পল্লী বিদ্যুতের অব্যবস্থাপনায় অতিষ্ট এলাকাবাসী

0

বাঁশখালী প্রতিনিধি::দুর্বিষহ গরমে বাঁশখালীতে লোডশেডিং এমন প্রকট আকার ধারণ করেছে যে এলাকাবাসীরা অতিষ্ট। প্রতিদিন কোন না কোন সমস্যা দেখিয়ে বাঁশখালীর বেশীর ভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১। কিন্তু এ সমস্যা যেন কাটছেই না। নেই কোন উদ্যোগ।এই গরমে প্রতিদিন ৫-৭ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। একটু বাতাস বা বৃষ্টি হলেই ঘন্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। উপজেলা বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করা হলে এর কারণ হিসেবে জানানো হয় গাছ পড়ে লাইন ছিড়ে গেছে।

অথচ শুকনো মৌসুমে বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা সৃষ্টি করে এমন গাছ কাটা হয়না বললেই চলে। গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন বা বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেলে দিনের পর দিন ভুক্তভোগী এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ থাকে। ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা টাকা উঠিয়ে দিলেই পল্লী বিদ্যুতের লোকজন কাজে নামে। না হলে তাদের দেখা মেলা দুষ্কর। গাছ পড়ে বিদ্যুতের লাইন বা বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে গেলে কোন কোন সময় ৩-৪ দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ ছিলনা বলে খবর রয়েছে।বাঁশখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ১ এর বাঁশখালী জোনাল অফিসের ডিজিএম মোঃ মাহবুব রশীদকে লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কারণ এবং গত পবিত্র শবে বরাতের রাতে বিদ্যুৎ কেন ছিলনা ফোনে জিজ্ঞেস করলে, বিদ্যুৎ লাইন অগোছালো এবং ৩৩ হাজার ভোল্ট লাইনে সমস্যা হয়েছে বলে লাইন কেটে দেন। এর আগে বাঁশখালীতে এইসএসসি পরীক্ষা এবং ইউপি নির্বাচনের মত গুরুত্বপূর্ণ সময়েও ৪ দিন বিদ্যুৎ ছিলনা। ।

প্রতিদিনই বিদ্যুৎতের লুকোচুরি খেলায় জনজীবন অতিষ্ট। সভ্যতার চরম উৎকর্ষতায়ও বিদ্যুৎতের চরম হেয়ালীপনা থেকে রেহায় পায়নি বাঁশখালীবাসী। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা। গ্রীষ্মের তীব্রতাপদাহে বিদ্যুৎতের এহেন লুকোচুরি খেলায় মারাত্মকভাবে অস্বস্তিতে আছেন | রাতের বেশিরভাগ বিদ্যুৎ না থাকে বলেই চলে। ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ১০-১৫ বার এমনকি তারও বেশি বিদ্যুৎতের লুকোচুরি হয়। সামান্য বৃষ্টিপাতে, হালকা বাতাসেও বিদ্যুৎ চলে যায় দীর্ঘ বিরতীতে।একদিকে তীব্র তাপ, অন্যদিকে বিদ্যুৎতের ঘনঘন আসা যাওয়া মুসল্লিদেরকে অসহনীয়ভাবে দূর্ভোগে ফেলে। বাঁশখালীর প্রায় সবকটি ইউনিয়ন থেকে অভিযোগ আসে বিশেষ করে পুকুরিয়া, বাণিগ্রাম, কালীপুর, কাথারিয়া, বৈলছড়ি, সরল, শিলকুপ, চাম্বল, শেখেরখীল, পুইছড়ি, ছনুয়া সহ প্রায় সব অঞ্চলে রাতের দীর্ঘ সময় ধরে বিদ্যুৎ ছিলোনা।এদিকে মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং এর ফলে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বাঁশখালী পল্লীবিদ্যুৎতের উপর। এহেন অবস্থায় আমরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি।

“উল্লেখ্য যে, দিনের অধিকাংশ সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকলেও মিটার ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি নির্ধারিত মূল্যে। ভূক্তভোগীর অনেকে অভিযোগ করেন যে, দিনের এক-তৃতীয়াংশ সময় বিদ্যুৎ ব্যবহার না করলেও প্রতিমাসেই অতিরিক্ত বিল দিতে হচ্ছে। এছাড়াও, সংযোগ পরীক্ষা করার নামে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি গ্রাহকদের সাথে নগ্ন প্রতারনা চালিয়ে যাচ্ছে এমনকি নাম্বার উঠেনা এমন মিটার দিয়ে আইডিয়ামাত্র বিল বসায় বলেও জানান চেচুরিয়ার ওসমান। বিশেষ করে, স্বাভাবিক ও জরুরী চলাফেরা, অফিস-আদালতের কাজ, পড়াশুনা, গৃহস্থালী কাজ, ব্যবসা-বানিজ্যসহ সকল মানবিক কাজকে অসম্ভব করে দিচ্ছে লোডশেডিং এর অন্ধকার। বিদ্যুৎ নির্ভর বাসস্থানগুলোর আলো-বাতাস-পানি বন্ধ থাকার মত অনাকাংখিত ঘটনায় অতিষ্ট হয়ে পড়ছেন বিদ্যুতের গ্রাহক ও ভুক্তভোগীরা।

বাঁশখালী উপজেলা সদর তথা পানীয়জলের সংকট উপকূলীয় এলাকায় প্রায়ই দেখা যায়, বাসা-বাড়ি, খাবারের দোকানের লোকজন পানি সংগ্রহ করতে বালতি, কলসী, হাড়ি-পাতিল নিয়ে ছুটাছুটি করছেন। লোডশেডিং-এ গা সওয়া মানুষেরা নিজ দায়িত্বে মেনে নিয়েছেন এই নির্লজ্জ ও অনাহুত অবস্থাকে। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে অনেকে এক কাঠি এগিয়ে আছে। ঘরেঘরে, সোলার সিষ্টেম, আইপিএস, জেনারেটর, চার্জার লাইট-ফ্যান, মোমবাতি, কেরোসিন নিয়ে প্রস্তুত থাকেন সচ্ছ্বল পরিবার গুলো।
বিদ্যুৎ যেমন কখনও স্থির থাকেনা তেমনি মানুষও থেমে থাকে না, বিদ্যুৎ আসলে যায় না, মাঝে মাঝে আসে। আগেও শিখেছিলাম, এখন নাটক-সিনেমার সৌজন্যে টিভিতে পণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারিত হয়। আমরা মেনে নিয়েছি তাই, লোডশেডিং অনবরত চলছে। দিনেরাতে সমানতালে লোডশেডিং স্কুল মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ও বাড়িতে আমাদের সন্তানদের পড়াশুনার ক্ষতি করছে।এতসব অসঙ্গতি ও নির্বিচার বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতা ও দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক অবস্থায় এটা স্পষ্ট যে, এই দেশে কোনদিনই বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান হবে না। উপজেলার মানুষ কি বিদ্যুৎ-এর অনবরত লোডশেডিং এর কবল থেকে রেহাই পাবেনা?
এই দিকে ভয়াবহ এই লোডশেডিং এর প্রতিবাদে ১৫ মে (সোমবার) সকালে বাঁশখালী উপজেলা পরিষদে একটি মানববন্ধন অনুষ্টিত ঠিক সময়ে শুকনো মৌসুমে বিদ্যুৎ লাইনে সমস্যা সৃষ্টি করে এমন গাছ না কাটা, দালাল দ্বারা অফিস পরিচালিত হওয়া, লাইন ছিড়ে গেলে ঠিক সময়ে ঠিক না করা এবং অবৈধ যোগসাজশে অন্যান্য এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে বরফের মিলের সাথে বিদ্যুৎ সংযোগ চালু রাখার মত সমস্যা তুলে ধরা হবে বলে জানা যায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.