কক্সবাজার পাসপোর্ট অফিস দূর্নীতির আখড়া

0

জামাল জাহেদ, কক্সবাজারঃ  কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে হয়রানী ও দূর্নীতি থেমে নেই। প্রতিনিয়তই আবেদন জমা করতে এসে ভোগান্তি পোহাতে হয় সাধারণ মানুষকে। ব্যাংকে নির্দষ্ট পরিমাণ টাকা ও আবেদনের সাথে প্রয়োজণীয় কাগজপত্র জমা দেয়ার পরও অতিরিক্ত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার দিতে হয় কর্তাবাবুদের। নয়লে আবেদনকারীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এনিয়ে প্রায় সময় বিক্ষোভ প্রদর্শনও করে ভুক্তভোগীরা।

এমন একটি ঘটনা ২২ জুলাই বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ভবনের পেছনে স্থাপিত কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে ঘটেছে। এসময় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে আবেদন ফরম জমা দিতে আসা সাধারণ মানুষ। পরে সংবাদকর্মীরা গিয়ে বিষয়টি সুরাহা করেন।এ সময় চকরিয়ার হারবাং থেকে আবেদন ফরম জমা করতে আসা রমিজ আহমদ জানান, আমি সকাল থেকে দাঁড়িয়ে আছি।

কোন কারণ ছাড়াই ফরম জমা নিচ্ছেনা। বেলা দুই টার পর জমা নেয়া হবেনা বলে আমাদের চলে যেতে বলে।একই অভিযোগ মহেশখালীর মাতারবাড়ী থেকে আসা মুহাম্মদ ওয়াহেদ নামের আরেক ব্যক্তির। তিনি বলেন, কোন কারণ ছাড়াই ফরম জমা না নিয়ে আমাদেরকে আগামীকাল আসতে বলে।অভিযোগ, কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁও’র মাইজপাড়া থেকে আসা শাহ আলম, রামুর খুনিয়াপালং এর মোস্তাক আহমদ, পেকুয়ার রেজাউল আজিম ও ঈদগাঁও’র জাহাঙ্গির আলমসহ অন্তত অর্ধশত ভুক্তভোগীর।

তারা কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক শওকত কামাল ও উচ্চমান সহকারী আবু হানিফ মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ তুলেন।তবে উপ-সহকারী পরিচালক শওকত কামাল বলেন, যথা সময়ে কোন আবেদনকারী ফরম জমা দিতে আসেনি। সময়ের পর আসায় পরের দিন আসতে বলা হয়েছে।এ দিকে অভিযোগ ওঠেছে, এসব কাজে জড়িত রয়েছে অফিসে কর্মরত কয়েকজন ব্যক্তি। তাদের সাথে যোগাযোগ চিহ্নিত দালালদের। দুই পক্ষ মিলে পাসপোর্ট অফিসকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।ভোগান্তির শিকার লোকজন জানায়, দালালদের মাধ্যমে উচ্চমান সহকারী আবু হানিফ মোস্তফা কামাল এ টাকা আদায় করেন। তাও আবার বিনা রশিদে। দৈনিক বৈধ ও অবৈধ নতুন সাধারণ বা জরুরী অথবা হালনাগাদ করার পাসপোর্ট ফরম জমা পড়ে শতাধিক।

এ হিসেবে সরকারী ছুটির দিন বাদে প্রতি মাসে ২০ কর্ম দিবসে অন্তত ৪০ লাখ টাকা অবৈধ উপায়ে আদায় করা হয় কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেনের ঘটনা নতুন নয়। ২০০৯ সালের জুন মাসে যাত্রা করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের অধীনে এ দপ্তরের দুর্নীতি চলে আসছে ধারাবাহিক ভাবে। কক্সবাজার অঞ্চলের অধিবাসীদের ওই সময় হাতে লেখা পাসপোর্ট প্রদান এর মাধ্যমে কার্য্ক্রম অব্যাহত রাখে। পরবর্তীতে “মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট ও ভিসা প্রকল্প’’ এর আওতাভুক্ত হয় ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট চালু করা হয়।

এর পর থেকে কক্সবাজার অঞ্চলের অধিবাসীদের পাসপোর্ট সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।সাধারণ মানুষের অভিযোগ, পাসপোর্ট অফিসকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে অর্ধশত দালাল চক্র। অবৈধ আয়ের জন্য অফিসের কর্মকতা ও কর্মচারীরাই দালাল সৃষ্টি করেছে। এছাড়া কিছু আনসার ও কয়েকজন নিম্নপদস্থ কর্মচারীও সরাসরি দালালিতে জড়িত রয়েছে এখানে।কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-সহকারী পরিচালক শওকত কামাল ও উচ্চমান সহকারী আবু হানিফ মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্টর আবেদন ফরম গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে।

মোটা অংকের টাকা নিয়েই চুক্তি ভিত্তিক ভুয়া আইডি কার্ড, জন্ম নিবন্ধন সনদ ও চেয়ারম্যান সনদ সম্বলিত আবেদন ফরম জমা করতে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করার একাধিক তথ্য প্রমাণ সহ অভিযোগ পাওয়া গেছে।বৈধ হোক আর অবৈধ হোক ফরম জমা করতে গেলেই ১৫শ থেকে দুই হাজার টাকা বিনা রশিদে জমা দিতে হচ্ছে সেখানে। কথিত চ্যালেন ফি (দালালদের উদ্ভাবিত সাংকেতিক নাম) হিসেবে ধরা হয়। আসলে সরকারীভাবে এর কোন অস্থিত্ব নেই বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হওয়া গেছে।কয়েকজন ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন, আমরা সরকারকে নির্ধারিত ফি ব্যাংকে জমা দিয়ে পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে যাই।

কিন্তু বিনা রশিদে দেড় হাজার টাকা জিম্মি করেই আদায় করা হয়।চ্যানেল ফি’র নামে দেড় হাজার টাকা না দিলেই ফরমে বিভিন্ন খোত বের করা হয়। ভুল ধরা হয় একাধিক তথ্যে। টাকা দিলেই সব ভুল মাপ। এটা কোন ধরনের সরকারী নিয়ম।এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, পাসপোর্ট করতে গিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি মেনে নেয়া যায়না। যারাই অপরাধের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.