টেস্টেও ভালো খেলার ধারাবাহিকতা চান মুশফিক

0

সিটিনিউজবিডি:- সিরিজের প্রথম টেস্টে আজ দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। এই টেস্টটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের। কারণ ওয়ানডে সিরিজে প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে অসাধারণ ক্রিকেটে খেলেছে টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজে ভালো খেলার ধারাবাহিকতা টেস্ট সিরিজে ধরে রাখাটা চ্যালেঞ্জের। এটি বেশ ভালোই জানেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তাই সিরিজের প্রথম টেস্টেই পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে চান তিনি। সেই সাথে বাংলাদেশ বোলারদের ২০ উইকেট নেয়ার সামর্থ্যও আছে বলে জানান মুশফিকুর, ‘টেস্টের পাঁচ দিন যেন ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেলতে পারি এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। শেষ ৮ মাস বাংলাদেশ যেভাবে ক্রিকেট খেলছে আশাকরি এই দুই টেস্টেও সেভাবেই খেলবে। এছাড়া টেস্টে আমাদের বোলারদের ২০ উইকেটের নেয়ার সামর্থ্যও আছে।’

বিশ্বকাপ থেকেই পরিবর্তন এসেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের। পরিবর্তনের আবহটা বিশ্বকাপেও দেখিয়েছে টাইগাররা। বিশ্বকাপে যে পরিবর্তন হয়েছে বাংলাদেশ, তার কিছু প্রমাণ পরবর্তীতে দেয় তারা। দেশের মাটিতে ওয়ানডে সিরিজে পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করা, ভারতকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় ফেলতে ফেলতে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জয় এবং দক্ষিণ আফ্রিকাকে নাকানিচুবানি খাইয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ পকেটে ভরা। প্রোটিয়ানদের হারানোয় বিশ্বকাপের পর হ্যাট্টিক সিরিজ জয়ও নিশ্চিত হয় বাংলাদেশের।

তাই বলা যায়, ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের ইতিহাসে সাফল্যের শীর্ষ চূড়ায় ঘুরপাক খাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু টেস্টে এমন সব সাফল্যর মত বড় বড় অর্জনকে সঙ্গী করতে পারছে না টাইগাররা। পরিসংখ্যান কিন্তু তেমনটাই বলছে। কিন্তু এমনটা মানতে নারাজ বাংলাদেশ দলপতি মুশফিকুর। তার মতে, ‘টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করছে তা সবার চোখে পড়ছে না। স্বাভাবিকভাবে সবার প্রত্যাশা অন্যরকম। সবাই চায় যে টেস্টেও বাংলাদেশ যেন আরও ভালো কিছু করে। নিয়মিত না জিতলেও যেন ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেলে।’

ধারাবাহিকভাবে ভালো ক্রিকেট খেলাটার মন্ত্রটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ দিয়েই শুরু করতে চান মুশফিকুর। তাই প্রথম টেস্টের পাঁচ দিনই প্রতিপক্ষের উপর আধিপত্য বিস্তার করে খেলার ইঙ্গিত দিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক, ‘টেস্টের পাঁচ দিন যেন ধারাবাহিক ভালো ক্রিকেট খেলতে পারাই আমাদের মূল লক্ষ্য। আমরা যেন পাঁচটা দিন নিয়মিত ডমিনেট করতে পারি, এরপর ফল কি হয় পরে দেখা যাবে। আর গেল ৮ মাস বাংলাদেশ যেভাবে ক্রিকেট খেলছে আশাকরি এই দুই টেস্টেও সেভাবে খেলবে। এভাবে খেললে খুব ভালো করার সম্ভাবনা খুব বেশি। আমাদের সবাই ফিট আর সবারই খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। সবাই ভালো করার জন্য উদগ্রীব রয়েছে।’ দলকে উজ্জীবিত করার পাশাপাশি প্রথম টেস্ট শুরুর আগে দলের বোলারদের নিয়েও আশার ডালপালা ছড়িয়েছেন মুশফিকুর, ‘আমাদের বোলারদের ২০ উইকেট নেওয়ার সামর্থ্য আছে এবং এটি করেও দেখাতে পারবে বোলাররা। আমি বিশ্বাস করি যে, অনেক ভালো পারফরমেন্স করার সামর্থ্য বোলারদের আছে। ওরা ভালো করলে আমার ব্যক্তিগতভাবে কিছু হবে না, এটা বাংলাদেশের জন্য ভালো হবে। আমরা ওদের ম্যাসেজ দিয়েছি, ব্যাটিংয়ে একটা ভুল করলে আর কিছু করার থাকে না কিন্তু বোলারদের ক্ষেত্রে একটা স্পেল খারাপ করলে দ্বিতীয়টায় ফেরার সুযোগ থাকে। এটা খারাপ করলে তৃতীয়টায় ফেরার সুযোগ থাকে। অনেক সুযোগ থাকে এটা যেন ওরা বুঝতে পারে। এটা ওদের বোঝানো হয়েছে, সেই ভূমিকা যেন ওরা পালন করে। ওরা যদি ওদের কাজ করে আর ফিল্ডাররা যদি ব্যাকআপ দিতে পারে তবে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের চাপে ফেলতে সক্ষম হবো।’

ওয়ানডে স্কোয়াডে না থাকলেও, টেস্ট স্কোয়াডে ফিরেছেন মুমিনুল-ইমরুল। ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে খেলতে না পারা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও আছেন টেস্টে। এতে দলের শক্তি বেড়েছে বলে মনে করেন মুশফিকুর, ‘যে কোনো কিছু অর্জন করা আর সেটাকে ধরে রাখা খুব কঠিন। এটাই আমাদের বাংলাদেশ দলের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ। আমরা ওয়ানডেতে এত ভালো করছি, প্রায় একই খেলোয়াড় নিয়ে টেস্টে কেন কনভার্ট হয় না। আমরা ওয়ানডের মতো এত নিয়মিত টেস্ট খেলি না। এটাও অনেক বড় ব্যাপার। একটা ছন্দের ব্যাপার আছে। তার সঙ্গে একটা টেম্পারমেন্টেরও ব্যাপার আছে। সেদিক থেকে বলব, এই বছর বাংলাদেশ যেভাবে খেলছে তাতে আমি খুব খুশি। কোচ বলল, আমাদের দলে ইমরুল, মুমিনুল, রিয়াদ ভাই ফিরেছে। আমাদের ব্যাটিংটাও অনেক সলিড হবে। আমাদের ব্যাটিং বিভাগ যদি প্রয়োগ অনুযায়ী ক্লিক করতে পারে আর মাঝখানে ভালো খেলতে পারি তাহলে এই টেস্টেও আমরা ভালো খেলতে পারি। এটা বাংলাদেশের জন্য খুবই সম্ভব।’

মুমিনুল ও ইমরুলকে নিয়ে আলাদা বক্তব্যও দিয়েছেন মুশফিকুর, ‘জেতা আর ড্র করায় মুমিনুল-ইমরুলের কিন্তু অনেক অবদান রয়েছে। আমি আশা করব, ইমরুল যেভাবে রান করছে সেটা সে ধরে রাখবে। শেষ তিন-চারটা টেস্টের পাঁচটা ইনিংসে দুই-তিনটা শতক আছে ওর। মুমিনুল হয়তো শেষ ১০/১২ টেস্টে অনেকগুলো ফিফটি- সেঞ্চুরি করেছে। সবাই চাইবে ওরা যেন ওদের দায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করে। বড় ইনিংস খেলে। আর আমরা যারা আছি তারাও চেষ্টা করব বড় ইনিংস খেলার।’

ভারতের মত দক্ষিণ আফ্রিকার মত প্রথম টেস্টেও উইকেটের পিছনে দেখা যাবে না মুশফিকুরকে। কারণ হাতে চোট পুরোপুরিভাবে এখনো সাড়েনি। তাই প্রথম টেস্টে লিটন দাসের খেলাটা নিশ্চিত বলে জানালেন মুশফিকুর, ‘আমার হাতের চোট যে শতভাগ ঠিক হয়েছে তা নয়। টেস্টে প্রায় পাঁচ দিনই কিপিং করতে হয়। সেদিক থেকে এটা একটু ঝুঁকি থেকেই যায়। আর যেহেতু শেষ ম্যাচে লিটন খুব ভালো কিপিং-ব্যাটিং করেছে, তাই আশাকরি এবারও ভালো করবে। তারপরও টিম কম্বিনেশন কিছু আছে, আমরা সেটা দেখে ঠিক করব।’

প্রথমবারের মত টেস্ট স্কোয়াডে সুযোগ পান ওয়ানডেতে বাংলাদেশের নতুন সেনসেশন পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। তাই একাদশে সুযোগ পেলে টেস্ট ক্রিকেটেও মুস্তাফিজুরের ভালো করার ব্যাপারে আশাবাদি মুশফিকুর, ‘এমন পীচের জন্য মুস্তাফিজুর আদর্শ তো অবশ্যই। কোচ যা বললো,তাতে মুস্তাফিজুর শুধু ওয়ানডে ফরম্যাটেই না যে কোনো ধরনের ক্রিকেটে ভালো করতে পারে সে। ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করেছে ও। বড় দৈর্ঘ্যর ম্যাচেও কিন্তু ভালো করেছে। ওদের ব্যাটিং লাইনআপের নতুন যে চার-পাঁচ জন এসেছে তারা কিন্তু কেউ মুস্তাফিজকে দেখেনি বা খেলে নাই। আমরা যদি ওকে খেলাই অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না, আর সেটা ওর প্রাপ্যই হবে। আমরা এখনো ঠিক করিনি কোন কম্বিনশেন নিয়ে খেলব। আমরা সবাই তৈরি খেলার জন্য। যদি মুস্তাফিজুর খেলে তবে তার জন্য শুভ কামনা থাকলো।’

দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং নিয়েই যত দুঃশ্চিন্তা বাংলাদেশের। তবে এটি নিয়ে হোমওয়ার্কও করেছে টাইগাররা বলে জানালেন মুশফিকুর, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং অ্যাটাক নিয়ে কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই। দারুণ শক্তিশালী, যে কন্ডিশনেই হোক। উপমহাদেশ বা বাইরেই হোক। ওরা অভিজ্ঞ এবং বিশ্বমানের। কি কি পরিকল্পনা ওরা করতে পারে সেই অনুযায়ী আমরা হোম ওয়ার্ক করছি। তা প্রয়োগ করার চেষ্টা করবো। আশা করি প্রথম টেস্ট ভালো ভাবে শুরু করতে পারব।’

গেল কয়েক মাস প্রতিপক্ষের পাশপাশি ২২ গজে বৃষ্টির সাথেও লড়াই করছে বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টেও বৃষ্টির উপস্থিতি যে থাকবে, তা বলা যায়ই। এমনটা জানেন মুশফিকুরও। তাই কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে পরিকল্পনা সাজাবেন বলে জানান মুশি, ‘বৃষ্টির প্রভাব তো পড়তেই পারে। আমাদের আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অনেক সময় যা ধারণা করা হয় তা নাও হতে পারে। অবশ্যই আমাদের স্ট্রেংথ তো মাথায় রাখতেই হবে। তবে কন্ডিশনও বিবেচনায় রাখতে হবে। উইকেটে যদি ময়েশ্চার থাকে তাহলে এক রকম আচরণ করবে। কাল সকাল পর্যন্ত আমরা উইকেট দেখব কি রকম। তারপর একাদশ ঠিক করব। এরপর টস জিতলে ঠিক করব কি নেব। টসের ওপর নির্ভর করবে আমরা কি করতে পারি। অবশ্যই কন্ডিশনের কথা মাথায় রাখতে হবে তবে শতভাগ নিজেদের স্ট্রেংথ নিয়েই নামতে হবে।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.