিসেবে এক ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছেন। আলিয়া মাদ্রাসাগুলোর আধুনিকায়ন করার নামে ধর্মীয় বিষয় বস্তুকে সংকুচিত করে তার ইসলামী গাম্ভীর্য ধ্বংস করা হয়েছে। একদিকে তারা আধুনিকতার কথার বলে অন্য দিকে মাদারাসা ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়ার পথে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তাদের আসল মতলব জাতির সামনে নিজেরা তুলে ধরেছেন।

বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) ২০১৫ সালের তথ্য অনুযায়ী ১১ হাজার ৯ শত কওমী মাদারাসার মোট ১৪ লক্ষ শিক্ষার্থী রয়েছে, কিন্তু আমাদের হিসাব মতে বাস্তবতার তুলনায় অনেক কম্ তাছাড়া তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট রয়েছে আরো লক্ষ লক্ষ আম জনতা, সুতরাং নাস্তিক চক্রের অপপ্রচারের বিভ্রান্ত হওয়ার মানে দাঁড়ায়-স্বদেশ, স্বজাতি ও স্ব-ধর্মের বিরুদ্দে অবস্থান নেওয়া।

কওমী মাদ্রাসার শিক্ষার স্বীকৃতি সহ উন্নয়ন প্রবাহে ওলামাদের অংশগ্রহণ এবং বিশুদ্ধ ইসলামী চেতনার প্রসারের মাধ্যমে নৈতিক বলে বলীয়ান জাতিগঠনের প্রয়াসে সংবাদিকদের বস্তুনিষ্ঠ ভূমিকা রাখার আহবান জানাচ্ছি। সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমার উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম এর তৎকালীন খতীব মরহুম আল্লাম ওবাইদুল হক (রহ.) ও মাওলানা সুলতান যউক নদভী এবং পরবর্তী চ’ড়ান্ত পর্যায়ে আমীরে হেফাজত আল্লমা আহমদ শফীর মাধ্যমে সর্ব প্রথম ৪ দলীয় জোট সরকারের আমলে বহু আলোচনা ও পর্যালোচনার পর স্বীকৃতির বিষয়টি সরকারী সিদ্ধান্তের পর্যায়ে উপনীত হয় এবং যা গ্যাজেট আকারে ২ ডিসেম্বর ২০০৬ ইং তারিখে প্রকাশিত হয়। সত্য বলতে কি।

বিগত ৪ দলীয় জোট সরকার তার ক্ষমতার প্রান্তিককালে এসে স্বীকৃতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আর আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ৫ বছরেও সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয়। এবং ক্ষমতার ২য় টার্মের শেষ প্রান্তে এসে তারা কওমী সনদকে স্বীকৃতি প্রদানে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আর এমনিভাবে উভয় দলের এহেন কাল ক্ষেপনে

সমালোচকদের তাদের বিরুদ্ধে ক্ষমতামুখী স্বার্থের অভিযোগ উত্থাপনের আনয়াসে সুযোগ এনে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আবদুর রহমান চৌধুরী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আল্লামা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় গবেষণা ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক আল্লামা মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী, দারুল মারিফ মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা এনামুল হক, জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামীয়া মাদরাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান, জামিয়াতুল উলুম আল ইসলামীয়ার গণসংযোগ কর্মকর্তা আলী হাসান, লালখান বাজার মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক মাওলানা কামরুল ইসলাম কাসেমী প্রমুখ।

ছবির ক্যাপশান: কওমী মাদ্রাসার সনদের স্বীকৃতির বিষয়ে উদ্ভুদ পরিস্থিতির আলোকে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নায়েবে আমীর আল্লামা মুফতি ইজহারুল ইসলাম চৌধুরী

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.