সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য বাজেটের গণতন্ত্রায়ন জরুরি

0

নিজস্ব প্রতিবেদক::উন্নয়ন অগ্রাধিকার চিহ্নিত করার জন্য জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায় থেকে পরিকল্পনা ও বাজেট তৈরীর কাজ শুরু করা দরকার। বিশেষতঃ অনুন্নত অঞ্চলের প্রতি বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে আঞ্চলিক বৈষম্য দুর করতে সরকারকে আরো কিছু উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে। সেইসাথে বাজেট ডকুমেন্টকে সাধারণ মানুষের বোধগম্য করে উপস্থাপন করার প্রয়োজন রয়েছে।

জাতীয় সংসদে বাজেট আলোচনার সময়সীমা আরো বাড়ানো উচিত যাতে সংসদ সদস্যগণ দীর্ঘ সময় নিয়ে সংসদে বাজেট আলোচনায় অংশ নিতে পারেন এবং স্বাধীনভাবে পক্ষে কিংবা বিপক্ষে মতামত দিতে পারেন সেজন্য ‘কার্যপ্রণালী বিধি’তে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনা যেতে পারে। বাজেটে জনমতামতের কার্যকরী প্রতিফলন ঘটাতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি ও ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কমর্কা-ে জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট একটি অত্যাবশ্যকীয় নীতি নির্ধারণী বিষয় যেখানে দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষ এবং তাদের নির্বাচিত আইনপ্রণেতা ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ অতি প্রয়োজনীয়।

গত কয়েক বছর ধরে জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়ার নীতিগত সমস্যা এবং বাজেটে জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে জাতীয় সংসদে কথা বলে যাচ্ছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ বা পিপিপি’র নামে রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পকারখানার বেসরকারিকরণ কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

পিপিপি’র আওতায় নতুন প্রকল্পে তহবিল যোগানের নামে জনগণের ঘাড়ে প্রকল্প খরচের দায় চাপানো যাবে না। নগর দরিদ্রদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা বলয় তৈরি করা প্রয়োজন। প্রতিবন্ধী, উপকূল-চর-হাওর অঞ্চলের জনগোষ্ঠীসহ অন্যান্য সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জাতীয় বাজেটে বিশেষ কর্মসূচী থাকা দরকার। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সামাজিক নিরাপত্তা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন খাতে বাজেট বাড়ানো দরকার। কর্ণফুলীকে রক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। কর্ণফুলীর দূষণ ও দখল রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ ও বরাদ্ধ রাখতে হবে। কারণ কর্ণফুলী বাঁচলে বন্দর বাঁচবে এবং বন্দর বাঁচলে দেশ বাঁচবে।

বিশ্বের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদীকে রক্ষার জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহন করতে হবে। জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস ও গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন-এর ধারাবাহিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাজেট শুনানী ২০১৭-১৮ অনুষ্ঠানে বক্তাগণ উপরোক্ত মতামত প্রদান করেন। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি এবং আইইবি-চট্টগ্রামের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত বাজেট শুনানীতে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহন করেন জাতীয় পরিকল্পনা ও বাজেট সম্পর্কিত সংসদীয় ককাস’র সহসভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি, বেসরকারি বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব মো: নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, সাবিহা নাহার বেগম এমপি, ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।

বাজেট শুনানীর শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এবং দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের সহযোগি সম্পাদক এম. নাসিরুল হক। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন কেন্দ্রীয় পরিষদের গবেষণা সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা’র সঞ্চালনায় উক্ত অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও ইপসা’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন দাবী ও বাজেট প্রস্তাবনা নিয়ে আলোচনা করেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর আবিদা আযাদ, রাঙ্গুনীয়া উপজেলা পরিষেদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট রেহেনা আকতার, জাতীয় শ্রমিক পার্টির সাবেক সভাপতি শ্রমিক নেতা এম, এ, সাত্তার, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কার্যকরী সভাপতি আহমদ কবির, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নুরজাহান খান, ইউনেস্কু ক্লাবের আহসান ফারুক, চিটাগং রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ’র নোমান উল্লাহ বাহার, অপরাজেয় বাংলাদেশ’র মাহাবুব-উল-আলম, স্বপ্নীল ব্রাইট ফাউন্ডেশনের মোহাম্মদ আলী সিকদার, বিটা’র বাপ্পা চৌধুরী, ব্র্যাক’র ডিবিআর নজুরুল ইসলাম মজুমদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রতিবন্ধী উন্নয়ন কর্মী আহসান উল্লাহ সরকার, পোষাক শ্রমিক ইয়াছমিন আকতার, মটর শ্রমিক রবিউল ইসলাম প্রমূখ।

আগামী জুন মাসে ২০১৭-১৮ সালের জাতীয় বাজেট অধিবেশন শুরু হচ্ছে তারই প্রস্তুতি হিসেবে জাতীয় ককাসের সদস্যরা গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন-চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সহযোগিতায় স্থানীয় অঞ্চলের মানুষের সাথে বাজেট বিষয়ক শুনানী অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।
ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নসহ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষ বরাদ্ধ রাখা প্রয়োজন। তিনি চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য ককাসের পক্ষ থেকে সংসদে কথা বলবেন বলে আশ্বাস প্রদান করেন। তিনি আরও বলেন, দেশের সুষম ও সমন্বিত উন্নয়নের জন্য বাজেটকে জনকেন্দ্রীক ও জনবান্ধব করার জন্য সরকার ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন করেছে এবং বাজেটের গনতন্ত্রায়নের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
মোহাং নজরুল ইসলাম চৌধুরী এমপি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়নের জন্য আমাদেরকে আরও বেশী সচেষ্ট হতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর রক্ষার জন্য কর্ণফুলীকে বাঁচাতে হবে। কর্নফুলীর দূষণ ও দখল রোধে আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। উক্ত বাজেট শুনানীতে গণমাধ্যম কর্মী, উন্নয়ন কর্মী, শিক্ষাবিদ, তৃণমূল প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিনিধি অংশগ্রহন করেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.