ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি `শিফা গার্ডেন’

0

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার::ঘূর্ণিঝড় মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ শিফা গার্ডেন মালিক হাবিব উল্লাহ এখনো পুরোপুরি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ‘মোরা’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবেশ রক্ষায় অন্যতম উদ্যোগ ‘শিফা গার্ডেন’ মালিক সরকারী সহায়তা চায়। মোরা’য় সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়ার শামলাপুর এলাকায় স্ব উদ্যোগে গড়া পরিবেশ বান্ধব এই বাগানটি। ঝড়ের আঘাতে উপড়ে গেছে বাগানের অসংখ্য ফলদ ও বনজ বৃক্ষ। উপড়ে গেছে ঔষধী বৃক্ষও। এছাড়াও আম, কাঁঠাল, লিচু, লেবু, পেয়ারা সহ বাগানের প্রায় সব ফল-ই ঝরে পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে করে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা হাবিব উল্লাহ হাবিব।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পরিবেশ বান্ধব ও এক সময়ের সবুজে ঘেরা শিফা গার্ডেনটি এখন বিধ্বস্ত এলাকা। বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে পড়ে রয়েছে উপড়ে পড়া ও ভেঙ্গে যাওয়া ফলদ-বনজ বৃক্ষ। কক্সবাজার-টেকনাফের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয় এ বাগান।
বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোক্তা হাবিব উল্লাহ জানান, প্রতি বছর তিনি ৯/১০ লাখ টাকার ফল ফলাদি বিক্রি করতেন। যা দিয়ে বাগান শ্রমিকদের মজুরী ও বাগান পরিচর্যায় ব্যয় করতেন। চলতি বছর বিভিন্ন ফল পরিপূর্ণতা পাওয়ার আগেই কবলে পড়ে ঘূর্ণিঝড়ের। এতে করে কোন ফলও বিক্রি করতে পারেননি তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাগান থেকে ফলন তোলার আগ মুহুর্তে মোরা’র আঘাতে স্বপ্ন ভেঙ্গে যায় তার। মোরা’র আঘাতে ৬ হাজারের অধিক গাছের ক্ষতি হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ফলদ বৃক্ষ। বাকি সব বৃক্ষ মূল সহ উপড়ে গেছে। এছাড়া যেসব বৃক্ষ বাগানে অবশিষ্ট আছে সেগুলো অর্ধবিধ্বস্থ।
বাগান মালিক বলেন, এমনিতেই এবছর কোন ফল বিক্রি করতে পারবনা। তার উপর আবার পরিচর্যার কাজ করতে হচ্ছে দ্বিগুণ। এসব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার শ্রমিক মজুরী দিকে হবে। ক্ষতিপুষিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে উদ্বিগ্ন তিনি।
বাগান শুরু থেকে নিয়মিত কাজ করে আসছে মংছেন চাকমা (২৫)। তিনি বলেন, এরকম ঝড় বাতাস জীবনেও দেখেনি। এছাড়া এবছর যা ক্ষতি হয়েছে-অতীতে কোন সময় এরকম হয়নি।
বাগান কর্মচারী এবাদুল্লাহ (২৬) বলেন, ফলমূল বিক্রি করেই আমাদের বেতন দিতেন বাগান মালিক। কিন্তু এবছর সব শেষ হয়ে গেছে।
বাগানে দৈনিক ৭/৮ জন কর্মচারী ছাড়াও মাসিক বেতনধারী ২০ জন শ্রমিক কাজ করছে। শ্রমিকের বেতন, বাগানের পরিচর্যায় ব্যয়কৃত টাকা একটা অংশ আসতো ফল বিক্রি থেকে। কিন্তু এবছর ব্যাপক লোকসান গুনতে হবে বাগান মালিকের।
বাগানের মালিক তরুণ উদ্যোগ হাবিব উল্লাহ হাবিব বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষে শিফা গার্ডেন করে বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য সৃষ্টি করেছিলাম। নিজের ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে অর্জিত টাকা এ বাগানে ব্যয় করেছিলাম। ঘূর্ণিঁঝড়ের আঘাত আজ আমি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। একদিকে ঋণ পরিশোধ, অন্যদিকে বাগান কর্মচারীদের বেতন আদায়। সব মিলিয়ে চরম বেকাদায় পড়েছি এবছর। কারণ আগামী ফল ফলনের জন্য অর্থাৎ ৬ হাজার বৃক্ষে ফলন ফলানোর জন্য কমপক্ষে ১৫ হাজার চারা রোপণ করতে হবে। এতে ব্যাপক অর্থ ব্যয়ের প্রয়োজন।
উদ্যোক্তা হাবিব বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু পরিবর্তনে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবুজ বনায়ন সৃষ্টির ব্যাপারে ব্যাপক নির্দেশনা দিয়েছেন। শিফা গার্ডেন জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়ন ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পালনের একটি বিরল দৃষ্টান্ত। এ মুহুর্তে সরকারিভাবে সহায়তা দিলে আমি বাগানকে পূর্বের অবস্থায় ফিরে নিতে পারবো। তিনি সরকারের সহায়তা কামনা করেন।
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ সূত্র জানায়, পরিবেশ ও বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য রক্ষায় সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে পরিবেশ তথা বৃক্ষ রোপন ও সামাজিক বনায়নের জন্য জনগণকে ব্যাপক উৎসাহ প্রদান করেছে। পাশাপাশি দিয়েছে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধাও। যেসব বন তথা বাগান পরিবেশ রক্ষায় ব্যাপক ভূমিকা পালন করছে সেগুলো প্রতি সরকারের সুনজর রয়েছে। আর ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত আছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.