সরকার শ্রমিকবান্ধব নয়: ফখরুল

0

সিটিনিউজ ডেস্ক::বর্তমান সরকার শ্রমিকবান্ধব নয় এমন দাবি করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘শ্রমিকের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য দেশে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জোর করে ক্ষমতায় বসে থাকা এ সরকারকে সরাতে হবে। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

সোমবার সকালে মহান মে দিবস উপলক্ষে র‌্যালিপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ফখরুল একথা বলেন। শ্রমিক দল আয়োজিত বর্ণাঢ্য র‌্যালিটি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়। নাইটিঙ্গেল ও শান্তিনগর মোড় ঘুরে নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়।

মহান মে দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চেয়েছিল জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, মে দিবসে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কোনো দল বা সংগঠনকে সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হবে না। পরে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে শ্রমিকদলকে ২ অথবা ৩ মে সমাবেশ করতে চাইলে আবেদন করার জন্য বলা হয়। পরে অনুমতি স্বাপেক্ষে দুই দিনের যেকোনো দিন সমাবেশের অনুমতি চেয়ে আবেদন করা হয়। অবশ্য পুলিশ শেষ পর্যন্ত জানিয়েছে ৫ মের আগে সোহরাওয়ার্দীতে কোনো সমাবেশের অনুমতি দেয়া হবে না। এই দিনের পরে কোনো দিন করতে চাইলে তারা বিবেচনা করতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে সমাবেশ করার চিন্তা থেকে সরে এসে মে দিবসে র‌্যালি করার ঘোষণা দেয় শ্রমিক দল।

শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবি সম্বলিত নানা প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিএনপি ও অঙ্গ, সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এতে মিছিলসহ যোগ দেন। ব্যান্ড দল ছাড়া শ্রমিকরা নানা রঙের গেঞ্জি ও ক্যাপ পরে র‌্যালিতে অংশ নেন।

সম্প্রতি চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘ক্ষমতায় না থাকলে টাকা-পয়সা নিয়ে আপনাদের দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।’ এমন বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে ফখরুল বলেন, ‘তাদের কথাই প্রমাণ হয় নিজেদের অবৈধ টাকা পয়সা বাঁচাতে যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তারা অবৈধ আয় রক্ষা করার জন্য যা প্রয়োজন সেটাই করার চেষ্টা করছেন। দেশের জনগণ কখনোই এটা মেনে নেবে না। সরকারের নীলনকশাকে ব্যর্থ করে দিতে হবে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে অনেকাংশে শ্রমিকদের অধিকার অর্জিত হয়েছে কিন্তু স্বাধীনতার সময় যে শ্রমিকরা জীবন বাজি রেখে দেশের জন্য লড়াই করেছেন, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন তাদের অধিকার এখনো অর্জিত হয়নি।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল মে দিবসে সমাবেশের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পুলিশের অনুমতি চেয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য শ্রমিকবিরোধী সরকার তাদেরকে সমাবেশের অনুমতি দেয়নি।’

এদিকে শ্রমিক দলের র‌্যালির সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। র‌্যালির সামনে ও পেছনে সারিবদ্ধভাবে পুলিশের সদস্যদের সতর্ক পাহারা ছিল। এমনকি রুটের আশপাশের মোড় ও গলির মুখেও পুলিশ সদস্যদের মোতায়েন করা ছিল। ফখরুল বলেন, ‘সারাদেশে শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার পাচ্ছে না। শুধু শ্রমিক সংগঠন করায় উল্টো নির্যাতিত, নিপীড়িত হচ্ছে।’

সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও শ্রমিক নেতা নজরুল ইসলাম খান অভিযোগ করে বলেন, ‘আজও শ্রমজীবী মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায়নি। তাদের কর্মক্ষেত্র নিরাপদ নয়। প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ কর্মক্ষেত্রে মারা যাচ্ছে। প্রতিদিন শিপইয়ার্ডে আমাদের শ্রমিকরা মারা যাচ্ছে। বলয়ার বিস্ফোরণে শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে।’

নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজও শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য মজুরি পাচ্ছে না, জাতীয় মজুরি কমিশন ঘোষণা করা হয়নি। আজও শ্রমজীবী মানুষের যে আইন, কর্মক্ষেত্র গণতান্ত্রিক না। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হলে জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে র‌্যালিতে শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম খান নাসিম, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, মোস্তাফিজুল করীম, মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু, আসাদুজ্জামান বাবুল প্রমুখ নেতা অংশ নেন।

এছাড়া বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, বিএনপির ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক আহসানউল্লাহ হাসান, সহসভাপতি মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু প্রমুখ নেতাও ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.