তাঁর চলে যাওয়ার তিন বছর

0

সিটিনিউজবিডিঃ ‘যদি মন কাঁদে তুমি চলে এসো চলে এসো এক বরষায়/এসো ঝরঝর বৃষ্টিতে/জলভরা দৃষ্টিতে/এসো কোমল শ্যামল ছায়… যদিও তখন আকাশ থাকবে বৈরী/কদমগুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি/ উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো ঝলকে ঝলকে নাচিবে বিজলি আলো/ তুমি চলে এসো এক বরষায়।’ এই গানের কথাগুলোর মতোই চলে এলো আরেক বরষা।

উথালপাতাল বৃষ্টি নেমেছে নীপবনে। অথচ মানুষটি নেই। জননন্দিত কথাশিল্পী হুমায়ুন আহমেদের আজ তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী। দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। এই কথাশিল্পী ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ২০১২ সালের ১৯ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান হুমায়ুন আহমেদ। মৃত্যুর তিন দিন পর ২৪ জুলাই নিজের গড়া নুহাশ পল্লীর লিচুতলায় দাফন করা হয় তাঁকে।  তার গল্প-উপন্যাসের মতো তার লেখা গানও হৃদয়স্পর্শী। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরণ করার পাশাপাশি তার সৃষ্টিকেও স্মরণ করবে অনুরাগীরা।

তাঁকে বলা হয় বাংলা সাহিত্যের সর্বকালের অন্যতম প্রধান জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক। স্বাধীনতা পরবর্তী শ্রেষ্ঠ জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদকে বাংলা কল্পবিজ্ঞান সাহিত্যেরও পথিকৃৎ বলা হয়। নাট্যকার হিসেবে যেমন নন্দিত চলচ্চিত্রকার হিসেবেও তেমনই সমাদৃত। বাংলা কথাসাহিত্যের সংলাপ প্রবণে নতুন শৈলীর জনক হুমায়ুন আহমেদের দুই শতাধিক গ্রন্থের বেশকিছু পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়েছে। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তার গ্রন্থ। গত ১৯ জুলাই ২০১২ সালে এমন একজন গুণী মানুষ হারিয়েছে বাংলাদেশ এবং বাংলা ভাষাভাষী মানুষ।

বাংলা সাহিত্যের এই প্রবাদ পুরুষের জন্ম ১৩ নভেম্বর ১৯৪৮ সালে নেত্রকোনা জেলার কুতুবপুর গ্রামে। বাবার চাকরির সূত্রে তার শৈশব কেটেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায়। দেখেছেন বহু মানুষ এবং তাদের জীবনানুভূতি। এর ফলেই হুমায়ুন আহমেদের লেখায় উঠে এসেছে বাঙালি মধ্যবিত্তের নানা সংকট বিচিত্র জীবনযাপন আর হৃদয়ের টানাপড়েন। লেখাপড়া বগুড়া জেলা স্কুল, ঢাকা কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ ডাকোটা স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। অধ্যাপনা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করলেও সবকিছু ছেড়ে লেখালেখি নাটক আর চলচ্চিত্র নির্মাণই হয়ে ওঠে তার নেশা ও পেশা।

উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ : দেয়াল, নন্দিত নরকে, শঙ্খনীল কারাগার, জোছনা ও জননীর গল্প, বহুব্রীহি, গৌরীপুর জংশন, দ্বিতীয় মানব, মধ্যাহ্ন এবং হিমু-সংক্রান্ত প্রায় ২৪টি সিরিজ উপন্যাস। তার মিসির আলী-সংক্রান্ত উপন্যাসও রয়েছে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে। আত্মজীবনী : বল পয়েন্ট, কাঠপেন্সিলসহ প্রায় আটটি গ্রন্থ। উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক- এইসব দিন রাত্রি, কোথাও কেউ নেই, অয়োময়, নক্ষত্রের রাত, বহুব্রীহি, আজ রবিবার তারা তিনজন। চলচ্চিত্র : আগুনের পরশমণি, শ্রাবণ মেঘের দিন, দুই দুয়ারী, চন্দ্রকথা, শ্যামল ছায়া, ঘেটুপুত্র কমলা।

কোটি হৃদয়ের ভালোবাসায় সিক্ত হুমায়ুন আহমেদ পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, শিশু একাডেমী পুরস্কার, লেখক শিবির পুরস্কার, মাইকেল মধুসূদন পদক, বাচসাস পুরস্কার, হুমায়ুন কাদির স্মৃতি পুরস্কার।

তিনি কি করতে পছন্দ করতেন- জানতে চাইলে মেহের আফরোজ শাওন জানান, হুমায়ুন আহমেদ নিজের পুরনো নাটক, সিনেমা দেখতে এবং নিজের লেখা বই পড়তে ভালোবাসতেন। নিউ ইয়র্কে থাকার সময় নিজের নাটক নিমফুল দেখে বলেছিলেন, এ নাটকটি নতুন করে বানালে আরও সুন্দর করতে পারতাম।

শাওন আরও জানান, হুমায়ুন আহমেদ নানাভাবে মজা করতে ভালোবাসতেন। বেঁচে থাকতে নিজের কুলখানির আয়োজন করে বন্ধুদের খাওয়াতে চেয়েছিলেন। এটা করতে পারলে তিনি খুব মজা পেতেন।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.