দুই সন্তানের জননীর আগুনে পোড়া লাশ ময়না তদন্তে
বাঁশখালী প্রতিনিধি : বাঁশখালীর চাম্বলে আগুনে পুঁড়ে দুই সন্তানের জননী রুবি দেবী (৩৪) নামে এক গৃহবধুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বুধবার ভোর রাতে সংঘটিত হওয়া ঘটনার প্রকৃত তথ্য এখনো পর্যন্ত উদ্ঘাটন করতে পারেনি থানা পুলিশ, পিবিআইসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের ব্যবস্থা করেছে পুলিশ। স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রমতে, চাম্বল ইউনিয়নের হিন্দু পাড়ার হিরু রায় চৌধুরীর স্ত্রী রুবি দেবী প্রতিদিনের মত রাতে তার ছেলে হিমেল রায় চৌধুরীকে নিয়ে ঘুমাতে যায়। তার কন্যা দ্বীপনিতা চৌধুরী তার বড় জার সাথে ছিল।
সকালে ঘুম থেকে উঠে পরিবারের লোকজন বাড়ীর সাথে লাগোয়া নলকূপের পাশে আগুনে জ্বলছে মারা যাওয়া এক মহিলার লাশ দেখে সবাই শোর চিৎকারে মেতে উঠে। পরবর্তীতে অনেকক্ষণ পর এটা তাদের পরিবারের হিরু রায় চৌধুরীর স্ত্রী রুবি দেবী বলে নিশ্চিত হয়। পরিবারের লোকজন জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ রুবি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। গত কয়দিন আগে সে গ্রামীন ব্যাংক থেকে স্থানীয় কয়েকজনকে লোনের টাকাও উত্তোলন করে দেয়। রুবি যে রুমে রাত যাপন করতেন সেই রুমের পালংয়ের পাশে রক্তের চোপ রয়েছে।
তাছাড়া বাড়ীর দক্ষিণ পাশ সংলগ্ন নলকূপের পাশে মুখমন্ডলসহ অর্ধাংশ পুঁড়ে যাওয়া রুবি দেবীর লাশ পরিবারের লোকজনও চিনতে পারেনি। একেক জনের অনুভূতি একেক ধরনের হলেও নিহত রুবি দেবীর পরিবার আনোয়ারা সিংহরা গ্রামের রমনী মোহন নাথের কন্যা রুবি দেবী ২০০৩ সালে চাম্বলের হিরু রায় চৌধুরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের সংসারে দ্বীপনিতা চৌধুরী চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী এবং হিমেল রায় চৌধুরী চাম্বল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র।
রুবির ভাই বাবুল নাথ বলেন, সে নিজে আত্মহত্যা করতে পারে। তাছাড়া রুবি মৃত্যুর খবর পেয়ে তার স্বামী হিরু রায় চৌধুরী সকালে চন্দনাইশ তার কর্মস্থল কাঞ্চনাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে নিজ বাড়ীতে আসেন। সে ও রুবি মানসিক ভাবে দুর্বল এবং বেশ কিছু ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছে বলে সংবাদকর্মীদের জানান এবং এ সময় বেশ কিছু চিকিৎসা কাগজপত্র সংবাদকর্মীদের দেখান।
তিনি বলেন, চলতি মাসের ২০ তারিখও ডাক্তার দেখানোর কথা ছিল। আমি আসতে না পারায় তা দেখা সম্ভব হয়নি। এদিকে আগুনে পুঁড়ে রুবির মৃত্যু হওয়ায় এখানে অন্য কোন রহস্য আছে কিনা তা তদন্তে চট্টগ্রাম দক্ষিণের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একেএম এমরান ভুঁইয়া, সহকারী পুলিশ সুপার (আনোয়ারা সার্কেল) মফিজ উদ্দিন, বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন ও পিবিআই ইন্সপেক্টর মোহন লালসহ পুলিশের বিশেষ টিম সকাল থেকে লাশ নিয়ে আসা পর্যন্ত ঘটনাস্থলে ছিলেন।
তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে সে ব্যাপারে সুষ্পষ্ট কোন তথ্য কেউ দিতে পারেনি। স্বামী এবং কন্যার পরিবারের পক্ষ থেকে লাশ পোষ্ট মর্টেম ছাড়া দাফন করার অনেক চেষ্টা করলেও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজি হয়নি। তবে পুলিশের বক্তব্যমতে, বাড়ীর ভিতরে যেখানে রুবি থাকতেন সেখানে রক্তের স্তুপ এবং বাড়ী সংলগ্ন নলকূপের পাশে আগুনে জ্বলসে যাওয়া লাশ কিভাবে সম্ভব তা তদন্ত সাপেক্ষে বের করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। এ ব্যাপারে চাম্বল ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মুজিবুল হক চৌধুরীও ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করেন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে বাঁশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনাটি বিশেষ ভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। লাশ উদ্ধার সাপেক্ষে পোষ্ট মর্টেমের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।