লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা সংশয়: ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্চলে কঁচামাল সঙ্কট

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি::সারাদেশে বৈরী আবহাওয়ার কারণে লবণ মওসুমের শেষ পর্যায়ে এসেও লবণ উৎপাদনের চাহিদা পুরনে সংশয় এর সৃষ্টি হয়েছে। ফলে চাহিদামত লবণ চাষীরা মিল মালিকদের যোগান দিতে না পারায় লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে লবণের দাম। গত এক সপ্তাহে ২০ টাকার লবণের দাম ঠেকেছে ৩৫/৪০ টাকায়। মিল মালিকদের বস্তা প্রতি ৮০ কেজি লবণ পূর্বে যেখানে ক্রয় করতে হতো ৬/৭ শত টাকায় তা এখন ক্রয় করতে হচ্ছে ১২শ টাকায়। ফলে লবণের বাজারে এর প্রচন্ড প্রভাব পড়েছে বলে বিজ্ঞ মহলের ধারণা।

বিসিক লবণ প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, চলতি মওসুমে ৬৪ হাজার ১৪৭ একর লবণ মাঠে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ লাখ মেট্রিক টন আর লবণের চাহিদা নির্ণয় করা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। চলতি এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত চাহিদার অনুকূলে লবণ উৎপাদন হয়েছে ১১ লাখ মেট্রিক টন। আর লবণ উৎপাদনের মওসুম শেষ হচ্ছে ১৫ মে। এ দিকে গত ১৯ এপ্রিল থেকে টানা এক সপ্তাহের ঝড় ও বৃষ্টিপাতে লবণ মাঠ নষ্ট হয়ে গেলে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়ে চাষীরা। বর্তমানে লবণ উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করলেও পুরোদমে লবণ উৎপাদনে যেতে আরো কিছু দিন লেগে যেতে পারে বলে চাষিরা জানিয়েছেন। ফলে চলমান এ পরিস্থিতিতে লবণ মিল মালিকরা জানান, এবছরও চাহিদা মত লবণ উৎপাদনে যথেষ্ট সংশয় বিরাজ করছে। এ কারণে তারা লবণের ঘাটতি মোকাবেলায় সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান।

লবণ উৎপাদন ঘাটতির অজুহাতে গত বছর খুচরা বাজারে প্যাকেটজাত লবণ কেজি প্রতি ২৫ টাকা থেকে এক লাফে ৩৫ টাকায় উঠে আসে। মাস না যেতেই একই লবণের মূল্য কেজি প্রতি আরো পাঁচ টাকা বেড়ে ৪০ টাকা দাঁড়ায়। গত বছর চাহিদার অনুকূলে লবণ উৎপাদনে ঘাটতি হয়। পরে ঘাটতি মেটানো ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মোতাবেক যথা সময়ে বিদেশ থেকে দুই লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন লবণ আমদানি করা হয়।

বাঁশখালী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি ও সফল লবণচাষি এয়ার আলী বলেন, চলতি মওসুমের শুরুতে আবহাওয়া ভালো হওয়ায় লবণ উৎপাদন ভালোই ছিল; কিন্তু শেষপর্যায়ে বৈরী আবহাওয়ার কারণে লবণ উৎপাদনে ভাটা পড়ে। তিনি বলেন, এখন আবহাওয়া ভালো হলেও পুরোপুরি উৎপাদনে যেতে চার-পাঁচ দিন লেগে যাবে বলে বর্তমানে প্রতি মণ লবণ ৫২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
এ দিকে বিভিন্ন লবণ মিল মালিক বলেন, চাষিরা লবণের মূল্য আরো বেশি পাওয়ার আশায় উৎপাদিত লবণ যা আছে তা এখনই বাজারে ছাড়ছে না। ফলে চট্টগ্রামের পটিয়া ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্চল সহ দক্ষিণাঞ্চলের কাঁচামাল নির্ভর লবণ মিলগুলোতে এখন প্রায় কাঁচা লবণ সঙ্কট দেখা দিয়েছে।
বিসিক লবণ প্রকল্পের জেনারেল ম্যানেজার আবছার উদ্দীন জানান, চলতি মওসুমে ৬৪ হাজার ১৪৭ একর জমিতে ১৮ লাখ মেট্রিক টন লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আর চাহিদা ধরা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। তিনি বলেন, চলতি মাসের ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত ১১ লাখ মেট্্িরক লবণ উৎপাদন রেকর্ড করা হয়েছে।

চট্টগ্রামের পটিয়া ইন্দ্রপোল লবণ মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক বলেন, আগে যেখানে আমরা দুইশ থেকে তিনশ টাকায় লবণের কাঁচামাল ক্রয় করতাম, এখন বৈরী আবাহাওয়ায় তা ২/৩ গুন বেশী দিয়ে কিনতে হচ্ছে। ফলে সাধারণ বাজারে লবণের উর্ধ্বমুখী দামের প্রভাব পড়ছে। তিনি লবণের মূল্য স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবী জানান।

পটিয়া লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি পৌর মেয়র অধ্যাপক হারুনুর রশীদ বলেন, লবণ উৎপাদনের সময় এখন শেষ পর্যায়ে। হঠাৎ ঝড় বৃষ্টির কারণে লবণ মাঠ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মাঠ পর্যায়ে কাঁচামাল উৎপাদনে এখন সংশয় বিরাজ করছে। ফলে অনেক চাষী নিজেদের হেফাজতে থাকা লবণ বিক্রয় না করে অধিক মুনাফা লাভের কৌশলে থাকায় পটিয়া ইন্দ্রপোল শিল্পাঞ্চলে লবণে কাঁচামালের সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এদিকে গতকাল ভোজ্য লবণের উর্ধ্বমুখী দাম নিয়ন্ত্রণে বিসিক ও চট্টগাম এবং পটিয়ার ইন্দ্রপোল লবণ মিল মালিক সমিতির এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লবণ নিয়ে সাম্প্রতিক সৃষ্ট সমস্যা নিয়ে ব্যাপক আলোচনার পর উচ্চ পর্যায়ে এব্যাপারে কার্যকরী সিদ্ধান্ত গ্রহণের আহবান জানানো হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.