পাঁচ গ্রামের স্বপ্নের সেতু হবে কী ?

0

জাহাঙ্গীর উদ্দিন মাহমুদ, ফটিকছড়ি :: ‘বর্ষায় হালদা যখন কানায় কানায় ভরপুর এমন সময় নৌকায় করে এ ঘাট পার হতেই মনে হয় যেন এখুনি ডুবে মরছি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এ পথ দিয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করে আসছি। সেতু হবে হবে শুনি, কিন্তু তা আর বাস্তবে তার দেখা মেলে না।’
এভাবে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেন, ফটিকছড়ি উপজেলার রোসাংগিরী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুপ্রিয়া শীল। তিনি প্রতিনিয়ত এ ঘাট দিয়ে পারাপার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। তাঁর মতো আরো বহু শ্রেণি পেশার মানুষের চলাফেরার একমাত্র পথ রোসাংগিরী ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী শীলেরহাট ঘাট।

হালদা নদীর এ ঘাটের পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা, পশ্চিমে হাটহাজারী। দু‘উপজেলার মানুষকে পৃথক করে রাখা ঘাটটি বেশি ব্যবহার করে থাকেন ফটিকছড়ি অংশের লোকজনরা। এ অঞ্চলের রোসাংগিরী, উত্তর রোসাংগিরী, দক্ষিণ রোসাংগিরী, ওখাড়া, ছাদেক নগর, উত্তর নিশ্চিন্তাপুরসহ পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রাণের দাবী এখন একটি সেতু। সেতুটি নির্মিত হলে পাল্টে যাবে এখানকার যোগাযোগসহ জীবন ব্যবস্থা। তৈরী হবে নাজিরহাট-মাইজভান্ডারের বিকল্প সড়ক।

হালদার উপর দুই উপজেলার বাসিন্দারা এ ঘাট দিয়ে পারাপার করে আসছেন বহুকাল ধরে। বর্ষা মৌসুমে এখানে টানা নৌকায় একমাত্র ভরসা। অপরদিকে শুকনো মৌসুম এলে বাঁশের সাঁকোই হয়ে উঠে এখানকার যাথায়াতের মাধ্যম। টানা নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে পার হতে গিয়ে এ ঘাটেই এগারো বছর পূর্বে নৌকা ডুবে মারা যায় ফারিয়া ইসলাম রিয়া নামক রোসাংগিরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। যুগ যুগ ধরে এখানকার পাঁচ গ্রামের বাসিন্দাদের প্রাণের দাবী হয়ে আছে একটি সেতু। তাদের আশা, একদিন এ ঘাটেই হবে স্বপ্নের সেতু। কিন্তু সেই সেতু হবে কবে ? কিন্তু সেই প্রশ্নের উত্তর নেই কারো জানা। দীর্ঘদিন ধরে দূর্ভোগে থাকা এখানকার মানুষরা মুক্তি চান।

সরেজমিনে দেখা যায়, নদীর এপারে রয়েছে প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসাসহ বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রোসাংগিরী উচ্চ বিদ্যালয়, রোসাংগিরী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, রোসাংগিরী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শীলেরহাট ডাকঘর, রোসাংগিরী স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হযরত আবু বকর ছিদ্দিক (রা.) মাদ্রাসাসহ উল্লেখযোগ্য কয়েকটি স্থানকে হালদা নদী পৃথক করে দিয়েছে।

স্থানীয় রোসাংগিরী ইউপি চেয়ারম্যান শোয়াইব আল সালেহীন বলেন, ‘ ইতিপূর্বে এ ঘাটটি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন পাশ্ববর্তী হাটহাজারী উপজেলার সাংসদ ও পানি সম্পদ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এখানে সেতু বাস্তবায়নে তাঁর পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করবেন। আমাদের এমপি সাহেবও এটি নিয়ে খুবই আন্তরিক। আমি আমার রোসাংগিরীবাসীর প্রাণের দাবী এ সেতুটি নির্মাণের জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুর বিনিময়ে তা বাস্তবায়ন করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

এখানে সেতু নির্মাণ প্রসঙ্গে উপজেলা এলজিইডি ইঞ্জিনিয়ার ম. বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘আমরা অনেক আগে সেতু নির্মাণের লক্ষে একটি প্রকল্প সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছিলাম। স¤প্রতি মন্ত্রনালায় থেকে এ ঘাটে সেতু নির্মাণের জন্য প্রয়োজনী কিছু তথ্য চেয়ে চিঠি আসলে আমরা তা প্রদান করেছি।’
স্থানীয় সাংসদ সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, শীলের হাট ঘাটে সেতু নির্মাণে এলাকাবাসীর প্রাণের দাবী। এলাকাবাসীর যৌক্তিক দাবী ও প্রয়োজনীয়তার প্রেক্ষিতে এ এলাকায় সেতু নির্মাণের জন্য ইতিপূর্বে নানা প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। আশা করি, শীঘ্রই এখানে সেতু নির্মাণ করা হবে।’

ছবি : রোসাংগিরী শীলেরহাট ঘাট দিয়ে এভাবে প্রতিনিয়ত টানা নৌকায় পারাপার হন পাঁচগ্রামের বাসিন্দারা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.