পার্বত্য চুক্তি নিয়ে সংশয়ে সন্তু লারমা

0

সাইফুল উদ্দীন, রাঙামাটি প্রতিনিধি::সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে না পারলে পার্বত্য চুক্তি আর বাস্তবায়ন হবে না বলে সংশয় প্রকাশ করেছেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা(সন্তু লারমা)। তিনি বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারের দীর্ঘসূত্রিতা পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টি করছে। রোববার সকালে রাঙামাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক ও নারী হেডম্যান-কার্বারি নেটওয়ার্ক’র আয়োজনে দুই দিনব্যাপি সম্মেলনে উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্ক’র সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। সম্মেলনের উদ্বোধক ছিলেন চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। বিশেষ অতিথি ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনি চাকমা, ইউএনডিপির জেন্ডার এন্ড লোকাল কনফিডেন্স বিল্ডিং ক্লাস্টার’র টিম লিডার ঝুমা দেওয়ান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, পুরুষের তুলনায় নারীরা এখনো সমাজে অনেক দূরে অবস্থান করছে। নারীদেরকে সামনে দিকে এগিয়ে নিতে হলে সকল পুরুষের প্রয়োজন নারীকে সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করা। গ্রামে ও মোজায় পুরুষের তুলনায় নারীও বিচার ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের সুযোগ করে দিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

উদ্বোধক’র বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, জনপ্রতিনিধিরা যে কোন একটি নিদিষ্ট সময়ের জন্য নির্বাচিত হন আর অন্য দিকে একজন গ্রামের হেডম্যান বা কার্বারীরা মৃত্যুার আগে পর্যন্ত এই দায়িত্ব পালন করতে পারেন। যদি না তাদের নামে কোন অভিযোগ না থাকে। তাই এই হেডম্যান-কার্বারীদের গ্রামের লোকের সুযোগ-সুবিধা সম্পর্কে জানান সুযোগ রয়েছে। এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামের মানুষের সার্বিক সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু হেডম্যানের অদক্ষতার কারনে ভুমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে, সেই জন্য সকল ক্ষেত্রে দক্ষতা সর্ম্পূণ এবং সঠিক নেতৃত্ব রাখার আহ্বান জানান তিনি। আগামী বছর খাদ্য সংকটে পড়ার আশংঙ্খা প্রকাশ করে তিনি বলেন, কাপ্তাই হ্রদের পানি কমে যাচ্ছে, এছাড়া জমির বিভিন্ন সমস্য থাকার কারণে আগামী বছরে সাজেকের মত পার্বত্য অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। সেজন্য এখন থেকে প্রস্তুত থাকার জন্য তিনি সরকারকে আহ্বান জানান।

লংগদু প্রসঙ্গে চাকমা সার্কেল চিফ উভয় বিষয়কে নিন্দা জানিয়ে বলেন, নয়ন হত্যা এবং পাহাড়িদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানো উভয় কর্মকান্ডকে আমরা নিন্দা জানাই। তিনি আরো বলেন, বিগত সময় এবং বর্তমানে আমরা লক্ষ্য করলে দেখতে পাই বাঙ্গালীরা পাহাড়িদের গ্রামে আগুন লাগিয়েছে, কিন্তু পাহাড়িরা বাঙ্গালীদের গ্রামে আগুন লাগিয়েছে এমন নজির নেই। লংগদু প্রশাসন অদক্ষতা এবং পক্ষপাতি অবস্থায় ছিলো বলে উগ্র-বাঙ্গালীরা এমন কাজ করতে পেরেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বরকল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মনি চাকমা বলেন, পাহাড়ি জনগোষ্টিরা প্রতিনিয়ত নির্যাতিত হয়ে আসছে। এখন আর ঘরে বসে থাকলে হবে না, নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইউএনডিপির জেন্ডার এন্ড লোকাল কনফিডেন্স বিল্ডিং ক্লাস্টার’র টিম লিডার ঝুমা দেওয়ান বলেন, বিগত সময় থেকে গ্রাম ও মোজার হেডম্যান ও কার্বারী ছিলো পুরুষ কিন্তু বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীদের অংশগ্রহনের সুযোগ প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

ইউএনডিপি গ্রামে নারীদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করণে কাজ করবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, আগামীতে আমরা গ্রামের নারীদের নিয়ে কাজ করবো। তাদের দক্ষতা ও ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করলে কাজ করার প্রদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে ইতিমধ্যে। নারী সমাজের একটি বিশেষ অংশ। এই নারীকে বাদ দিয়ে সমাজ উন্নত করা সম্ভব না। তাই আমরা সকলের মিলে নারীকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে হবে। গ্রামের বিভিন্ন বিচার ও সামাজিক অনুষ্টানে তাদের অংশগ্রহন নিশ্চিত করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আগামীকাল সোমবার সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.