জাহাজ নির্মাণশিল্পে বিশেষ তহবিল গঠনের আশ্বাস

0

সিটিনিউজবিডি:-  রপ্তানিমুখী জাহাজশিল্পের জন্য নগদ সহায়তা বৃদ্ধি ও দীর্ঘমেয়াদি তহবিল গঠনের আশ্বাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

সচিবালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার অ্যাসোসিয়েশন অব এক্সপোর্ট ওরিয়েন্টেড শিপ বিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রিজ অব বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে এক বৈঠকে অর্থমন্ত্রী এই আশ্বাস দেন। তবে এ খাতের জন্য আলাদা করে সুদের হার কমানোর কোনো চিন্তা নেই বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

সমিতির সহসভাপতি এনামুল কবির খান, মহাসচিব শাখাওয়াত হোসেন, কোষাধ্যক্ষ তোফায়েল কবির খান, সদস্য এ এফ এম মুকিম প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

রপ্তানিমুখী জাহাজশিল্পের জন্য সমিতির নেতারা অর্থমন্ত্রীর কাছে মূলত তিনটি দাবি জানান। এগুলো হচ্ছে: নগদ সহায়তার হার বিদ্যমান ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে নির্ধারণ, দুই হাজার কোটি টাকার দীর্ঘমেয়াদি তহবিল গঠন এবং ব্যাংক ঋণের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনা।

প্রথম দুটি দাবি ভেবে দেখার আশ্বাস দিয়ে তৃতীয়টির ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সুদের হার তো আমি ঠিক করি না, বাজার করে। এটি নিয়ে তেমন করণীয় নেই।’ অর্থমন্ত্রী বলেন, জাহাজ নির্মাণ হলো প্রাচীন শিল্প। মধ্য যুগেও এ শিল্পে বাংলাদেশের সুনাম ছিল।

সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে জাহাজ রপ্তানির বেশ কিছু আদেশ বাতিল হয়ে গেছে। এতে শুধু মালিক নন, শ্রমিকেরাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে নগদ সহায়তা ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশে উন্নীত করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তা অব্যাহত রাখার দাবি তাঁদের।

আরও বলা হয়, বিভিন্ন দেশ থেকে ইতিমধ্যে ২৫টি জাহাজ রপ্তানির আদেশ পাওয়া গেছে। আরও পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এগুলো নির্মাণের জন্য এত টাকা উদ্যোক্তাদের হাতে নেই। কারণ জাহাজ নির্মাণ অনেক ব্যয়বহুল শিল্প। একটি জাহাজ নির্মাণে ২০-২৫ কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়। সে জন্য সরকার দুই হাজার কোটি টাকার একটি তহবিল গঠন করলে বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণকারী জাতিতে পরিণত হতে পারবে।

সমিতির মহাসচিব শাখাওয়াত হোসেন বলেন, জাহাজ রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশ হচ্ছে চীন, ভিয়েতনাম ও ভারত। বাংলাদেশে শ্রম সস্তা, কিন্তু ব্যাংক ঋণের সুদের হার অনেক বেশি। ফলে উদ্যোক্তাদের তহবিল ব্যয়ও (কস্ট অব ফান্ড) বেশি। ফলে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সাতটি দেশে জাহাজ রপ্তানি করা হচ্ছে বলে জানান সমিতির নেতারা। দেশগুলো হচ্ছে জার্মানি, ডেনমার্ক, তাঞ্জানিয়া, পাকিস্তান, ফিনল্যান্ড, ইকুয়েডর ও জাম্বিয়া। নিউজিল্যান্ড, পূর্ব আফ্রিকা এমনকি যে ভারত নিজেই রপ্তানি করে, তাদের কাছ থেকেও সম্প্রতি রপ্তানি আদেশ পাওয়া গেছে বলে অর্থমন্ত্রীকে জানান তাঁরা।

শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ভারতের সঙ্গে নৌ প্রটোকল চুক্তির কারণে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন ও বাণিজ্য অনেক বেড়ে যাবে। ফলে উপকূলীয় নৌপথে চলাচলকারী জাহাজেরও বিশাল চাহিদা তৈরি হবে। সমুদ্র অর্থনীতির পদে পদে দরকার পড়বে জাহাজ নির্মাণশিল্পের। এমন বাস্তবতায় নিজেদের প্রতিযোগী করে তুলতে না পারলে বাংলাদেশকে ইউরোপের তো বটেই, এশিয়ার বাজারও হারাতে হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়ার একটি সুযোগ আগে তৈরি করা হলেও সুবিধাটি কেউ উপভোগ করতে পারেননি বলে জানান শাখাওয়াত হোসেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ব্যাংক সব সময় ঋণের হিসাব করে বছরওয়ারি। কিন্তু জাহাজ নির্মাণের ব্যাপারটি অন্যদের তুলনায় আলাদা। এখানে দেড় বছরের হিসাব করতে হয়। জাহাজের নকশার জন্যই ছয় মাস সময় লাগে। আর জাহাজ তৈরি করতে লাগে এক বছর।

রপ্তানিমুখী জাহাজশিল্পের বাজারটি কত বড় হতে পারে, জানতে চাইলে এনামুল কবির খান জানান, সরকার নীতি-সহায়তা দিলে ২০২০ সাল নাগাদ রপ্তানি বেড়ে দাঁড়াবে বছরে ১৫০ কোটি ডলার (১২ হাজার কোটি টাকা)। এ ছাড়া জাহাজ নির্মাণ খাতে মূল্য সংযোজনের পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জানা গেছে, শ্রমের উচ্চমূল্যের কারণে উন্নত দেশগুলো ছোট জাহাজ তৈরি করতে চায় না। অথচ ছোট জাহাজের বিশ্ববাজার এখন ৪০ হাজার কোটি ডলারের। এ ক্ষেত্রে বিশ্ববাজারের মাত্র ১ শতাংশের পরিমাণও দাঁড়ায় ৪০০ কোটি ডলার। সরকারের নীতি-সহায়তা এ বাজার ধরতে সাহায্য করবে।

ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, আনন্দ শিপইয়ার্ডের পাশাপাশি খান ব্রাদার্স শিপ বিল্ডিং কোম্পানি, হাইস্পিড শিপইয়ার্ড, খুলনা শিপইয়ার্ড, মেঘনা শিপ বিল্ডার্স, কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড ও সিনহা শিপইয়ার্ড রপ্তানিমুখী জাহাজ নির্মাণ করছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.